বাজীকর (পর্ব-১)
-অযান্ত্রিক
“আজকে কলকাতা আর ব্যাঙ্গালোরের খেলায়, কার উপর টাকা লাগালি রে বিনোদ?” চায়ের গেলাসটা হাতে নিয়ে পাশের বেঞ্চিতে বসতে বসতে বললো সুনন্দ।
“লাগাইনি কোনো টাকা, টাকাই নেই পকেটে, লাগাব কথা থেকে, তবে লাগালে কলকাতার উপর লাগাতাম, দেখলাম দশ টাকায় পনেরো টাকা দিচ্ছে, লেগে গেলে ভালো দাঁও হবে কিন্তু সুনন্দ দাদা” বেশ আগ্রহ নিয়েই বলল বিনোদ।
“না ভাই, আমার ওসব বাজি লাগিয়ে কাজ নেই, অমন সাধও নেই, এমনিতেই পাথর চাপা কপাল, বাজিমাত করার মত ভাগ্যের জোরও নেই” হাসতে হাসতে বলল সুনন্দ।
“এই যে, এই কথাটা একদম লাখ টাকার কথা বলেছ সুনন্দদা, বিনোদের মত ভাগ্য পাওয়া দুস্কর, শালা আমাদের একশোয় একটা লেগে যায় আর বিনোদের একটাই মিস হয়। তবে, তাতে দেখেছ ওর কিন্তু একটুও অহঙ্কার নেই। নাহলে এতো দিনে আমাদের এই উস্তিতে ও এতোদিনে কি না করে ফেলত, আমাদের সাথে এই চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিত না,” সুনন্দর কথায় হাসতে হাসতে সায় দিয়ে বললো তীর্থঙ্কর।
“তোমরা ওকে জিততে দ্যাখো কিন্তু কোন দিন লক্ষ্য করে দেখবে, বিনোদ কিন্তু খুব বেশী টাকা জেতে না, তার মানে বিনোদ বিনোদের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে খেলে না, একটুও লোভ নেই কিন্তু ওর”।
তীর্থাঙ্করের কথার শ্লেষটুকু এড়িয়ে গিয়ে সুনন্দ বললো, “হ্যাঁ রে বিনু তুই তো আগে এসবের মধ্যে থাকতিস না, এর মধ্যে তুই এলি কি করে?”
“ধুর, কি যে বলো না নন্দদা, ওসব কিছু না গো, আমি তো আন্দাজেই ঢিল ছুঁড়ি তোমাদের লাগে না, আমার ধারে কাছে লেগে লুগে যায়, এইটুকুই তীর্থাঙ্কর শুধু শুধু আমার পিছনে লাগে গো” একটু অপ্রস্তুতে পড়ে গিয়ে বললো বিনোদ।
উস্তির, শিবকালিতলা বাসস্ট্যান্ডের মনিশদার চায়ের দোকান হল এই ছেলেগুলোর আড্ডার জায়গা। বিনোদ কলকাতার একটা বেসরকারি সংস্থায় ডেলিভারির কাজ করে, তীর্থাঙ্করও বেসরকারিতেই কাজ করে, তবে ম্যানেজার, কলকাতাতেই। সুনন্দ একটা কোম্পানির এ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্ট হেড। রোজ অফিস থেকে ফেরার সময় এখানেই বাস থেকে নেমে কিছু কখন চায়ের আড্ডা চলে ওদের, মানে বিনোদ, তীর্থাঙ্কর, অমৃত, আর সুনন্দ। কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে তারপর যে যার বাড়ির দিকে চলে যায়। মনিশদার দোকানেই সাইকেল রাখা থাকে ওখান থেকে নিয়েই বেড়িয়ে পরে ঘণ্টা দুয়েক আড্ডা দিয়ে। আজ এখনো অমৃত আসে নি, আইপিএল চলছে আর উঠতি বয়েসের ছেলেদের আড্ডায় মেতে ওঠার জন্য এর চেয়ে ভালো বিষয় কিছু নেই। এরা সবাই ক্রিকেট খেলা অন্ত প্রাণ, আর এখন ইন্টারনেট আর টিভির দৌলতে যে আইনি জুয়া “জিতবে কে?” আর “স্বপ্নের এগারো” খেলা চলে এরা তাতেও প্রায় এক আত্মা বলা যেতে পারে। আজ এদের আড্ডা শুরুই হয়েছে , কলকাতা আর বেঙ্গালরের খেলা নিয়ে, আর তাতে কে কার উপর কত টাকা লাগিয়েছে আর সে কেন জিতবে সেটা নিয়ে চুলচেরা আলোচনাও চলছে চরমে। তীর্থাঙ্কর, বিনোদ, আর অমৃত তিনজনেই নিয়মিত খেলে থাকে, যদিও তাতে দোষের কিছু তো নেই এতো এখন সবাই খেলছে। তবে, আলোচনায় নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে বিনোদ নিয়মিত খেলে আর জিতেও যায়, তাই বলে তীর্থাঙ্করকে কম ভাবলে ভুল করবেন মাননীয় পাঠকবৃন্দ । তীর্থাঙ্করও খেলে, তবে জেতে কম, হারে বেশী। দুজনেই অল্প পয়সার বাজী ধরে, যাতে হেরে গেলেও বেশী কষ্ট না হয়, কিন্তু স্বপ্ন দেখে একদিন বিশাল একটা বাজী জিতে তারপর পায়ের উপর পা তুলে আরামে দিন কাটাবে, আর এই ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে দিন কাটাতে হবে না । ওরা নিজেরা আলোচনা করলেও বিনোদ কোনোদিন বলে না কোন দলের উপর টাকা লাগিয়েছে, শুধু যখন ফলাফল বেরোয় তখন দেখা যায় বিনোদ জিতেছে কিছু টাকা। যদিও তাই নিয়ে কোনো মনোমালিন্য হয় না বন্ধুদের মধ্যে। শুধু কি ক্রিকেট? হকি, ফুটবল, ভলিবল মেয়েদের ক্রিকেট সব কিছুতেই ওরা বাজী ধরে যেতে থাকে, আর বিনোদ এই সব বাজিতে জিতেও যায়। ওদের আলোচনা চলাকালীন, বাস থেকে নেমে আসলো অমৃত, এসেই স্বভাব সিদ্ধ ভঙ্গিতে বললো, “কি ভাই লোগ সব আরাম আছে কিনা?” তীর্থাঙ্কর মাথা না ঘুরিয়েই বললো “আরে অমৃত যে আয় আয়, মনিশদা আরও একটা চা, শুধু চিনি বেশী, না হলে এক্ষুনি অমৃতবানিতে নাকানিচোবানি খেতে হবে“
“চুপ কর, শালা, আসতে পারলাম না, পিছনে লাগা শুরু করে দিলো, বেটিং কিং বিনোদ, আজ কার উপর বাজী ধরলি ভাই একটু বল, আমি তো কলকাতায় একশো লাগালাম, দেখি কত আসে? নাকি পুরোটাই ডুবে যায়” বেঞ্চিতে একটা কোনা দখল করে বসতে বসতে বললো অমৃত।
‘আজ আমি খেলছি না গো দাদা, পকেট একদম খালি, আর আমি ধার করে খেলি না সে তো তুমি ভালোই জানো” অমৃতের কথার উত্তরে বললো বিনোদ।
“তা বটে! জাঙ্গিয়ার আবার বুকপকেট, খেলছে জুয়া তার আবার প্রিন্সিপাল, পারিসও মাইরি, কত যে রঙ্গ দেখবো দুনিয়ায়, ওরে ভাই রে। এদিকে, আমি গত তিনটে খেলায় একটা টাকাও জিততে পারিনি এবার কালী পুজোয় মদের খরচা তুলবো কি করে, কে জানে?” বেশ চিন্তিত মুখেই বললো অমৃত।
সুনন্দ হেসে বললো, “তাহলে তো ভালই হলো বলো, জিততে না পারলে মদ খাওয়াটা অন্তত আটকাবে, ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন, আমায় দ্যাখো, আমি মদ খাইও না টাকা লাগাবার দরকারও পরে না চিন্তাও নেই”
“হ্যাঁ, সবাই তো তোর মতো গোপাল ঠাকুর হয় না, ভাই এই লক ডাউনে আমার ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ছয় মাস ধরে সত্তর পার্সেন্ট স্যালারি দিচ্ছে, এবার পূজ্যয় বোনাসও হয় নি। বাকি সব খরচ এদিক থেকে ওদিক থেকে ম্যানেজ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এই খরচটা কিছুতেই হচ্ছে না। আগে অফিসে কাজের বাইরে এদিক ওদিকে খেপ মেরে বাড়তি শখ শৌখিনতাগুলো করা যেতো, কিন্তু এখন করোনার চক্করে সেগুলোও বন্ধ। তাও মাঝখানে বাড়ি থেকে অফিস যাওয়ার খরচ দিচ্ছিল অফিস থেকে, ট্রেন চলছিল না বলে। এখন ট্রেন চলছে, আমাদের ম্যানেজার’খানাও শালা শকুন, যেই শুনেছে ট্রেন চলছে ওমনি বসকে গিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, আর যাতায়াত খরচও বন্ধ” বেশ রাগের স্বরেই বলল অমৃত।
“যা বলেছিস ভাই,” অমৃতের কথায় সায় দিয়ে বললো তীর্থাঙ্কর। “এই করোনা পুরো গুষ্টির কাঁথায় আগুন দিয়ে দিলো মাইরি, আগে ডাল ভাত জুটিয়েও শখ শৌখিনতা করা যাচ্ছিলো, কিন্তু এখন এই লক ডাউনে নুন আনতেই পান্তা ফুরিয়ে যাচ্ছে, বাড়তি খরচের কথা ছেড়েই দে, এখন ‘স্বপ্নের দল কিম্বা জিতবে কে’ ছাড়া এই গরীব গুর্বো মানুষগুলোর কিছু করা অসম্ভব। বেশী টাকা লাগে না, কাজেই হেরে গেলেও খুব কষ্ট হয় না, সবাই তো আর বিনু নয়? সেই কবে থেকে বারোর জায়গায় ছয় হাজার টাকা মাইনে পাচ্ছে, কিন্তু বউ মা বাবা ছেলে পুলে নিয়ে সংসার চালিয়ে তো যাচ্ছে, সে তো এদের দৌলতেই। যাই বল, সেই বেআইনি সাট্টা মটকা এসব তো খেলছি না, না বউয়ের গয়না বেচে খেলছি “
“সে তোর যুক্তি না হয় মানলাম, কিন্তু এটাও তো ঠিক এই খেলার ঠ্যালায় তোদের কষ্টের উপার্জনগুলো বেরিয়ে যাচ্ছে” বললো সুনন্দ।
“ সে তো বিড়ি খেয়ে, মাল খেয়েও বেড়িয়ে যায়, তবে তোমার কথাও ভুল নয়, সবসময় যে টাকা চলে যায় তাতো নয় ফিরে আসেও তো অনেক বার। ছাড়ো এসব নিয়ে আর চব্য করতে হবে না দেরী হয়ে যাচ্ছে, আজকাল বাবা একটু দেরী হলেই বড্ড ব্যস্তও হয়ে পড়ে, তারপর খুঁজতে না বেরিয়ে পড়ে“ বলে উঠে দাঁড়ালো বিনোদ।
“কিন্তু, বিনু প্লীজ বল না কলকাতা জিতবে তো রে, নাহলে অনেকগুলো টাকা ডুবে যাবে” কাতর ভাবে বললো অমৃত, উঠে পড়া বিনোদের হাতটা টেনে ধরে।
“এ মাহ্, আমি কি করে বলবো, বলো দেখি? আমি তো আর হাত গুনতে পারি না, যেটা বলি তোমাদের মতই আন্দাজে, তার উপর হাতে টাকা নেই, বলে আমি কোন খেলাতেই টাকা লাগাইনি, বিশ্বাস না হলে তীর্থাঙ্করকে জিজ্ঞাসা করে দ্যাখো” নিজেকে বাচাবার একটা আর্তি ফুটে উঠলো বিনোদের গলায়।
“ঠিক আছে, বলবি না তো? কাল যদি দেখি উইনার লিস্টে তোর নাম, তখনই বুঝতে পারবি কত ধানে কত চাল, মনে আছে তো এখনো হাজার দুয়েক টাকা আমি পাই তোর কাছে। আম্ফানে বাড়ি সারানোর জন্য দশ নিয়ে ছিলি, তারই দুই বাকি এখনো” বেশ প্রচ্ছন্ন হুমকির স্বরেই বললো অমৃত।
“এই দ্যাখো, ওসব এর মধ্যে আনার কোন দরকার আছে কি? বন্ধু হয়ে বন্ধুকে সাহায্য করেছিলি তাই বলে এই ভাবে সবার সামনে অপদস্থ করার কোনো মানে হয়?“ খুব বিরক্তি নিয়ে কথাগুলো বললো সুনন্দ।
“না না সত্যি, সেদিন অমৃতদা যদি সাহায্য না করতো, তাহলে আমাকে পুরো পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নীচে রাস্তায় বসে কাটাতে হতো। তার জন্য আমি আজীবন ওর কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো, তবে অমৃতদা বাকি দু’হাজার আমি তোমাকে বলেইছিলাম সামনের মাসে মাইনে পেয়েই দিয়ে দেবো। ভুলে যাবো কেন? আর আজ পর্যন্ত একবারও কি আমি ডেট মিস করেছি? আর তুমি আমাকে কেন বিশ্বাস করছো না? সত্যি আমি আজ খেলছি না, জানিও না কে জিতবে? শুধু শুধু জোর করছো কেন?“ বলে বেশ ক্ষুণ্ণ হয়ে সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে গেলো বিনোদ।
বিনোদকে বেড়িয়ে যেতে দেখে পিছন থেকে চীৎকার করে বললো অমৃত “মনে থাকে যেন কথাটা, বন্ধুর থেকে দরকারে হেল্প নিবি আর হেল্প করতে বললে যত নখরা..”
“দ্যাখ অমৃত ও হয়তো সত্যি বলছে, আন্দাজেই ও বাজী ধরে, লেগেও যায় কাকতলীয় ভাবে। না লাগলেও ওর পয়সাই নষ্ট হয় কিন্তু একবার ভেবে দ্যাখ ওর আন্দাজে ভর করে তুই টাকা লাগালি আর টাকা জলে চলে গেলো, তাহলে বিনু নিজের কাছে নিজে অপরাধী হয়ে যাবে না? ওইজন্যই ও হয়তো বলতে চাইছে না” অমৃতের রাগের পরিপ্রেক্ষিতে কৈফিয়ত দিয়ে বললো সুনন্দ। “আমিও এগোই, ভেবেছিলাম বিনুর সাথেই চলে যাবো কিন্তু তোর চুলকানিতে ও আগেই চলে গেলো, এবার এতোটা রাস্তা একাই যেতে হবে“ বলে সুনন্দ সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। তীর্থাঙ্কর মোবাইলে একবার সময়টা দেখে বললো “না রে ভাই আমিও এগোই, নটা থেকে খেলা শুরু হবে তার আগে বাড়ি গিয়ে খেয়ে নিতে হবে, তুইও বাড়ি যা আর বসে বসে বিড়ি চুষতে হবে না।”
“হ্যাঁ চল আমিও এগোই” বলে অমৃত আর তীর্থাঙ্কর একসাথে বেড়িয়ে পড়লো, সেদিনকার মতো আড্ডাও ভেঙ্গে গেলো মনিশদার দোকানে।
শিবতলা মোড় থেকে চণ্ডী মণ্ডপ হয়েই যেতে হয় বিনোদের আর সুনন্দর বাড়ি। চণ্ডীমণ্ডপ থেকে একটু এগিয়েই হল গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, সাধারণত বিনোদ আর সুনন্দ ঐ রাস্তায় ফেরে, আজ চণ্ডীমণ্ডপ পার করতেই দেখল বিনোদ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনেই দাঁড়িয়ে, সাইকেল নিয়ে।
“কি রে? তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে এলি, বাড়ি গেলি না?”
“যাচ্ছিলাম তো, কিন্তু বউ ফোন করে বললো, পিসির খুব শরীর খারাপ পাড়ার কয়েকজনকে নিয়ে ওরা এখানেই পিসিকে নিয়ে আসছে, তাই আমি আর গেলাম না। আসলে পিসির কেউ নেই কোনো কুলে যা করতে হবে আমাকেই করতে হবে। ও তুমি ভেবো না, তোমার দেরী হয়ে যাচ্ছে, তুমি এগোও, ওরা তো আসছে টোটোতে করে তাই দাঁড়িয়ে আছি।”
“ওঃ ঠিক আছে, আমি এগোচ্ছি তাহলে, তবে কোন দরকার পরলে ডাকিস, তেমন হলে রাতে বউমা আর তুই আমার ওখানে চলে আসতেও পারিস, আমি অনেক রাত অব্ধি জেগে থাকি, তার উপর আবার আজ খেলাও আছে” বললো সুনন্দ।
“ঠিক আছে নন্দদা, সে রকম হলে আমি তোমায় ফোন করে নেবো। ঐ যে পিসিকে নিয়ে এলো বোধ হয়, আমি ওদিকে এগোই তুমি বাড়ি যাও দাদা” বলেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রর ভিতরের দিকে চলে গেলো বিনোদ।
সুনন্দ সাইকেল নিয়ে বাড়ির দিকে এগোলো। সাইকেল নিয়ে যেতে সুনন্দ মাথায় ঘুরতে লাগলো আড্ডার সেই প্রশ্নটাই, সত্যিই কি বিনোদ জ্যোতিষ জানে? ও নিজে ওদের সামনে বললেও ও তো নিজেই ঐ জুয়ার নেশায় ডুবে আছে। নেহাত বেনামে খেলে বলে অমৃত, বিনোদ, তীর্থঙ্কররা জানতে পারে না। যাইহোক, বাড়ি ঢুকে হাত পা ধুয়ে চা খেয়ে নিজের ঘরে ঢুকে বসলো। হাত ঘড়িতে দেখল প্রায় সাতটা বাজে এখনো খেলা শুরু হতে বেশ কিছুক্ষণ বাকি, ও ল্যাপটপ খুলে দেখতে লাগলো জিতবে কে, কি রেট যাচ্ছে, তখন তো বিনু বললোই কলকাতার দশ টাকায় পনেরো টাকা দিচ্ছে এখন কত হয়েছে। ওমা এতো ভালোই বেড়ে গেছে এখন দশ টাকায় পঁচিশ দিচ্ছে। বিনু তো বলছিলই কলকাতায় লাগাতে, তাহলে কি কলকাতায় ?
ঠক ঠক ঠক ঠক দরজায় টোকার আওয়াজে ভাবনায় ছেদ পড়ল সুনন্দর, “মাসিমা, নন্দদা আছে?” বুঝতে পারলো মা দরজা খুলেছে, তাই প্রশ্নটা মাকেই করলো কেউ। সুনন্দ বেড়িয়ে দেখতে যেতে যেতে শুনলো মা বলছে, “বাবু, বিনু এসেছে দ্যাখ, তোকে খুঁজছে? হ্যাঁ আছে রে, ওর ঘরে যা।” আর তার সাথেই দরজা বন্ধ করার শব্দও পেল। সুনন্দ পর্দা সরিয়ে বেরিয়ে এসে “আরে বিনু, কি হয়েছে, বউমা কই?” জানতে চাইলো।
“নন্দদা খুব বিপদে পড়ে তোমার কাছেই ছুটে এসেছি। পিসির স্ট্রোক হয়েছে, একটা ইঞ্জেকশান এক্ষুণি দিতে হবে, কিন্তু সেটার দাম ছয় হাজার কিন্তু ওতো টাকা আমার কাছে নেই, তুমি যদি আমায় কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করতে পারো? তাহলে পিসির প্রাণটা বাঁচাতে পারি, অমৃতকে বলেছিলাম ও আমাকে দেবে না বলে দিলো মুখের উপর” খুব কাতর স্বরে বললো বিনোদ।
“আরে দেখছি, দেখছি, তুই একটু শান্ত হয়ে এসে বস তো আগে, আয় ঘরে আয় তারপর দেখছি কি করা যায়” বলে ঘরের ভিতর নিয়ে গেলো বিনোদকে।
“এইভাবে তোমার কাছে টাকা চাইতে খুবই লজ্জা লাগছে আমার কিন্তু বিশ্বাস করো, আমার কাছে ওতো টাকা নেই, মায়ের দিব্যি করে বলছি, যত তাড়াতাড়ি পারি তোমার টাকা আমি শোধ করে দেবো“ ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল বিনোদ। সুনন্দ অদ্ভুত ভাবে একবার তাকাল বিনোদের দিকে তারপর একটা লুব্ধ স্বরে বলল “টাকা তো তুই ইচ্ছে করলেই যোগাড় করতে পারিস, তোর লাগান দাঁও তো কোনোদিন ফস্কায় না। একটা বাজি খেললেই তো মুশকিল আসান।”
কথাটা যেন তীরের মতো বিঁধে দিলো বিনোদকে। একটা আত্ম বিশ্বাসের হাসি দিয়ে বললো বিনোদ “তার মানে তুমিও বিশ্বাস করো, তাহলে ঠিকই বিশ্বাস করো, আমি খেলার আগে জেনে যাই কে জিতবে কিন্তু তার একটা শর্ত আছে, টাকাটা আমার নিজের হতে হবে, আর প্রয়োজনটাও তেমনই জরুরি হতে হবে, অন্যের টাকায় খেললে আমার পক্ষে জেতা সম্ভব নয়। বলতে পারো গুরুর আদেশ।”
চলবে………..