সাপের বিষ
-সুজিত চট্টোপাধ্যায়
এক:–
সরু গলির লাইটপোস্টের নিচে, ক্যাজুয়াল প্রেম।
নিত্য সন্ধ্যায়, উঠতি যুবক যুবতীর মুচমুচে আলাপন। স্বপ্নের আঁতুড়ঘর। ভালোলাগা সময়কে আনাড়ি হাতে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখার প্রাণপণ প্রচেষ্টা। প্রেমের কানামাছি লুকোচুরি খেলা।
দুটি নব্য কচি হৃদয়ের লাজুক ইন্দ্রিয়বিলাসী
কাছাকাছি আসা।
হয়তো ভালোবাসা কিংবা ভালোলাগা। তারপর হারিয়ে যাওয়া, কোন সে অচিন পাখির দেশে। খবর রাখে না লাইটপোস্ট। শুধুই সাক্ষী থেকে যায়, নির্বিকার।
গলিটা মোটামুটি ফাঁকাই থাকে সন্ধ্যের পরে। লুকোনো প্রেমের আলতো ছোঁয়া শিহরণ, শরীর থেকে শরীরে। মন থেকে মনে, হয়তো প্রাণেও।
আবেগ ময় আলো আঁধারি নির্জনতায়, প্রেম এখানে স্বপ্ন মধুর, মায়াময়।
ক্লান্তিহীন হৃদয়ের ক্ষণিকের সময় যাপন।
মৃদু কথার ফিসফিস, মান-অভিমান, রাগ, সাময়িক বিচ্ছেদ।
আবার, দেখা যদি হলো সখা প্রাণের মাঝে আয়।
সব কথার, ঈঙ্গিতের, ভীরু স্পর্শের একমাত্র নির্বাক সাক্ষী, ঐ টিমটিমে আলো ছড়ানো সাঁঝবাতি লাইটপোস্ট।
লাইটপোস্টের নিচে চলে নিরন্তর আলো আঁধারের হাসিকান্না খেলা। একজোড়া কপোত-কপোতী যায়, আবারও আসে নতুন জোড়া। লাইটপোস্ট নির্বিকার সাক্ষী। সাক্ষী আরও একজন, কাদু পিসি।
লাইটপোস্টের ঠিক উল্টো দিকেই কাদু পিসির টালির চালাঘর। ছোট্ট একটি জানালা। সন্ধ্যের মুখে জানালার নড়বড়ে কপাট বন্ধ করে দেয় পিসি, মশার জ্বালায়।
কিন্তু, সেই ভাঙা নড়বড়ে কপাটের গায়ের এলোমেলো অজস্র ছ্যাঁদা, বাইরের প্রায় সবকিছুই ঘরের ভেতর থেকে দেখতে খুবই সাহায্য করে। পিসি সেই সুযোগ পুরো মাত্রায় উপভোগ করে শুধু নয়, কাজেও লাগায়।
কাদু পিসি। মাঝবয়েসী মহিলা। পেশায় আয়া। তবে ইদানীং আর সেই কাজে মন নেই। বড্ড ঝক্কি সামলাতে হয়। অন্য পথে সহজে আয়ের সন্ধান পেয়ে গেছে কাদু।
তারই ঘরের সামনে, লাইটপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে সাঁঝ বেলায় প্রেম সঙ্গোপনে আসা উঠতি যুবক যুবতীরাই ওর আয়ের বর্তমান উৎস।
সময় বুঝে গুটিগুটি পায়ে কাদু পিসি এসে দাঁড়ালো নব্য যুবা প্রেমিক প্রেমিকার সামনে। কপালে মৃদু ভাঁজ তুলে জিজ্ঞেস করলো, তোমরা এখানে কী করছো বাবা?
ছেলেটি একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললো- কিছুনা , মাসিমা, এমনিই গল্প করছি।
কাদু মুচকি হেসে বললো- মাসিমা নয় পিসি।
কাদু পিসি। এখানে সবাই আমাকে এই বলেই ডাকে। তারপরেই, নিজের টালির চালাঘর খানা দেখিয়ে বলে, এই ঘরখানা আমার। একলাই থাকি। এদিক ওদিক তাকিয়ে নিয়ে বললো,
চলো, আমার ঘরে চলো। তোমাদের আমার বেশ ভালো লেগেছে। এসো, ঘরে বসে দুটো কথা বলি তোমাদের সঙ্গে, এসো।
কিছু কিছু ডাক আছে, যা উপেক্ষা করার ইচ্ছে থাকলেও তা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
রুপকথার নিশি ডাকের মতো। মায়াবী ছলনার হাতছানি। রেহাই পাওয়া ভারী মুশকিল।
এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হলো না। দুজনেই মন্ত্রমুগ্ধের মতো কাদু পিসির সঙ্গ নিলো।
সাক্ষী রইলো লাইটপোস্ট।
স্বাভাবিক ভাবেই খুবই সাদামাটা ঘর। একটা চৌকিতে বিছানা পাতা। পাশে একটা চেয়ার। ঘরের ভেতরেই আরও একটা দরজা। সেটা পেরিয়ে এলেই, একপাশে কলঘর, অন্যপাশে রান্নার জায়গা।
রান্নাঘরের দেওয়ালে একটা জানালা।
সেটা বন্ধই ছিল। পিসি জানালার কপাট খুলে দিলো। আশ্চর্য! জানালায় শিক বা গরাদ নেই। বিলকুল খোলা। অনায়াসে সেখান দিয়ে যে কেউ বাইরের ঝোপঝাড়ের জঙ্গল পেরিয়ে ঘরে প্রবেশ করতে কিংবা বেড়িয়ে যেতে পারে।
ছেলে মেয়ে দু’টি, নিজেদের মধ্যে আড়চোখে তাকিয়ে নিলো।
সেই তাকানোর মধ্যে লুকিয়ে ছিল কিছু প্রশ্ন।
পিসি বলছিল, একাই থাকে। তাহলে এমন ভাবে জেনেশুনে ঘরের মধ্যে এমন একটি উন্মুক্ত নিরাপত্তাহীন জায়গা কেন করে রেখেছে। নাকি, তার দিক থেকে ভয়ের কোনও কারণ নেই, এমন নিশ্চয়তায় বিভোর হয়ে আছে?
জানালার কপাট বন্ধ করতে করতে পিসি, হাসি মুখে বললো,
তোমরা যা ভাবছো, তেমন হবার কোনও সম্ভাবনা একেবারেই নেই।
প্রথমত, আমার এই ভাঙা ঘরে এমন কোনও দামী জিনিস নেই, যার লোভে কেউ এসে, তার মূল্যবান সময় নষ্ট করবে।
রইলুম বাকি আমি। হা হা হা হা.. আমাকে দেখে কী তোমাদের মনে হচ্ছে, এই বয়সের শরীরে, সেই জৌলুশ কী আছে, যাকে হরণ করবার জন্য কেউ এত কষ্ট করবে? হা হা হা হা..তাছাড়া, জানালা বন্ধই থাকে সবসময়। ওদিকটায় ঝোপঝাড় ভর্তি। বড্ড মশার উপদ্রব। অবিশ্যি বাঁদিকে একটুখানি গেলেই রাস্তা।
ওরা কথা গুলো শুনতে শুনতে ভাবছিল, পিসি, অকারণে কেন এই কথাগুলো শোনাচ্ছে? কেউ-ই তো কিছুই জানতে চায়নি। তাহলে?
পিসি বললো- থাক ওসব কথা। এসো, বিছানায় বসো। তোমাদের একটু চা করে দিই।
ওরা দুজনেই প্রায় একসঙ্গে বলে উঠলো- না না পিসি। একদম নয়। আমরা কেউই চা খাই না। তারচেয়ে আপনি বসুন, আপনার সঙ্গে একটু গল্প করি।
পিসি একগাল হেসে বললো- ঠিকই বলেছো। তোমাদের ডেকে নিয়ে এলুম, গল্প করবো বলেই তো। কিন্তু কী হয়েছে জানো, আমার আজকে
ডাক্তার দেখাবার দিন। কাজেই আমাকে একবার,
ছেলেটি বললো, বেশ তো, আপনি অবশ্যই যান। আমরা না হয় আবারও একদিন আসবো। আজ চলি।
পিসি ব্যস্ত হয়ে বললো,না না, সেকি! যাবে কেন? তোমরা এখানেই বসে গল্পসল্প করো, আমি ঘন্টা খানেকের মধ্যেই চলে আসবো।
গলার স্বর একদম কম করে, প্রায় ফিসফিস করে বললো- তোমরা থাকো। কেউ আসবে না। কেউ বিরক্ত করবেনা। নিশ্চিন্তমনে দুজনে থাকো।
আমি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে দিয়ে যাবো। যাতে কেউই কিছুই বুঝতে না পারে।
যেতে গিয়েও ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো- ওই দ্যাখো, একদম ভুলে গেছি, তোমাদের নাম-ই তো জানা হয়নি..
ছেলেটি বললো, আমি অয়ন, আর ও নয়না।
বেশ, খুব ভালো, আচ্ছা অয়ন, একটা কথা, মানে, তেমন কিছু নয়। বলছিলাম যদি কিছু মনে না করো, আমার দু’ হাজার টাকার নোটটা তোমার কাছে রেখে, আমাকে শ পাঁচেক টাকা দিতে পারো? মানে, ডাক্তারখানায় টাকার ভাঙানি পাওয়া যায় না কিনা তাই।
অয়ন প্যান্টের পকেট থেকে পাঁচশো টাকা বের করে, পিসিকে দিয়ে বললো, এই নিন রাখুন । না না দু হাজার টাকার নোট আপনার কাছেই থাক। পরে না হয়, ফিরিয়ে দেবেন। আলাপ যখন হলো, তখন, আসা যাওয়া তো থাকবেই।
-হা হা হা হা। বেশ বেশ, তাই হবে। আর হ্যাঁ শোনো, ভালো কথা, আমি যাবার পরেই ঘরের আলো নিভিয়ে দেবে। কেউ আসবে না বা ডাকবে না। তবুও, সাবধানের মার নেই, কেউ ডাকাডাকি করলে, ভুলেও সাড়া দিও না।
আমি দরজায় তালা লাগিয়ে যাবো, আমিই এসে খুলবো। ততক্ষণ তোমরা..
কথাটা শেষ করলো না। অদ্ভুত একটা মুখ ভঙ্গিমা করে, এমন ভাবে তাকালো, যার মধ্যে মিশে আছে আদিম প্রবৃত্তির নিকৃষ্ট ঈঙ্গিত।
দুই:–
কাদু পিসি দরজা বন্ধ করে চলে যাবার পরেই, অয়ন বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো।
ওকে খুবই গম্ভীর আর সিরিয়াস লাগছিলো।
গোড়া থেকেই এই মহিলাকে একেবারেই ভালো লাগেনি অয়নের।
কথায়, চোখের চাহনিতে কেমন যেন চাতুরীর আভাস। মতলব বাজ, সেয়ানা।
অয়ন, জানালাটা সামান্য একটু ফাঁক করে, বাইরেটা দেখে নিয়ে, উত্তেজিত, তবুও গলার স্বর নামিয়ে, ফিসফিস করে বললো- নয়না, এসো, দু’জন মিলে বাড়িটা ভালো করে সার্চ করি।
নয়না, এতক্ষণ নীরব শ্রোতা দর্শক হয়েই বসে ছিল। অবাক হয়ে বললো- কেন? কিসের সার্চ।
অয়ন নয়নার চোখে চোখ রেখে কঠিন গলায় বললো- সেকি, বুঝতে পারছো না? এই মহিলা অত্যন্ত চতুর। এবং আমার মনেহ য় ইনি আরও অনেক কুকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। দেরি করে লাভ নেই। এসো, কাজে লেগে যাও।
আমি যা সন্দেহ করছি, তাই যদি সত্যি হয়,তাহলে এই ঘরেই তার কিছু প্রমাণ অবশ্যই পাওয়া যাবে।
নয়না অবাক হয়ে বললো- একি! তুমি হঠাৎ গোয়েন্দা হয়ে গেলে না কি?
অয়ন একটু বিরক্ত স্বরে বললো- বাজে কথা না বলে, যা বলছি তাই করো।
দু’জন মিলে ঘরের আনাচে কানাচে তন্নতন্ন করে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিলো।
একসময় অয়নের সন্দেহ সঠিক প্রমাণিত হলো। রান্নাঘরে রাখা মশলার কৌটো থেকে বেড়িয়ে এলো, ব্রাউন সুগারের দুটো প্যাকেট। আর একটা কৌটো থেকে হেরোইনের একটা প্যাকেট।
টেবিলের ড্রয়ার থেকে পাওয়া গেল, বিদেশি কোম্পানির তৈরি, হট সেক্সি ছবি দেওয়া, ডজন খানেক কন্ডোম। আর চৌকির নিচে রাখা কয়েকটা মদের খালি বোতল।
নয়না ঘামতে শুরু করেছে। গলা বুঁজে আসছে। ভয়ে ঠোঁট কাঁপছে। কোনও রকমে কাঁপা গলায় বললো- এখন কি হবে?
অয়ন বুঝতে পারছে, নয়না আতঙ্কিত হয়ে গেছে। ওকে সাহস যোগানো দরকার।
নয়নাকে বুকের মাঝে টেনে নিয়ে, ফিসফিস করে বললো- নয়না, প্লিজ বি স্টেডি। ভয় কী? আমি তো আছিই তোমার সঙ্গে।
তারপর, হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বললো-
নয়না শোনো। খুব ভালো করে মন দিয়ে যা বলছি শোনো।
নয়না প্রায় কাঁদোকাঁদো হয়ে বললো- আমার বড্ড ভয় করছে অয়ন। আমরা ফেঁসে গেছি। আমরা একেবারে বন্দী। ওই মহিলার মনে কী আছে জানি না। তবে, আমাদের সাথে খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে, আমি নিশ্চিত।
অয়ন নয়নার ঠান্ডা হয়ে ওঠা হাত, নিজের মুঠোর মধ্যে চেপে ধরে বললো- কিচ্ছু ফেঁসে যাইনি। ওর পাতা ফাঁদে আমরা পা রাখিনি। আমি অনেক আগেই ওর মতলব বুঝতে পেরেছিলাম।
যাই হোক, শোনো। আমরা একদমই বন্দী নই। রান্নাঘরের গরাদ ভাঙা জানালাটা, ওই মহিলা তখন ইচ্ছে করেই আমাদের দেখিয়েছিল।
ও চেয়েছিল, এই ফাঁকা নির্জন ঘরে, তুমি-আমি, উল্টোপাল্টা কাজকর্ম শেষ করে, যাতে ওই ভাঙা জানালা দিয়ে পালিয়ে যাই।
ডাক্তারখানা, দু হাজার টাকার নোটের গল্প। সব বানানো। ওর তো পাঁচশো টাকা পাওয়া হয়েই গেছে।
নয়না, ভয়মিশ্রিত গলায় বললো- কিন্তু ওইসব মাদক, আরও সব!
অয়ন হালকা হেসে বললো- ওইসব, যারা ওর ফাঁদে পা রাখে, তাদের জন্যে। আরে বাবা একটু ভেবে দ্যাখো না। কোথায় পাবে? এমন সুবিধে পাবে কোথায়? নিরিবিলি নিরুপদ্রপ ফাঁকা ঘর। হাতের কাছে নেশার জিনিস আর কথাটা উচ্চারণ না করে, নয়নার দিকে তাকিয়ে, টিক ক’রে একটা চোখ টিপে, ইশারায় বুঝিয়ে দিলো।
নয়না চোখ সরিয়ে নিয়ে, মাথা নিচু করে বললো- যা-ই বলো, ভুলটা কিন্তু আমাদেরই। আমাদের কিন্তু এইরকম নির্জন জায়গায় গলির মধ্যে এসে দাঁড়ানো উচিৎ হয়নি। এটা তুমি মানবে কি না আমি জানি না। আমরা তো কোনোদিন এখানে এভাবে আসিনি। তাহলে, আজ এলাম কেন? হ্যাঁ, এটাও ঠিক, আমরা জানতাম না, এখানে আমাদের জন্য এইরকম একজন জঘন্য মানুষ ফাঁদ পেতে বসে আছে, এবং আমরা তার শিকার হবো। কিন্তু অয়ন, খুব ভালো করে ভেবে বলো তো, আমরা কী একটু বেশি রিস্ক নিয়ে ফেলিনি? বিপদ অন্য জায়গা থেকে, অন্য ভাবেও আসতে পারতো। আমরা একটু বেশিই আবেগপ্রবণ হয়ে হঠকারিতা করে ফেলেছি। ভুল আমাদের।
অয়ন তার ঝাঁকড়া চুলের মধ্যে আঙুল চালিয়ে বললো- ইয়েস, রাইট ইউ আর। আই এম ভেরি স্যরি নয়না।
নয়না চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো- ওফ, আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে। আমি আর এক মুহূর্ত এখানে থাকবো না। চলো, পালাই।
অয়ন, সাহস যোগাতে নয়নাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো- ঠিক আছে। চলো। মহিলা অবশ্য তাই চেয়েছিল। সুতরাং, আমরা চলে গেলে, ও কিছুই সন্দেহ করবে না।
তারপর অয়ন নয়নাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে, কাঁধের ওপর চাপ দিয়ে বললো- আমি এই বদমায়েশ মহিলাকে ছাড়বোনা। এর শেষ দেখে ছাড়বো। চলো..
তিন:–
পরদিন দুপুরে ওরা একটা ক্যাফেটেরিয়াতে গিয়ে বসলো। কফি আর কিছু স্ন্যাকসের অর্ডার দিলো। আজ দুজনকেই বেশ গম্ভীর লাগছে।
গতকালের ঘটনা, ওদের ওপর প্রবল প্রভাব ফেলেছে, সেটা ভালো রকম বুঝতে পারা যাচ্ছে।
নয়নাই প্রথম মুখ খুললো, জানো, কাল রাতে একদম ঘুমোতে পারিনি। বারবার ওই বিশ্রী ঘটনাটা চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো। কিছুতেই ভুলতে পারছি না, এইরকম একটা সাংঘাতিক ভুল করলাম কেমন করে!
অয়ন অপরাধীর মতো মুখ করে নিষ্প্রাণ গলায় বললো- এগজ্যাক্টলী। একে মতিভ্রম ছাড়া আর কিই বা বলা যায়। তারপরেই হঠাৎ স্বর চড়িয়ে বললো, তবে দেখে নিও, আমি কিন্তু ওকে ছাড়বো না।
নয়না তাচ্ছিল্যের সুরে বললো- কী করবে, পুলিশকে জানাবে? অত সহজ নয়। পুলিশের কাছে যেতে হিম্মৎ লাগে। আছে? কী বলবে পুলিশকে? আমরা ওই অচেনা মহিলার ঘরে গিয়েছিলাম নেমন্তন্ন খেতে? হুঃ..
কিল খেয়ে কিল হজম বোঝো? যদি বোঝার মতো মগজ থাকে, তাহলে চুপচাপ হজম করে যাও। স্রেফ হজম, বুঝেছো?
-কার হজমের গোলমাল হলো?
-আরে শ্রীজিতদা। আপনি, আসুন আসুন, বসুন।
অয়ন আর নয়না দুজনেই উঠে দাঁড়িয়ে, শ্রীজিতদার হাতে হাত মিলিয়ে চেয়ার এগিয়ে দিলো।
শ্রীজিত চট্টোপাধ্যায়। বিখ্যাত চিত্র পরিচালক।
এই ক্যাফেটেরিয়ায় প্রায়ই আসেন।
এখানেই ওদের আলাপ। তবে সেটা আর শুধুমাত্র আলাপের পর্যায়ে নেই। অনেকটাই হৃদ্যতা তৈরী হয়েছে এতদিনে। তার কারণ অবশ্য শ্রীজিত নিজে।
তাদের মধ্যে বয়সের এবং সামাজিক মর্যাদায় যথেষ্ট তফাৎ থাকা সত্বেও, শ্রীজিতের অহংকার শূন্য নির্ভেজাল বন্ধুত্ব, ওদের মাঝে অনাবশ্যক কাঁচের দেওয়াল তৈরী হতে দেয়নি। ওকে দেখে বোঝাই যায় না, এই মানুষটা এতো ভালো ভালো হিট ছবি তৈরী করেন। ঈশ্বরের আশ্চর্য কারসাজি। প্রতিভা বাইরে থেকে দৃশ্যমান নয়। তার প্রকাশ কাজে।
শ্রীজিতদাকে দেখেই, ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজার আব্দুল কাদির কাউন্টার ছেড়ে ছুটে এলেন।
আদাব দাদা। ভালো আছেন তো? কী খাবেন বলেন- শ্রীজিত, নয়না আর অয়নকে জিজ্ঞেস করতে, তারা জানালো, ইতিমধ্যেই তারা কফি আর স্ন্যাকসের অর্ডার করেছে। সেই শুনে শ্রীজিত বললো- তাহলে আমারও একই অর্ডার রইলো।
আব্দুল হাসিমুখে তার জায়গায় ফিরে গেল।
-এইবারে বলো তোমাদের খবর কী?
দুজনেই একেবারে চুপ। শ্রীজিত অভিনয়ের কারবারি। সুতরাং তার পক্ষে বডি ল্যাংগুয়েজ বুঝতে পারা কঠিন নয়। আন্দাজ করলেন কিছু একটা সমস্যা। যেটা এরা বলতে কুন্ঠিত বোধ করছে। ব্যাপারটা হাল্কা করার জন্য বললেন,
আচ্ছা যাই হোক, তোমরা কেমন আছো বলো?
অয়ন হালকা গলায় বললো- দাদা আপনি এসে, মানে.. আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে ভালোই হয়েছে।
শ্রীজিত দুই ভ্রুর মাঝে লম্বাটে ভাঁজ তুলে বললেন- কী ব্যাপার বলো তো? তোমাদের খুব টেন্সড লাগছে। কিছু ঝামেলা না কি? আপত্তি না থাকলে, বা আমাকে বলার মতো হলে, নিঃসঙ্কোচে বলতে পারো।
নয়নার চোখে জল। রুমাল দিয়ে চেপে ধরলো।
শ্রীজিত বুঝতে পারলেন, নিশ্চয়ই কোনও সিরিয়াস ব্যাপার। কিন্তু এইরকম পরিস্থিতিতে উনি খুবই অস্বস্তি বোধ করছিলেন। তাই এদিক ওদিক তাকিয়ে চাপা গলায় বললেন- নয়না এখানে মানে এই পাবলিক প্লেসে, আমার উপস্থিতিতে এমন কিছু করো না, যাতে আমাকে বিব্রত হতে হয়, প্লিজ।
নয়না তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বললো- স্যরি দাদা, রিয়েলি ভেরি স্যরি। আমার এরকম করা উচিৎ হয়নি।
কিন্তু বিশ্বাস করুন দাদা, কী বলবো, এমন নিদারুণ অসম্মান.. মানুষের চরিত্র এত খারাপ! এতো নির্লজ্জ হতে পারে, কখনও চিন্তাও করতে পারি না। যদিও ভুল আমাদেরই।
শ্রীজিত এসব কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারলো না। খুবই স্বাভাবিক। অবাক হয়ে দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে ব্যাপারটা বোঝবার চেষ্টা করলো। কিন্তু কিছুই বোধগম্য হলো না।
কফি আর স্ন্যাকস এসে গেছে। শ্রীজিত বললেন,
নাও, এগুলো খেয়ে, চলো বেড়িয়ে পড়ি।
অয়ন সামান্য অবাক হয়ে বললো- কোথায়?
শ্রীজিত কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন- কাছেই, একটা শুটিং লোকেশন দেখতে যাবো। তোমরাও চলো। কাজও হবে আর তোমাদের সমস্যার কথাও শোনা যাবে। কী, আপত্তি নেই তো?
নয়না সঙ্গে সঙ্গে বললো- মোটেই না। কোনও আপত্তি নেই। এতো আমাদের সৌভাগ্য। আপনার সাথে অনেকক্ষণ সময় কাটাতে পারবো।
-ভেরি গুড, চলো।
ক্যাফেটেরিয়ার পাশেই শ্রীজিতের গাড়ি পার্ক করা ছিল। গাড়ি ছুটে চললো গঙ্গার দিকে, শুটিং লোকেশনের উদ্দেশ্যে।
চার:-
শহরের মধ্যেই এমন চমৎকার মনোরম নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জায়গা, আশ্চর্যজনক অনাদরে পড়ে ছিল অনেকদিন।
যেন হঠাৎ এক জাদুকরের ছোঁয়ায়, অবহেলিত পাষাণ মূর্তি, মনোলোভা রূপবতী রাজকন্যা হয়ে উঠেছে।
কুলকুল করে বহমান গঙ্গা নদী। ভেসে চলা মাঝিমাল্লার নৌকো। মৃদুমন্দ ঠান্ডা বাতাস। পাখিদের কিচিরমিচির ওড়াউড়ি। সবুজ ঘাস আর গাছে ছাওয়া সারা অঞ্চল, যেন রূপরাণী নববধূ বেশে সেজেছে।
এইখানের বাতাসে মন শান্ত, পবিত্র হয়ে যায়।
নয়না বিমোহিত হয়ে একটিই শব্দ উচ্চারণ করলো- বাহঃ।
অয়ন বললো- এখানে আগেও এসেছি, কিন্তু তখন এমন সুন্দর করে সাজানো ছিল না। বড্ড নোংরা, এলোমেলো ছিল।এখানে আসতে ভালো লাগতো না। এখন খুব ভালো লাগছে।
শ্রীজিত চিত্র পরিচালকের দৃষ্টিতে দেখতে দেখতে বললেন- ঠিকই বলেছো। সত্যিই খুব সুন্দর জায়গা। নৌকোও নিশ্চয় ভাড়ায় পাওয়া যাবে। ঠিক আছে ।
নয়না শ্রীজিতের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো-
শ্রীজিতদা, আপনি কী নতুন কোনও ছবি করার কথা ভাবছেন?
শ্রীজিত সিগারেট ধরিয়ে বললেন- হ্যাঁ, এবার একটা অন্য রকম ছবির কথা ভাবছি।
অয়ন বললো- অন্যরকম বলতে?
-অন্যরকম বলতে, আজকের সমাজের কিছু জলন্ত সমস্যা। যেমন মনে করো, এই যে তোমরা দুজন খুব ভালো বন্ধু। তোমাদের চোখে অনেক স্বপ্ন। তোমরা হয়তো নিজেদের প্রস্তুত করছো, আগামী দিনে সেই রঙিন স্বপ্নগুলোকে সত্যি করে তুলবে বলে।
কিন্তু এমন যদি হয়, যে এই সমাজের কিছু নোংরা মানুষ, তোমাদের সেই স্বপ্ন, ভেঙেচুরে তছনছ করে দিলো। অথবা, তোমরা নিজেরাই, নিজেদের প্রতি সৎ থাকতে পারলে না। তুচ্ছ মোহের ফাঁদে আটকে নিজেরাই নিজেদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে ফেললে।
অর্থাৎ, সমাজের প্রতিটি স্তর নির্ভেজাল সৎ হবে, এমনটি হয়তো প্রত্যাশা করাই যায়। কিন্তু বাস্তব অন্য কথা বলে। সবকিছুই কিছুতেই তোমার মনের মতো হবে না। হতে পারে না। যদি হতো, তাহলে পৃথিবীর চেহারা একেবারে অন্যরকম হতো।
আসলে কী জানো। সুশ্রী আর কুশ্রী, সাদা আর কালো, এই দুটি রূপই আমাদের মধ্যে বসে আছে। তোমাকেই নির্ণয় করতে হবে, প্রকৃতপক্ষে তোমার লক্ষ্য কী। একটু আগে বলছিলে না? এই জায়গায়টা আজকে খুব সুন্দর, অথচ এখানে কিছুদিন আগেও আসতে ভালো লাগতো না;
তার মানে, এখানকার সৌন্দর্য ছিল অন্তরালে। চাপা পড়া। মলিনতা দূর হতেই, প্রকৃত রূপ উন্মোচিত হলো।
নয়না বললো- তাহলে আপনি বলতে চাইছেন । সকলের মধ্যেই ভালো মানে সাদা দিকটা থাকেই। শুধুমাত্র সঠিকভাবে নিজেকে পরিচালনা করার অদক্ষতার কারণেই কেউ কেউ পথভ্রষ্ট হয়।
– এগজ্যাক্টলী। দুনিয়ায় কেউ দুরাচারী হয়ে জন্ম নেয় না। আবার ধোয়া তুলসীপাতা হয়েও নয়।
অথচ সমাজে আমরা এদের সকলকেই দেখতে পাই।
তোমার জীবনের চলার পথ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত তোমারই হাতে। চয়েস ইজ ইওয়োরস।
তোমার মধ্যে থাকা ছুরিটা জীবন নিতেও পারে আবার দিতেও পারে। ডাক্তার কিংবা ডাকাত।
কথাটা শেষ করেই শ্রীজিতদা হা হা.. করে খুব জোরে হেসে বললেন- যাক গে, বাদ দাও।
এবার তোমাদের কথা বলো।
অয়ন বললো- আচ্ছা দাদা, আপনার এই ছবি কী ক্রাইম বেসড?
-দ্যাখো সমাজের কালো দিক দেখাতে হলে, অবশ্যই অপরাধ জগৎ সামনে এসেই যাবে।
নারীপাচার, ড্রাগস, নানান দুর্নীতি, মস্তানি, দাদাগিরি, এইসবের সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ। কেউ বাদ যাবে না।
আরও একটা ভীষণ স্পর্শকাতর ব্যাপার অবশ্যই থাকবে। সেটা হলো, এই তোমাদের মতো বয়সের যুবক যুবতীদের, সমাজের কিছু স্বার্থপর বেয়াদব মানুষ, নানান কায়দায় প্রলোভন দেখিয়ে বিপথগামী করে তোলে। বয়সের দোষ কিংবা মোহান্ধতা বা বেহিসেবী কাম উত্তেজনা। স্যরি টু সে। প্লিজ ডোন্ট টেক ইট ফ্রম রং এঙ্গেল।
দ্যাখো হুল্লোড় সাময়িক আনন্দ অবশ্যই দেয়। কিন্তু তার পরিণতি হয় মারাত্মক।
সেই ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে কেউ কেউ ফিরে আসতে হয়তো পারে। মনের জোরে। অনেকেই হারিয়ে যায় চিরতরে। অন্ধকারে।
আর ভয়ের কথা কী জানো? এই নরকের হাতছানি কিংবা ফাঁদ, যাই বলো, সবই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই সমাজেরই আনাচে কানাচে। এক্কেবারে আমাদের গা ঘেঁষে। যারা চিনতে পারে তারা সেই মায়াবী খেলা থেকে নিজেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
আসলে তারাই প্রকৃত সাহসী, লড়াকু।
চলো, অনেক বকবকানি হয়েছে, একটু কোল্ড ড্রিঙ্কসের খোঁজ করা যাক, চলো।
পাঁচ:–
কোল্ড ড্রিংকের খালি বোতল ট্রে-তে নামিয়ে রেখে শ্রীজিত চট্টোপাধ্যায় গম্ভীরমুখে বললেন- বলো কী! এ তো সাংঘাতিক ব্যাপার। ভাই অয়ন, আমি তোমার উপস্থিত বুদ্ধির প্রশংসা না করে পারছি না। কিন্তু পাশাপাশি একথাও বলবো, যে কেউ, অজানা অচেনা মানুষ, তোমাদের ঘরে নিয়ে যেতে চাইলো, আর তোমরাও সাতপাঁচ না ভেবে, তার ঘরে ঢুকে গেলে! এটা.কী বলবো..চরম নির্বুদ্ধিতার কাজ হয়েছে।
ওরা মাথা নিচু করে, ওদের খালি হয়ে যাওয়া বোতলগুলো নামিয়ে রাখলো।
তারপর অয়ন বললো- দাদা আমাদের এই ব্যাপারটা কিন্তু শুধু আপনাকেই বললাম। আর কেউ জানে না। মানে আমরাই জানাইনি।
শ্রীজিত সিগারেট ধরিয়ে বললেন- ঠিকই করেছো। কী বলতে? তোমরা একটা বিরাট কাজ করে ফেলেছো? কেউ বিশ্বাস করতো না। উল্টে তোমাদেরই নানাভাবে হেনস্তা হতে হতো।
তোমাদের কী ধারণা? ঐ মহিলা নিজের জোরে এই ধরনের অসামাজিক অপরাধ মূলক কাজ বিনাবাধায় বুক চিতিয়ে করে যাচ্ছে?
মোটেই নয়। এর পিছনে অনেক মাথাভারি মাতব্বররা জড়িয়ে আছে।
টাকার খেল। ভাগ-বাটোয়ারা। টপ টু বটম দুর্নীতি ছেয়ে গেছে। প্রতিবাদ করলে মারা যেতে হবে।
এরা অনুভূতিহীন, অজ্ঞ, অশিক্ষিত।
টাকা ছাড়া কিচ্ছু চেনেনা। তোমাদের মতো ইয়াং গ্রুপই ওদের টার্গেট।
তবে একটা কথা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি-
ওঝার মরণ সাপের বিষে। জেনে রাখো, ঐ মহিলাও এই নিয়মের বাইরে নয়।
আচ্ছা, ঠিক আছে। এবার চলো ফেরা যাক।
সন্ধ্যে হয়ে আসছে। গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে সূর্য ঢলে পড়েছে। গোলাপি আভায় ছেয়ে গেছে, আকাশ, নদীর জল। পাখিদের ঘরে ফেরার কলতান।
দিন শেষের সন্ধিক্ষণে প্রকৃতি কেমন যেন গম্ভীর হয়ে ওঠে।
অয়ন আর নয়নাও প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে হঠাৎই আরও গম্ভীর হয়ে গেল।
সেদিনের অপমানের জবাব দিতে না পারা পর্যন্ত শান্তি নেই।
শ্রীজিতদা-কে সবকথা বলার উদ্দেশ্য ছিল একটাই। শ্রীজিতদা হয়তো একটা কোনও উপায় করে দেবেন। ঐ মহিলাকে শাস্তি দেবার ব্যাবস্থা করবেন। কেন না, শ্রীজিতদা খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি। ইচ্ছে করলেই এইরকম জঘন্য প্রকৃতির লোকজনকে নিমেষে শায়েস্তা করতে পারেন।
কিন্তু উনি যা বললেন, তাতে বেশ ভালো করেই বুঝতে পারা গেছে, উনি কিছুই করবেন না।
ধর্মের নাকি কল আছে? আর সেটা নাকি বাতাসে নড়ে! কে জানে হতেও পারে হয়তো। অন্তত এই মুহূর্তে অয়নের তেমনই মনে হচ্ছে।
তখন সকাল ন-টা হবে। অয়ন ফোন করলো নয়নাকে।
-আজকের খবরের কাগজ দেখেছ?
নয়না অবাক হয়ে বললো- কেন? কী ব্যাপার?
বোঝা গেল নয়না কাগজ পড়েনি ।
-শোনো, জবর খবর। সেই মহিলা, ক’দিন আগে যার খপ্পরে পড়ে গিয়েছিলাম। সেই ধুরন্ধর কাদু পিসি। কাল রাতে খুন হয়ে গেছে।
কে বা কারা, ওকে সাপের বিষ ইঞ্জেকশন দিয়ে মেরে রেখে গেছে।
নয়না নির্বাক। শুধু শুনলো। একটাও কথা বললো না। শুধু শ্রীজিতদার একটা কথা বারবার মনে হচ্ছিল।
ওঝার মৃত্যু সাপের বিষে।
একেবারেই দারুণ লাগল