অণু গল্প

অণুগল্প- তফাৎ ও ফারাক

তফাৎ ও ফারাক
-অতীশ দীপঙ্কর

 

 

অনেক দিন পরে সেদিন হঠাৎ ছোটবেলার বন্ধু সোমেনের সঙ্গে দেখা হলো ট্রেনে। জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছিস? বোস আমার পাশে।
পাশে বসে বললো, একটা গাড়ি কেন, কতদিন আর ট্রেনে চেপে যাবি!
বেশ গর্বিত ভাবে বললো, দেখ মাধ্যমিকের পর বুঝেছিলাম আমার আর লেখাপড়া হবে না, তাই আজ আমার তিনটে প্রাইভেট গাড়ি, ছেলের তিনটে বাইক, তার মধ্যে একটা আবার কিনে দিয়েছি তিন লক্ষ টাকা দিয়ে! নোট বাতিলের সময় আমার কোন অসুবিধে হয় নি! আমার সব টাকা তো মাটিতে ছড়িয়ে রেখেছি আর যেটুকু তা ওই ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের সঙ্গে। আয়করের দেবতারা কোন ফুলে তুষ্ট আমি খুব ভালো জানি! তাই দেখ আমার কতগুলো বালি খাদ আছে, বিড়ির অতবড় ব্যাবসাও করেছি, অতগুলো ইট ভাটা চালাই সবাইকে কেমন ম্যানেজ করে! তোকে তখন কতবার বললাম ওসব ছাড়, আয় আমার সঙ্গে বালি খাদে লেগে পড়!
আজ একটা ভাঙাচোরা মোটরসাইকেল ছাড়া তোর কিছুই নেই! কেরানিদের মত তোর জীবনের স্রোত বইছে কেমন! এ জগতে টাকাই সব! টাকার গরমে শিক্ষাকে চাপা দেওয়া যায় বুঝলি?
তোদের মত শিক্ষিত মানুষ আর রাজনীতির লোকেরা আমায় কত তোষামোদ করে!
আমি এতক্ষণ মন দিয়ে সোমেনের কথা শুনছিলাম। ওর বিস্তারিত তথ্য ও সংস্কৃতির ভার আমাকে একটুও অবাক করেনি। আমার বাল্য বন্ধু সে, তাই খুব ভালো চিনি ও জানি; তার থেকেও ভালো জানা ও চেনা আছে আজকের অধিকাংশ পরিচিতের চলার পথ। আমি বললাম, ফারাক আছে রে অনেকখানি, তুই একদিন ঠিক বুঝবি।
হঠাৎ আমাদের স্টেশানে ট্রেনটি থামল, ও অফসাইডে নামতে চাইল, নামার আগে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, চল অফসাইডে নামি। আজকে ট্রেনটি অন্য প্লাটফর্মে দিয়েছে বলেই আমাদের বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটি উল্টোদিক দিয়ে নামলে একটু তাড়াতাড়ি হয়।
আমি বললাম, আমি কোনদিন অফসাইডে নামি নি, বুঝলি সোমেন তফাত খানিকটা ঠিক এখানেও।

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page