বিয়ে বাড়ির সেকাল আর একাল
– জয়তী মিত্র
দাদু আজ বিয়ে বাড়ি যাবে না? ঠামমু তো সেই সকাল থেকে শাড়ি গহনা বার করে একদম রেডি। শুধু এবার গেলেই হয়। বাবা অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এলে সবাই মিলে যাবো।
না রে দাদু ভাই, এখনকার বিয়ে বাড়িগুলোতে কোনো প্রাণ নেই। কেমন যেনো মেকি। চারিদিকে খাবার সাজানো আছে। নিজে নাও আর খাও। অ্যাপায়ন করার কেউ নেই। দেখারও লোকজন নেই। সব আসছে নতুন বউকে উপহার দিচ্ছে, তারপর প্লেটে খাবার নিয়ে সব খেয়ে চলে যাচ্ছে।এখন খালি লোক দেখানো ব্যাপার বেশি। কে কত খাবারের স্টল দিল, কে কত খরচ করে বিয়ে বাড়ি সাজালো এই সব নিয়ে সব ব্যস্ত। অতিথিরা ঠিক মত খেল কিনা এইসব আর কেউ দেখে না। আর ওই বুফে সিস্টেমে খাওয়া আমার পোষাবে না। প্লেটে করে একটু একটু করে নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাওয়া যায় নাকি? কিছু জায়গায় বসার ব্যাবস্থা থাকলেও সব জায়গায় থাকে না।
এই তো সেদিন সেন বাবুর ছেলের বৌভাতে গিয়ে কি বিপদে পড়েছি জানিস, খাবার জায়গাটা খুব ছোট, একগাদা লোক সেখানে ভীড় করেছে। একজনের ঘাড়ের কাছে আর একজন, এইভাবে কি খাওয়া যায়? কোনরকমে একটা প্লেটে একটু খাবার নিয়ে কোনায় দাঁড়িয়ে খেয়ে সোজা সেখান থেকে বিদায় নিয়েছি। দু’ চারটে টেবিল পাতা ছিল, কিন্তু সেগুলো ভর্তি ছিল। আমার এখন বয়স হয়েছে, আর এইভাবে দাঁড়িয়ে খেতে পারি না। দাদুভাই তোমরা ঘুরে এসো, আমি যাবো না। দশ বছরের নাতি রণর তো মন খারাপ হয়ে গেলো দাদু যাবে না শুনে।
রণ দাদুকে বললো- বাবার কাছে শুনেছি তুমি নাকি বিয়ে বাড়িতে খেতে খুব ভালোবাসতে। দাদু বললেন- সেকালের মানে আমাদের সময়কার বিয়ে বাড়ীতে কত আনন্দ হতো। সারাদিন বিয়ে বাড়িতে বিসমিল্লা খানের সানাই বাজত। বাড়ির উঠোনে, বাগানে বড়ো প্যান্ডেল হতো। কত খাওয়া দাওয়া হতো। ভাত, লম্বা বেগুন ভাজা, ঘি, ডাল, ঝিরিঝিরি আলুভাজা, দই কাতলা, কচি পাঁঠার ঝোল, চাটনি, পাঁপড়, দই, রসগোল্লা, যে যত পারো খাও। চেয়ার, টেবিলে বসে জম্পেশ করে খাওয়া হতো। রসগোল্লা তো কম্পিটিশন করে খাওয়া হতো। জানিস দাদুভাই আমি একবার রসগোল্লার কম্পিটিশন এ জিতেছিলাম। বর যাত্রী গিয়েছিলাম বন্ধুর বিয়েতে। নতুন বউয়ের পিসতুতো দাদা, রসগোল্লা দিয়ে যাচ্ছে,আমি খেয়ে যাচ্ছি। বাজি লড়ে ছিলাম যে, তাই আর লজ্জা পাইনি। কি যে মজা হয়েছিল কি বলবো তোকে। আর বাড়ির প্রতিটা লোক কত অ্যাপায়ণ করলো। অনেকদিন মনে ছিল সেই বিয়ে বাড়ির কথা। তখনকার দিনে বিয়ে বাড়ি গেলে যে আপ্যায়ন পাওয়া যেত, এখন সেই জিনিস আর দেখা যায় না। অবশ্য এটাও ঠিক এখন লোকের হাতে সময় কম, বিয়ে বাড়ি এসে আগেকার দিনের মত থাকার ব্যাপারটাও এখন নেই,কাজ করার লোকের অভাব, তাই সবাই বিভিন্ন সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়ে দেয় কাজ উৎরে দেওয়ার। যখন যেমন, তখন তেমন আর কি?।
নাও দাদু ভাই যাও তুমিও এইবার কোন পোশাক পরে যাবে সেটা ঠিক করে নাও, বিয়ে বাড়ি থেকে এসে আমাকে সব গল্প শুনিও কিন্তু।
নিশ্চয় শোনাবো দাদু। যাই মা আমাকে ডাকছে। বাবার আসার সময় হলো। এইবার রেডি হতে হবে।