বাজীকর (পর্ব -২)
-অযান্ত্রিক
“আজকে কি তুই বিপদে পরিস নি? তাহলে খেলতে অসুবিধা কোথায়“ জানতে চাইলো সুনন্দ।
“আমার কাছে টাকা নেই গো দাদা, আর যা আছে সেটা দিয়ে খেললে অমৃতদা জানতে পারবে, আমি মিথ্যেবাদী হয়ে যাবো, তার থেকেও বড় কথা কাল সকাল হতেই চুড়ান্ত অশান্তি করবে, তাই তুমি ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।”
বিনোদের কথায় একটা বিদ্যুৎ খেলে গেলো সুনন্দর মাথায় “তাহলে একটা কাজ কর, তুই তোর নামে খেলিস না, আমার হয়ে খেল, যা জিতবি সেটা তোর, তোকে আর শোধ করার চিন্তায় থাকতে হবে না আর অমৃত জানতে পারবে না“ বললো সুনন্দ।
“আমি জানতাম তুমি আমায় জুপিটারের হয়ে খেলতে বলবে, ওটা যে তোমার আই.ডি, সেটাও জানি গত সপ্তায় দিল্লীর খেলায় তুমি এগারো হাজার টাকা জিতেছ সেটাও জানি“ খুব নিঃস্পৃহভাবে বললো বিনোদ।
“তাহলে কি বলছিস? খেলবি? আমার হয়ে জিতলে জেতার টাকা তোর, আর মিনিট দশেকের মধ্যে এন্ট্রি বন্ধ হয়ে যাবে, তারপর সুযোগ থাকবে না“ খুব উৎসাহ নিয়ে বললো সুনন্দ।
বিনোদ একটুক্ষণ চুপ করে থেকে পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে একটা নম্বর ডায়াল করে ফোনটা কানে দিলো “মালতি, পিসি কেমন আছে? হ্যাঁ, চাপ নেই, ব্যবস্থা হয়েছে আমি আসছি একটু পরেই, তুমি ইঞ্জেকশনটা নিয়ে নাও” বলে সুনন্দর দিকে তাকিয়ে বললো, “আমি রাজী, কিন্তু টাকাটা নগদ দেবে তো এখন?”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ সে আর বলতে, আমার কথায় ভরসা হচ্ছে না, এবার বলতো কলকাতায় কত লাগাবো?” উত্তেজিত হয়ে বললো সুনন্দ।
বিনোদ একবার চোখ বন্ধ করে চুপ করে রইলো, সারা ঘরের আলোগুলো একবার আচমকা দপদপ করে উঠলো, আর সেই সঙ্গে পুরো ঘর একটা বিশ্রী গন্ধে ভরে উঠলো এই গন্ধ সুনন্দের চেনা। শ্মশানের গন্ধ, মরা পোড়ার গন্ধ এটা, আর সেটা বুঝতে পেরেই সুনন্দর বুকটা একটা অজানা আশঙ্কায় শিউরে উঠলো। আর তখনই “নন্দদা কলকাতার আজ রেট যতই বেশী থাক আজ কলকাতা হারছে। ব্যাঙ্গালোরে দশে কুড়ি দিচ্ছে, ওখানে ছয় হাজার লাগাও আর স্বপ্নের দলে যাদের নাম বলছি তাদের নিয়ে দল বানাও, তাড়াতাড়ি করো আর মাত্র পাঁচ মিনিট আছে। সুনন্দ চমকে ওঠে, দেখলো কথাগুলো খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলছে বিনোদ কিন্তু গলার স্বরটা বিনোদের স্বাভাবিক বিনোদের মতো নয়, যেন বহুদূর থেকে ভেসে আছে হালকা, ফ্যাশফ্যাশে, পরিচিত আর বিনোদের চোখ দু’টো ভাটার মতো জ্বলছে ।
সুনন্দ কোন প্রশ্ন করলো না, ঐ অপরিচিত স্বর যেমন বললো ঠিক তেমন করে গেলো। ওর সিলেকশন শেষ হতেই, এন্ট্রি বন্ধ হয়ে গেলো। আবার সে স্বর ভেসে এলো সুনন্দর কানে কিন্তু এবার স্বরে আদেশের ভাব খুব স্পষ্ট ”আমার টাকাটা দিয়ে দিতেই পারো, আমি যখন বলেছি তখন তুমি জিতবেই, বিনোদ কোনোদিন হারে না, চালাকির কোনো চেষ্টাও করতে যেও না, মাসিমা রান্নাঘরে রুটি করছেন আর উনি জানেনও না সিলিন্ডারের থেকে গ্যাস লিক করছে। আমি অপকার করা ছেড়ে দিয়েছি, কিন্তু শাস্তি এখনো দিতে পারি“
“না না আমি এক্ষুণি টাকাটা দিচ্ছি, আমায় ভুল ভাবছিস তুই, একটু দাঁড়া আমি টাকাটা নিয়ে আসছি?” বলে বিনোদের কাঁধে হাত রেখে আশ্বস্ত করতে গিয়ে সুনন্দ দেখলো বিনোদের শরীর থেকে প্রচণ্ড তাপ বেরোচ্ছে আর চোখ দু’টো সেই লালই হয়ে আছে। সুনন্দ প্রচণ্ড উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগ নিয়ে ওর ঘর থেকে বেরিয়ে, রান্নাঘরের এসে দরজা ঠেলে ঢুকতে গিয়ে দেখলো দরজা ভিতর থেকে বন্ধ, আর ভিতরে খুব জোরে রেডিও চলছে, সুনন্দ চিৎকার করে উঠলো, “মা..মা’ কিন্তু কোনো সাড়া এলো না। তার বদলে ওর ঘর থেকে বিনোদ বেড়িয়ে এসে দাঁড়ালো, “সুনন্দদা, আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।”
“দ্যাখ না মা দরজা খুলছে না, ঠিক আছে এক মিনিট“ বলে বিনোদের পাশ দিয়ে সুনন্দ নিজের ঘরে ঢুকে আলমারি থেকে টাকাটা বার করে এনে বিনোদের হাতে দিলো।“ দাদা ট্রেলার দেখেই তোমার আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হয়ে যাচ্ছে, পুরো সিনেমা দেখালে কি করতে গো? আমি যদি এখান থেকে অতো দূরে হওয়া খেলায় কি ঘটবে বলতে পারি তাহলে আমার থেকে এক হাত দূরে থাকা তুমি কি কি করবে একটু পরে সেটা জানতে পারবো না? আমি জানতাম তুমি টাকাটা নিয়ে ঘোরাতে, খেলা শেষ না হলে তুমি টাকা দিতে না, তাই এই নমুনা দিলাম, টাকাটার খুব দরকার দাদা” টাকাটা হাতে নিয়েই বললো সেই ফ্যাশফ্যাশে স্বর। “এই নে ভাই তোর টাকা, শুধু একটাই অনুরোধ আমায় ভুল বুঝিস না ভাই“ কাতর হয়ে বললো সুনন্দ। বিনোদ একটা শ্লেষের হাসি দিয়ে বললো “চিন্তা করো না দাদা, রাজার ভুল হয় না, এতো বছরে হয়নি, আজও হবে না“ সুনন্দর সে সব কথা কানে গেলো না , বিনোদ কে সরিয়ে দৌড়ে রান্নাঘরের কাছে যেতেই দেখলো, মা ওর ঘরের দিকেই আসছেন।“ বাবু দেখ না, রান্না ঘরে বড্ড গ্যাসের গন্ধ বেরচ্ছে, বুঝতেই পারছি না কোথা থেকে আসছে” কথাগুলো সুনন্দর কানে যেতেই ধরে প্রাণ এলো যেন সুনন্দর, তার সাথে দুশ্চিন্তাটা বদলে গেলো একটা অজানা ভয়ে।
“থাক, তোমাকে আর কিছু করতে হবে না, তুমি আমার ঘরে গিয়ে বসো তো, আমি বাইরে থেকে রুটি আর তরকারী কিনে আনছি” বলে সুনন্দ মা’কে ঘরে একরকম জোরে করে ঢুকিয়ে দিল, “নন্দদা আমি আসি, আজ তুমি আমার যা উপকার করলে আমি জীবনে ভুলবো না, প্লীজ কাউকে কিছু বোলো না, জানোই তো” বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো বিনোদ “হ্যাঁ হ্যাঁ তুই আয়, আর পিসি কেমন থাকে কাল জানাস একবার’ কিছুটা আপদ বিদায় করার ঢঙ্গেই বলে উঠলো সুনন্দ। তার পর নিজের ঘরে ঢুকে পাঞ্জাবীটা পড়তে পড়তে মাকে বললো, “তুমি বসো, আমি কানাইদার দোকান থেকে রুটি আর আলুর দম নিয়ে আসছি, রান্নাঘরে যেতে হবে না, আমি রান্নঘরের জানলা দরজা খুলে রেখে যাচ্ছি“
কানাইদার দোকানে যেতে যেতে, ভাবতে লাগলো ওর সাথে একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো। বিনোদ তো ওর কাছেই দাড়িয়ে ছিল, তাহলে এসব ও করলো কখন? নাকি ও আগেই ঘটিয়ে রেখে ছিল ওর থেকে পয়সা বার করার জন্য। দোকানে বেশ ভিড় রয়েছে তাও কোনো রকমে অর্ডারটা দিয়ে, বাইরে এসে দাঁড়িয়ে মোবাইলে খেলার রেজাল্ট দেখবে বলে মোবাইলটা পকেট থেকে বার করলো। ‘কি ব্যাপার, সুনন্দদা মাসিমার কি শরীর খারাপ তুমি রুটি নিতে এসেছ?” শুনে মুখটা তুলতেই দেখলো অমৃত দাড়িয়ে।
“না না মার শরীর ঠিকই আছে, বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডারের থেকে লিক করছে, এই রাতের বেলায় লোক পাব কোথায়, তাই মাকে বললাম আজ রুটি বাইরে থেকেই নিয়ে আসি। ছাড় ওসব কথা, তোর খেলার কি খবর“ জানতে চাইলো সুনন্দ।
“আর খেলা, শালা আমার ব্যাড লাকটাও খারাপ মাইরি, কলকাতায় লাগালাম, ভালো রানও করলো কিন্তু ব্যাঙ্গালোর যা কেলান কেলাচ্ছে হয়তো দেখবে এক্ষুণি খেলা শেষ হয় যাবে” একরাশ হতাশা নিয়ে বললো অমৃত, আর তখন টিং করে একটা ম্যাসেজ ঢুকলো অমৃতের ফোনে, ফোনে ম্যাসেজটা দেখে চরম বিরক্তি নিয়ে বললো, “বললাম না, শালা ডুবে গেলো, ভাগ্যিস বিনোদের কথায় কলকাতায় বেশী টাকা লাগাইনি, তাহলে আরও ডুবতাম, এই জুপিটার ব্যাটা কে, কে জানে? মালটা ভালো জিতলো। এ নির্ঘাত ওদের নিজের লোক।“
“নন্দদা তোমার খাবার রেডি নিয়ে যাও“ দোকান থেকে একটা ছেলে এসে জানাল সুনন্দকে। “হ্যাঁ, চল নিচ্ছি, অমৃত এলাম রে ভাই beter luck next time“ বলে তড়িঘড়ি এগোতে লাগলো সুনন্দ, ওর ফোনেও একটা ম্যাসেজ এসেছে কিন্তু অমৃতের সামনে সেটা বার করে দেখার সাহস পাচ্ছে না সুনন্দ। রুটির প্যাকেট নিয়ে দোকান থেকে একটু এগিয়ে এসে পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে দেখল ম্যাসেজ এসেছে জিতবে কে থেকে, congratulation , you have won rs 13000 towards ZITBE KE with a bonus of rs 1000 is credited to your registered bank account“ দেখে সুনন্দ বুঝতেই পারছে না খুশী হবে কি হবে না,এতো অবিশ্বাস্য।
‘চলো নন্দদা আমারও হয়ে গেছে, একসাথেই যাই।“ পাশ থেকে এসে বললো অমৃত, “জুপিটার ব্যাটার ভাগ্য খুব ভালো, আজ যদি আমাদের বিনু খেলত তাহলে জিতত কিন্তু বিনুই। আমি রাগ করছিলাম ঠিকই কিন্তু জানো তো বিনোদকে আমি মনে মনে খুব শ্রদ্ধা করি। ওর মতন ক্ষমতা থাকলে আমরা কবেই ভেসে যেতাম, ও কিন্তু যায়নি। আর আমি অবাক হয়ে যাই ওর সংযম দেখে, তুমিও লক্ষ্য করে দেখবে ওর কোনো বদগুণ নেই, এমনকি কোনো বিলাসিতাও নেই। সব থেকে বড় কথা, হয়তো সেটা তুমিও জানো, এই বাজারেও টাকা পয়সার লোভ ওর নেই, ওর ঠিক যত টুকু দরকার ঠিক ততটুকুর জন্যই খেলে, যদিও কোন বোনাস বা বেনিফিট পায় সে টাকাটা ও মনিশদা বা এমন অনেককে দিয়ে দেয়। অন্তত টাকা পয়সার ব্যাপারে, ও যাকে যা কথা দেয় সেটা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে। আর শুনলে অবাক হয়ে যাবে, আমরা মস্তি করার জন্য টাকা লাগাই, আর বিনু ওর টাকার প্রয়োজনেই টাকা লাগায়। ঐ জন্যই হয়তো বিনু জেতে প্রতিবার, আর আমরা হেরে যাই। ছাড়ো ওসব, বাড়ি এসে গেছে, দেখো হয়তো মাসিমা ঘুমিয়ে পড়েছে। বিনু যা বলে তাই হয়, এই সব ক্ষেত্রে, এবার বুঝলে তো, আজ যা এক্সট্রা টাকা পেলে সেটা বিনুকে সাহায্য করার পুরস্কার“ শেষের কথাগুলো কানে যেতেই সুনন্দ চমকে পাশে তাকাতেই দেখলো কেউ নেই ওর বুকের ভিতরটা আবার ধড়াস করে উঠলো। তড়িঘড়ি বাড়িতে ঢুকেই দেখল বসার ঘরে সোফায় মা ঘুমিয়ে পরেছে, ভাগ্যিস ঘরের একটা চাবি সুনন্দর সাথেই থাকে। দরজা বন্ধ করার শব্দ হতেই, মা বললেন “কি রে বাবু এলি? এতো দেরী হোল? তোর অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আমার একটু চোখ লেগে গেছিল। নাহ্ এবার তোর একটা বিয়ে দিতেই হবে।“
“নাও নাও অনেক হয়েছে আর অশান্তি বাড়াতে হবে না, চলো খিদে পেয়েছে, কাল অফিস বেরতে হবে তো নাকি আমায়?” কথাগুলো এড়িয়ে গিয়ে বললো সুনন্দ। খাওয়া সেরে, বিছানায় পিঠ দিয়েও সুনন্দর মাথায় একটা কথাই ঘুরছে, কি হচ্ছে এসব, এর ব্যাখ্যা জানা দরকারী। যদি কাল সকালে সম্ভব হয়, একবার বিনোদের বাড়ি যাবে, যদি লাগে তো ছুটি নিয়ে নেবে, বাড়ির গ্যাসের কাজটাও তো করাতে হবে। এই সব ভাবতে ভাবতেই এক সময় ঘুমে ডুবে গেলো সুনন্দ। সকালে ঘুম থেকে উঠতে বেশ দেরিই হল, ঘড়িতে দেখল প্রায় নটা বাজে, নাহ্ আজ আর অফিস যাওয়া হবে না, তখনই মনে পড়ল যাবেই বা কি করে বাড়ির গ্যাসের সমস্যাটা সমাধান না করে তো যাওয়াও যাবে না। সুনন্দ ফ্রেশ হয়ে জামা কাপড় পাল্টে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলো, গ্যাসের কাজ করার লোক মনিশদার কাছে আছে, যাই ওখানে গিয়ে বলে আসি যদি করে দিয়ে যায় এসে এখন, যাওয়ার পথে একবার বিনোদের পিসিকেও দেখে যাওয়া যাবে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাছাকাছি আসতেই বিনোদ আর বিনোদের বউয়ের সাথে দেখা হয়ে গেলো। বিনোদই এগিয়ে এসে বললো “সুপ্রভাত, নন্দদা, কাল তুমি যা উপকার করলে তার জন্য আমি সারা জীবন তোমার গোলাম হয়ে থাকলাম“ সুনন্দ কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই বিনোদের বউ বললো “আমি কাল আপনার ভাইয়ের কাছে সব শুনেছি, আজকের দিন কটা মানুষ এমন ভাবে পাশে এসে দাঁড়ায়। আপনাকে একবার অন্তত পায়ের ধুলো দিতেই হবে আজ আমাদের বাড়িতে, পিসিও এখন অনেকটা সামলে উঠেছে, চলুন কোন আপত্তি শুনবো না, একটু চা জল খাবার খেয়ে তারপর আপনার ছুটি। আপনার বাড়ির রান্নার গ্যাসেও তো শুনলাম কিছু সমস্যা হয়েছে, তার মানে সকালে চা’ও খাওয়া হয়নি। চলুন.. চলুন” সুনন্দ ভেবে দেখলঝ প্রস্তাব খারাপ নয়, কালকের ব্যাপারটাও খোলসা করে নেওয়া যাবে বিনোদের কাছ থেকে, “আচ্ছা চলো, তোমাদের সাথেই যাই, যদি রথ দেখা আর কলা বেচা দুটোই হয়, ফিরোজদার বাড়িও তো তোমাদের ওইদিকে, আরে যে মনিশদার দোকানের পাশে গ্যাসের কাজ করে ,ওকেও ধরে নিয়ে আসবো” বলে দু’পা এগোতেই কেউ যেন বলে উঠলো “হ্যাঁরে বিনু, তোর পিসি কেমন আছে এখন” সবাই পিছনে ফিরতেই দেখলো সাইকেলে বাজারের ব্যাগ ঝুলিয়ে পিছনেই আসছে ফিরোজদা। ফিরোজকে দেখেই সুনন্দ বললো, “ফিরোজদা যে! দেখা হয়ে ভালোই হলো, আমি তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম গতকাল রাত থেকে খুব বিপদে পড়ে গেছি, বাড়ির গ্যাসের সিলিন্ডারের থেকে খুব গ্যাসের গন্ধ আসছে, ভয়ে মা’কে রান্না ঘরে ঢুকতে দিইনি, তুমি যদি একবার এখন গিয়ে দেখে দাও খুব ভালো হয়।“
“সে আর তোমাকে বলতে হবে না, সকালে তুমি বেরবার পরেই আমি গেছিলাম, দেখে এসেছি, কিছু হয়নি শুধু রেগুলেটর লুজ হয়ে গেছিল। আমি বাজার থেকে তোমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে আসছিলাম, মাসিমা বারান্দা থেকে দেখে ডাকলেন, গিয়ে করে দিয়ে এসেছি, আমাকে বলে দিলেন তোমার সাথে দেখা হলে বাড়ি চলে যেতে, তুমি নাকি চা জল খাবার খেয়ে বেরোওনি?” বললো ফিরোজ। ফিরজের কথা শেষ হতেই বিনোদ বললো “পিসি ভালো আছে গো ফিরোজ দাদা, জানো তো কাল সুনন্দ দাদা না থাকলে কি যে হতো কে জানে”
”থাক, আর ওভাবে বলতে হবে না; চলতো চায়ের জন্য প্রাণটা হাঁকপাঁক করছে একেবারে” বিনোদের পিঠে একটা আদরের চাপড় মেরে বললো সুনন্দ।
“হ্যাঁ চলো তো চলো, তখন থেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে খালি কথা বলে যাচ্ছ” বিনোদকে তাড়া দিয়ে বললো বিনোদের স্ত্রী। ওর বলার ধরনে সবাই একসাথে হেসে উঠে বিনোদের বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করে দিলো।
বাড়িতে ঢুকে বিনোদ সুনন্দকে নিয়ে বাইরের ঘরে বসাল। সুনন্দকে বসার চেয়ারটা এগিয়ে দিতে দিতে বিনোদ বললো “তুমি কেন এসেছ মনে হয় আমি আমি জানি, আমার পিসির খবর ছাড়াও কালকের ব্যপারটা, তোমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না, তাই তো? তবে তুমি না এলেও আমি বিকালে যেতাম তোমার কাছে। আসলে এটা আমি তোমাকে বললেও কি ভাবে বলবো, অথবা তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানি না..“
“সব যখন বুঝতেই পারছিস তখন আর এতো কিন্তু কিন্তু করে কোন লাভ নেই, তবে এই টুকু ভরসা রাখতে পারিস, আমি বিশ্বাস করি দেবতা যদি থাকেন তাহলে অপদেবতাও আছে, কারণ অন্ধকার আছে বলেই আলো আছে। তাই জানতে চাইছিলাম রাজা কে!” বিনোদের কথা শেষ করতে না দিয়েই বললো সুনন্দ।
চলবে….