বাস্তব দর্শন
– মঙ্গল মন্ডল
“…আমি গহন অরণ্য খুঁজে চলি যতবার
ভাবি হারাবার স্বাদ ওখানে মেটাবো এবার,
ততবার সময় আমায় মুক্ত করে রাখে মরুতে মরীচিকা করে যেন সবাই ভ্রমে দেখতে পায় আমায়।”
– বুঝলি রতন যত ভাবি বিপদ থেকে দূরে গিয়ে শান্তি পাবো, ততই বিপদ আমায় চেপে ধরছে!
– কি বলিস মনীষ, হল কি আবার তোর? আবার বুঝি সেই মেয়েটা!
– না না ওর কোনো দোষ নেই, আমিই তো বেশি ভালোবেসে ফেলেছি রে, ও তো আমায় চায় না, পছন্দ করে না বোধহয়, তবু আমি! যাক ছাড়..
– ছাড় মানে কি হয়েছে বল, বিপদ বললি!
– ওর বাবা মা এসে বাড়িতে বলে গেল আমি নাকি তার মেয়েকে বিরক্ত করছি, আরো দু’ চারটে কথাও শুনিয়ে গেল আমার পরিবারকে। আচ্ছা রতন তুই বল- একটা বন্ধুত্ব পাওয়া কি এতটাই কঠিন! তাহলে কয়েক পলক দেখে মনের ভালোবাসা এত সহজে কি করে হয়ে যায় বল?
– আরে তুই যেটা ভালোবাসা বলছিস ওটা ভালোলাগা, ভালোবাসা নয়।
– না রে ভাই, গরীব আর জাতের দৃষ্টি কোণ যখন চোখে দেখে মানুষ, তখন কেউ আসতে চায় না। ভালোবাসা তখন কেবল পুঁথি বদ্ধ। যতই মানুষ বলুক বন্ধুত্বের মানে এই ওই, বাস্তব তো আমি তেইশ বছর পর্যন্ত দেখতেই পাচ্ছি। যাক ছাড়… তোর চাকরিটা হল কি?
-না রে ভাই জীবন কেটে যাচ্ছে পড়াশোনা করতে করতে। অনেকেই বলে পড়াশোনার কোনো বয়স হয় না, কিন্তু আবার এদিকে “বেকার” বলতেও ছাড়ে না। রেজাল্ট আসবে হয়তো তাড়াতাড়ি। ততক্ষণ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে আর কি। আর ওই বেকার শব্দটার অক্ষরগুলো কানে শুনতে হবে।
-তা ঠিক বলেছিস, মানুষ তো বদনাম হোক আর না হোক শিরোনাম কিছু দেওয়ার অপেক্ষায় ওত পেতে বসে থাকে।
– যা বলেছিস। আর তোর বাড়িতে কি বললো তারপর?
– তারপর মা বাবাও দুটো কথা শুনিয়ে দিল আমাকে, আর ওই যে তুই বললি ‘বেকার’ সাথে ওই কথাটাও জুড়ে বলে দিল ।
-এতে বিপদ কি হল ? কান দিয়ে শুনবি আর এড়িয়ে যাবি আর কি! কিছু না কিছু ব্যবস্থা হয়ে যাবে সময়ের সাপেক্ষে।
– না রে ভাই, ওরা বলেছে পুলিশ কেস করবে।
না হলে পাড়ার ক্লাবের ছেলেদের বলবে। শুধু শুধু একটা বদনাম করে দিতে চাইছে ওর পরিবার। এর চেয়ে বিপদ আর কি হয় বল?
– তুই ভুলে যা মেয়েটাকে। যে চায় না, বোঝে না প্রকৃত প্রেম, তাকে সারাজীবন পাশে পাবি তা কি করে বিশ্বাস করিস?
এখনকার সময়ে মেয়ে ও তার পরিবার সব সময় অর্থের বুনিয়াদে দাঁড়ানো স্থাপত্য চায়, যা সুদৃঢ় ভাবে গড়া আছে। তারা কখনই পাশে থেকে তাকে গড়তে দেখতে চায় না।
– ঠিক বলেছিস ভাই, তুই আমার চোখে বাস্তব দর্শন করালি, রতন তুই সত্যি মানসিকতার রত্ন। তবে প্রকৃতির কোনো কিছুর প্রতি মন থেকে ভালোবাসা যখন হয়ে যায়, কেন জানি না যেন বার বার হৃদয় তাকে চাই বলে কেঁদে যায়।
“..প্রকৃতিতে মনের মানুষের প্রেম আর
বেঁচে থাকার জন্য খাবার
তার জন্য লড়াই চারিধারে ,
যে পায় সে বেঁচে যায়, আর যারা পায় না
তারা মরে দিনে দিনে গ্রামের শহরে..”