Site icon আলাপী মন

গল্প- দাদুর জন্মদিন

দাদুর জন্মদিন
– জয়তী মিত্র

 

 

আজ রমেন বাবুর একশত বছর পূর্ণ হল। সেই আনন্দে ওনার নাতি, নাতনি, ছেলে, বৌমারা একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বেশ কদিন আগে রমেন বাবুর বড়ো ছেলে বিকাশের একমাত্র ছেলে সৌরভ তার বাবাকে বলে, সবার জন্মদিন হয় এইবার আমরা সবাই মিলে যদি দাদুর জন্মদিন পালন করি তাহলে কেমন হবে বাবা? দাদু সেঞ্চুরি করলো, আর সেলিব্রেশন হবে না সেটা কি করে হয়? কথাটা শোনা মাত্র সৌরভের বাবা বললেন, “খুব ভালো হবে তাহলে, সবাইকে বলি কথাটা।” যা ভাবা,তাই কাজ। বাড়ির সবাইকে ডেকে বিকাশ বাবু বললেন,”সৌরভের খুব ইচ্ছা দাদুর একশত বছরের জন্মদিন পালন করবে।” সবাই শুনে খুব খুশি হয়ে তাতে সম্মতি জানালো। সৌরভের বাকি খুড়তুতো ভাই বোনেরা রাজী হয়ে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু করে দিল।

রমেন বাবুর তিন ছেলে, বিকাশ, প্রকাশ আর সুভাষ। বিকাশের এক ছেলে-সৌরভ। প্রকাশের এক মেয়ে তিন্নি আর সুভাষের দুই ছেলে রনি আর রানা। রমেন বাবুর স্ত্রী দুই বছর আগে গত হয়েছেন। নাতি, নাতনিরা সকলেই বিবাহিত আর নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। রমেন বাবুর একান্নবর্তী পরিবার। আজকের দিনে যখন সব জায়গায় নিউক্লিয়ার পরিবার সেখানে মাথা উঁচু করে আজও দাড়িয়ে আছে সৌরভদের একান্নবর্তী পরিবার। সেখানে যতো না ঠোকাঠুকি তার থেকে মিল বেশি। রমেন বাবু আর ওনার স্ত্রী খুব যত্ন করে এই সংসার তৈরি করেছেন। রমেন বাবুর তিন বৌমা, আর তিন ছেলের মধ্যে খুব মিল। তাই বলে কখনো যে মতের অমিল হয় না সেটা নয়। সেইরকম সমস্যা হলে রমেন বাবু সকলকে ডেকে সেইখানেই সমস্যার সমাধান করতেন। বড়দের মধ্যে এত সুন্দর মিল ছিল বলে সৌরভদের ভাইবোনদের মধ্যে একটা সুন্দর সম্পর্ক ছিল।

সকালে উঠেই নাতি-নাতনিরা সবাই মিলে দাদুকে সাজাতে বসলো। রমেন বাবুর তিন বৌমা মিলে সুন্দর পাঞ্জাবি, নতুন কাঁসার থালা কিনে এনেছে। নতুন পাঞ্জাবি পড়িয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে একবাটি নলেন গুড়ের পায়েস দেওয়া হলো খেতে। নাতনি এসে দাদুর মুখে পায়েস তুলে দিল। রমেন বাবুর দু’চোখ বেয়ে আনন্দের অশ্রু ঝরতে লাগলো। তিনি বললেন,”আমি যে এখনও সুস্থ ভাবে বেঁচে রয়েছি এইটাই ভগবানের আশীর্বাদ।” পায়েস খেয়ে দাদুর কি আনন্দ। মুহুর্মুহু ছবি উঠলো। কয়েক জন পাড়া প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। খাবারের মেনু নাতি নাতনিরাই ঠিক করেছিল । দাদুকে পঞ্চ ব্যঞ্জন দিয়ে সাজিয়ে কাঁসার থালায় খেতে দেওয়া হলো। দাদু খুব খুশি। তারপর সকলের খাওয়া, দাওয়া শেষ হলে দাদুকে বিকালের দিকে মাঝখানে বসিয়ে, কেউ গান গাইলো, কেউ আবৃত্তি করলো।
তারপর নাতিদের আবদারে দাদুকে কিছু বলতে বলা হলো, দাদু দু’চোখ ভর্তি জল নিয়ে কাঁপা গলায় বলে উঠলেন, “মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে..” উনি এতটাই আপ্লুত যে আর কোনও কথা বলতে পারলেন না। রমেন বাবুর তিন ছেলেই বলে উঠলেন, “পরের জন্মে যেন তোমার ছেলে হয়েই আসতে পারি বাবা, এই আশির্বাদ করো।” তারপর রমেন বাবুর সাথে বাড়ির সবার ছবি তোলা হলো। ছোট কাকা সৌরভের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “তোর জন্যই এত সুন্দর একটা দিন বাবাকে আমরা উপহার দিতে পারলাম। এইভাবেই আমাদের একান্নবর্তী পরিবারটাকে আগলে রাখিস বাবা। সুখে থাক তোরা সব ভাইবোন এই আশীর্বাদ রইলো।” নিজের প্রশংসা শুনে সৌরভের মুখে তখন চওড়া হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে পড়লো।

Exit mobile version