অণু গল্প

অণুগল্প- অন্য এক চকলেট দিবস

অন্য এক চকলেট দিবস
– সুদীপা ধর

 আজ সোহমের খুব আনন্দ। গার্লফ্রেন্ডের সাথে মান অভিমানটা বোধহয় আজকেই শেষ হবে। দেখা করতে বলেছে সোহম, শ্বেতাকে। অনেক অনুনয় বিনয় করার পর শেষ পর্যন্ত রাজি হয় শ্বেতা। বিকেল সাড়ে চারটায় দেখা করার কথা আউট্রাম ঘাটে।

ঝগড়াঝাঁটি হলেও সোহমকে শ্বেতা নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। কিন্তু অভিমানটা শ্বেতার একটু বেশি, বরাবর সোহমকেই ভাঙাতে হয়।

খুব সেজেছে শ্বেতা। ওর দিক থেকে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। এক দৃষ্টিতে সোহম তাকিয়ে আছে শ্বেতার দিকে,  কিন্তু গুরুগম্ভীর শ্বেতা তাকাচ্ছে না সোহমের দিকে। নদী বক্ষের দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যাই হোক সোহম ভালো করেই জানে এই মেয়ের অভিমান সহজে ভাঙে না, তাকেই ভাঙ্গাতে হবে। আলতো করে শ্বেতার হাত ধরে প্রথম কথা—

“শ্বেতা আর কতদিন এইভাবে মুখ ঘুরিয়ে থাকবে? কথা বলবে না তো? ঠিক আছে চলে যাচ্ছি তাহলে।”

ছলছল চোখে শ্বেতার জবাব “ঝগড়া করার সময় মনে থাকে না। আর এখন এত ভালোবাসা দেখাচ্ছ তুমি!”

“ওরে আমার অভিমানী মেয়ে, হয়েছে বাবা আর ঝগড়া করবো না। চলো এবার ওখানে গিয়ে একটু বসি।”

অদ্ভুত আনন্দে শ্বেতার মনটা ভরে যায়।  ও ভাবতে পারিনি এত তাড়াতাড়ি সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।  এই কদিন রাতে ভালো করে ঘুমাতে পারে নি। যাইহোক অনেক কথা বলার পর সোহম এক বিরাট চকোলেটের বাক্স এগিয়ে দিল শ্বেতার হাতে।

“শুভ চকলেট দিবস। নাও তোমার সমস্ত প্রিয় চকোলেট এরৎমধ্যে সাজিয়ে এনেছি। অভিযোগ করার সুযোগ আমি আর দেব না।”

চকোলেট পেয়ে শ্বেতা হু হু করে কেঁদে ভাসিয়ে দিল। থাকতে না পেরে সোহোম জড়িয়ে ধরলো শ্বেতাকে।

অনেক দূর থেকে একটি ছেলে লক্ষ্য করছিল। কাছে এসে দু’টো ভিক্ষা চাইল সোহমের কাছে। আধময়লা,ছেঁড়া জামা, উস্কোখুস্কো চুল কিন্তু চোখ দু’টো মায়ায় ভরা। সোহম ওর দিকে  একশো টাকার একটা নোট বার করে দিলো। ছেলেটা পেয়ে খুব খুশি। চলে যাচ্ছিল হঠাৎ করে শ্বেতা ডাকলো —

“এই শোন।  এদিকে আয় তো।”

ভয়ার্ত চোখে গুটি গুটি পায়ে ছেলেটা হাজির হলো শ্বেতার সামনে।
শ্বেতা বললো “আজকে কি দিন জানিস?”
ছেলেটি বললো, “না”
“চকলেট দিবস। বুঝেছিস।”
ছেলেটি বললো, “দোকানে সাজানো থাকে দেখেছি। কি সুন্দর দেখতে। কিন্তু কোনোদিন খেতে পাইনি তো, তাই জানতেও পারিনি জিনিসটা কি?”
শ্বেতা বললো, “তাইতো এটা তোর জন্য।”

বিস্ফোরিত চোখে ছেলেটা একবার সোহম আর একবার শ্বেতাকে দেখছে। ও ভাবতেই পারছে না এই দুর্লভ বস্তুটা কোনোদিন ওর হাতে কেউ এভাবে দেবে। কাঁপা কাঁপা হাতে ছেলেটা চকলেটের বাক্সটা নিয়ে কিছুক্ষণ ওদের দিকে তাকিয়ে থাকলো। কি বলবে ছেলেটা নিজেই বুঝতে পারছিল না, কিছুক্ষণ পরে ওদের দিকে তাকিয়ে বললো—

“তোমরা যে ভীষণ ভালো দাদা দিদি” বলেই দৌড়ে চলে গেল।

আজ এই দিনে অদ্ভুত এক আনন্দে আর গর্বে সোহমের বুকটা ভরে গেল শ্বেতার জন্য। শ্বেতার এইরূপ সোহম কোনদিন দেখে নি। বাচ্চা মেয়েটার অভিমানটাই খালি দেখেছে সোহম এতদিন,  কিন্তু তার ভেতরে যে এত বড় হৃদয় আর একটা বিরাট মন লুকিয়ে ছিল, সোহম আজ তার চাক্ষুষ প্রমাণ পেলো । সোহম ভাবল ও তার চলার পথের জীবনসঙ্গিনীটিকে ঠিক বেচেছে। এক অদ্ভুত আনন্দে সোহম শ্বেতাকে বুকে টেনে নিলো।

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page