Site icon আলাপী মন

গল্প- মানস ভ্রমণ

মানস ভ্রমণ
– জয়তী মিত্র

 

 

জানিস দিদি, বাবা বলেছে, আসছে রবিবার বাবা এসে আমাদের সবাকে চিড়িয়াখানা নিয়ে যাবে। সারাদিন কত পশু,পাখি দেখব, তারপর সেখানে কিছু খাবার খেয়ে বাড়ি ফিরে আসব, খুব মজা হবে বল। আট বছরের তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া ভাই রনির মুখে এই কথা শুনে বেজায় খুশি তার সপ্তম শ্রেণীতে পড়া দিদি রিমি। রিমি বললো, আজ তো বুধবার, রবিবার আসতে তো আর বেশি দেরি নেই। কি মজা হবে বল ভাই..মাকে বলবো লুচি-আলুরদম, আর মিষ্টি কিনে নিয়ে যেতে। গাছের তলায় বসে সবাই খাব। বেশ পিকনিক এর মত হবে বল ভাই। সেই কবে চিড়িয়াখানা গেছিলাম, আমি তখন অনেক ছোট্ট জানিস ভাই, আর তুই তখন মায়ের কোলে। ঠিক মত হাঁটা শিখিস নি। তারপর এতদিন বাদে আবার যাব, ভাবলেই ভালো লাগছে। নে চল, ভাই অনেক গল্প হলো এবার পড়তে বসি, না হলে মা রাগ করবে। তারপর দুই ভাই-বোন পড়তে বসলো। মা তাদের জন্য সকালের জলখাবার বানাতে ব্যস্ত, এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে ছুটে গিয়ে দরজা খুলল রিমি। বাবাকে এই সময় দেখে বলেই ফেললো- বাবা, তোমার তো শনিবার আসার কথা ছিল, আজই চলে এলে? বাবা বিকাশ বাবু বললেন- কেন রে মা, নিজের বাড়িতে কি যখন তখন আসতে পারি না বল? -না,না বাবা, তুমি যখন খুশি আসবে, তুমি এলে আমরা কত খুশি হই বলো। বিকাশ বাবু মনে মনে ভাবলেন- এইবারে আর খুশি হবি না রে মা, কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, আর আমার চাকরিটাও চলে গেছে। ভাবতে ভাবতে দু’ চোখ নোনা জলে ভরে উঠল বিকাশবাবুর। উনি কাজের সূত্রে বাইরে থাকেন। সপ্তাহে একদিন বাড়ীতে আসেন। বউ-ছেলে-মেয়ের সাথে একদিন কাটিয়ে আবার কর্মস্থলে ফিরে যান।

স্বামীর মুখ ছোট দেখেই রিমির মা বুঝেছে কিছু, একটা ঘটেছে, না হলে কোনো খবর না দিয়ে তো এইভাবে আসে না। বিকাশ বাবু স্ত্রীকে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বললেন- আমার চাকরিটা চলে গেছে। ছেলে-মেয়ে দুটোকে আর চিড়িয়াখানায় নিয়ে যেতে পারলাম না, ছোট ছেলেটা কত আনন্দে ছিল। ওদের আমি কি জবাব দেব? বলে কান্নায় ভেঙে পড়ল রিমির বাবা। দরজার আড়াল থেকে রিমি সব কথা শুনে ভাইকে বললো- ভাই বাবার শরীর খারাপ তো তাই আমরা এইবার চিড়িয়াখানা যাবো না। পরে কোনোদিন যাবো। এইবার আমরা মানস ভ্রমণ করব, মানে, মনে মনে চিড়িয়াখানা ঘুরে আসবো বুঝলি। ছোট ভাইটা কি বুঝলো কে জানে! একদৃষ্টে দিদির দিকে চেয়ে রইলো। ভাইকে আদর করে বললো- বাবা পরে একসময় আমাদের ঠিক নিয়ে যাবে বুঝেছিস। মেয়ের কথা শুনে বাবা ভাবলো, মেয়েটা আমার কত বড় হয়ে গেছে, দুঃখ আড়াল করতে এখনই শিখে গেছে। মনে মনে মেয়েকে আশীর্বাদ করে বললো- জীবনের কঠিন সময়কে ঠিক এইভাবে কঠোর হাতে মোকাবিলা করার শক্তি যেন তোকে ভগবান দেন। পারলে এই হতভাগ্য বাবাকে ক্ষমা করিস মা। রিমির মা এসে স্বামীর চোখের জল মুছিয়ে বললো- এত ভেঙে পড়লে চলবে কি করে? তোমাকে আমাদের মুখ চেয়ে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। আজ আমাদের খারাপ দিন, কাল আবার নতুন সূর্যের মত ভালো দিন আসবে।
নাও এইবার হাত- মুখ ধুয়ে জলখাবার খেয়ে নাও। তার আগে আমি চা বসাই। এই দুর্দিনে পরিবার তার পাশে আছে এই ভেবে মনটা ভরে গেল বিকাশ বাবুর।

Exit mobile version