ধারাবাহিক- বাজীকর (পর্ব-৩)

বাজীকর (পর্ব-৩) 
-অযান্ত্রিক

 

 

“রাজা হলো, দিল্লীর ফিরোজ শাহ মাঠের কিউরেটর। মাঠ বানান, পিচ তৈরি করা এইসব ছিল ওর কাজ। সেবার শীতের পোশাকের ব্যবসা করবো বলে আমি দিল্লী গেছিলাম মাল আনতে। আর আমার ক্রিকেট খেলার প্রতি টান যে ছোটো বেলার থেকেই সে তো জানোই। কাকতলীয় ভাবে আমি এক মহাজনের কাছে মাল নিতে গেছি, আর ঠিক তার পরের দিনই ভারত বনাম পাকিস্তানের টেস্ট খেলা। আমি মহাজনের কাছে একটু খোঁজ খবর নিতেই, উনি বললেন আমি আমার পুরো মাল যদি ওনার কাছ থেকে নিই তাহলে উনি আমায় একটা টিকিট ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। যদিও ওনার কাছ থেকে সব মাল নিলে, আমার একটু বেশী লাগতো তবে ভেবে দেখলাম টিকিটের দাম তার থেকে অনেক বেশী লাগতো। আমি আর সাত পাঁচ না ভেবে বললাম ঠিক আছে তাই হোক, ওনাকে পুরো অর্ডার বুঝিয়ে দিতেই উনি আমায় একটা পাঁচদিনের টিকিট দিলেন ক্লাব হাউজের। আমি খেলা দেখার উত্তেজনায় সেদিন সারা রাত ঘুমোতে পারলাম না প্রায়। সকালে যথারীতি একটু সকাল সকাল টিকিট হাতে পৌঁছে গেলাম মাঠে। লাইন দিয়ে ঠিক সময় ভিতরে ঢুকতেই দেখি, একদম সামনের সারিতেই আমার বসার জায়গা। জীবনে প্রথমবার সামনে থেকে অতোবড় বড় খেলোয়ারদের সামনে থেকে দেখে প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম আমি। খেলা শুরু হতেই আমি উত্তেজনার চরমসীমায় পৌঁছে গিয়ে একটু লাফালাফি করে ফেলি, কিন্তু পরক্ষণেই আশেপাশে লোকের বিরক্তি ভরা চাউনি দেখে নিজেকে সামলে নিতে থাকি। তারপর থেকে চুপচাপ বসে খেলা দেখতে শুরু করি। কিছুক্ষণের মধ্যে আমি একটা বিষয় লক্ষ্য করি প্রত্যেকটা বল হওয়ার আগে কেউ যেন যেন আমার কানের কাছে এসে বলে যাচ্ছে, কত রান হবে কিম্বা আউট হবে কিনা, আর আশ্চর্যও হয়ে যাচ্ছিলাম দেখে, যা বলছে ঠিক তাই হচ্ছে, চার বললে চার, এক রান বললে এক, আর নো রান বললে ডট বল। সব থেকে অবাক হলাম যখন দেখলাম কুম্বলের একটা বলের আগে সেই অচেনা স্বর বলল আউট আর ওমনি একজন ব্যাটসম্যান আউট হয়ে গেলো। আমি অবাক হয়ে পিছনে ফিরে দেখি, আমারই বয়সই একটা ছেলে আমার ঠিক পিছনটায় বসে আছে আর আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে। আমাকে তাকাতে দেখে হেসে হিন্দিতেই বললো “আমি রাজা“ আমি আর কিছু কথা বলার আগেই আমাদের খেলা দেখার জায়গায় কজন সম্মানীয় ব্যক্তি এসে পড়াতে সবাই হই হই করে উঠলো, মাঠের থেকে ক্যামেরাও আমাদের দেখাতে লাগলো মাঠে লাগানো বিশাল টিভিটাতে। আমিও নিজেকে টিভিতে দেখে খুবই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু পরক্ষণেই চমকে উঠলাম আমাকে দেখাচ্ছে কিন্তু আমার পিছনের ছেলেটাকে তো দেখাচ্ছে না। আমি পিছনে ওকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি অথচ ক্যামেরা ওকে দেখতে পাচ্ছে না? আমি আমার পাশের ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করাতে তিনিও জানালেন আমার পিছনের সীটটা খালি। অথচ আমি স্পষ্ট দেখছি রাজা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। আমি বুঝতে পারলাম আমি ছাড়া রাজাকে আর কেউ দেখতে পাচ্ছে না, নিজের বোঝার উপরে নিজেরই আশ্চর্যও লাগলো, তাহলে কি আমি ভুত দেখছি? কিন্তু আমার ভয় লাগছে না তো। আমার এই ভাবনা চিন্তার মধ্যে সেই দিনকার খেলা শেষ হয়ে গেলো। আমি ক্লাব হাউজ থেকে বেরবার সময়ও দেখলাম উপর থেকে রাজা আমার দিকে তাকিয়েই হাসছে। সেদিন বাসায় ফিরে খাওয়াদাওয়ার পর কিছুতেই ঘুম আসছে না, তাই বাসার সামনে একটা ছোট্ট বারান্দার মতো জায়গায় এসে বসেছিলাম। তেমন কুয়াশাও ছিল না, কিন্তু তার মধ্যে আমার মনে হলো, রাস্তার ওপার থেকে কেউ যেন হাত ছানি দিয়ে ডাকছে। আমি যাওয়া ঠিক হবে কি না ভাবতে ভাবতে সেই ছায়ামূর্তি অদৃশ্য হয়ে গেলো। বরাবরই আমার ভুত প্রেতাত্মায় খুব একটা বিশ্বাস নেই, তাই ভয়ও তেমন পাই না। আমি আবার ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। মাঝরাতে হঠাৎ করে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল, মনে হল কেউ যেন আমার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। চোখ খুলে তাকাতেই দেখি, রাজা আমার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে, আমি ধড়মড় করে উঠে বসতেই সে “মা” বলে একটা কাগজ আমার হাতে দিলো । আমি কাগজটা হাতে নিয়ে দেখলাম ওটা ফিরোজ শাহ কোটলা ময়দান কর্তৃপক্ষের দেওয়া একটা পরিচয় পত্র,তাতে রাজার ছবি দেওয়া, নাম লেখা রাজারাম চৌধুরি কিউরেটর আর তার নীচে একটা ঠিকানা লেখা। আমি মাথা তুলে তাকাতেই দেখি ঘরে কেউ নেই। সেই রাতে আর ঘুম এলো না, সকালের আলো ফুটতেই আমি তৈরি হয়ে মাঠে গিয়ে উপস্থিত হলাম। কিন্তু মাঠের সিকিউরিটি বললো, সময়ের আগে মাঠে ঢুকতে দেবে না, তাই বাইরেই অপেক্ষা করতে লাগলাম। গেটের ভিতর থেকে একজন উর্দি পরা লোক আমায় অপেক্ষা করতে দেখে খুব সন্দেহের চোখে দেখে আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। তখন সবে একজন দু’ জন করে দর্শক এসে লাইনে দাঁড়াচ্ছে। আমি ঐ উর্দি পরা ভদ্রলোকের সাথে আলাপ জমালাম। একটু বাদে জানতে চাইলাম রাজার ব্যাপারে। ভদ্রলোক জানালেন উনি খুব ভালো চিনতেন রাজা রামকে। মাঠের কাজ করতো, খুব ভালো ছেলে ছিল, মা আর ছেলে কাছেই বস্তিতে থাকতো। কিন্তু কি যে হল, কি করে ও বেটিং-এর বদনেশায় পরলো কে জানে, এক্কেবারে শেষ হয়ে গেলো। আর দেখো ওর মা একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে লোকের দরজায় দরজায় দু’টো খাবারের জন্য ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছে। রাজার সাথে কি হয়েছিলো আমি জানতে চাইব ঠিক তখনই একজন বয়স্কা ভদ্রমহিলা আমার কাছে এসে হাত পাতলো। আর ঐ উর্দি পরা ভদ্রলোক আমাকে বললেন “এই দেখো আমি যার কথা বললাম সেই রাজারামের মা ইনিই, দেখছ ছেলের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করছেন। আমি কিছু বললাম না শুধু পকেট হাতড়ে দেখলাম একটা একশ টাকার নোট পেলাম সেটাই দিয়ে দিলাম ঐ ভদ্রমহিলাকে। আমাকে চমকে দিয়ে পরিস্কার বাংলায় সেই ভদ্রমহিলা বললেন ”ভগবান তোমার ভালো করুক বেটা” এর মধ্যে মাঠে ঢোকার গেট খুলে যাওয়াতে আমায় ঢুকে যেতে হলো। ক্লাবহাউজের দিকে যেতে যেতে একটা ছেলে আমার পিছনে পিছনে এসে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো “আপ রাজারামের দোস্ত আছেন না?” আমি “হ্যাঁ” বলতেই সে আমার কাঁধের উপর একটা হাত রেখে বললো “তব তো হামাদের ভি দোস্ত আছেন, চোলেন একসাথে বসে খেলা ভি দেখবে আর নিজেরাও খেলবে“ আমি ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে, না বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু পারলাম না কেউ যেন জোর করে আমাকে দিয়ে হ্যাঁ বলিয়ে দিলো। খেলা দেখার জায়গায় গিয়ে ছেলেটা কাল রাজা ঠিক যেই জায়গায় বসেছিল ঠিক তার পাশের সীটটাতে বসলো। আমার কেমন একটা অস্বস্তি হতে লাগলো। খেলা শুরু হতেই আমি বুঝতে পারলাম রাজা এসে ঠিক পিছনের খালি সীটটাতে এসে বসলো। ছেলেটা আমার কাঁধে হাত রেখে বললো “হামার নাম নিরাজ শুক্লা আছে, দোস্ত তুমার নাম কি আছে?” আমি আমার নাম বলতে সে বলল, “নাম সে কি যায় আসে? রাজার দোস্ত তো হামার ভি দোস্ত, তবে এই বরিং খেলা দেখতে দেখতে আমরা নিজেরাই একটা খেলা খেলি?” আমি না বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু অনিচ্ছা সত্ত্বেও, ”ঠিক আছে” বলে ফেললাম, বুঝতে পারলাম আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিনা। শুনে নিরাজ বলল “তো চলো বিনোদ ভাই, হামরাও খেলা শুরু করি। এটা খুব সহজ খেলা হচ্ছে, আন্দাজের খেলা, ধরেন সামনে যে ওভার বল হবে তাতে কোতো রান হবে বলতে হবে। ধরো হামি বললাম দশ রান হবে, তুমি বললে না কম হবে। ওভার শেষ হলে যদি দশ রান হয় তুমি আমায় দশ টাকা দিবে আর কম হলে আমি দশ টাকা তোমায় দেবো । চল শুরু করো “আমি আবার না বলতে যাচ্ছিলাম কারণ তখন পকেটে উড়ানোর মতো টাকা আমার ছিল না কিন্তু বলতে পারলাম না জানো! সেই আগের মতই সম্মতি জানিয়ে ফেললাম। আমাদেরও খেলা শুরু হলো, নিরাজ বললো, এই ওভারে দুই রান হবে, ওমনি রাজা আমার কানে কানে বলল না চার হবে। আর বিশ্বাস করবে কিনা জানি না হলোও চার রান। নিরাজ আমায় চার টাকা দিলো। তারপরের ওভারে বললো এই ওভারে যদি কেউ আউট হয় তাহলে পঞ্চাশ তুমি দিবে যদি না হয় তাহলে আমি একশ দিবো । আমি আগের মতই বললাম আউট আর বলতে বলতে পাকিস্তানের একজন আউট হয়ে গেলো। আর নিরাজ আমায় কথা মতো একশ টাকা দিলো। আমার পকেট থেকে একটা টাকাও খরচ হলো না বরং সারা দিনে নিরাজ প্রায় হাজার টাকা আমার কাছে হেরে গেলো, ভুল হলো বরং বলা উচিত আমাকে দিয়ে খেলানো রাজার কাছে। খেলা শেষ হয়ে বেরনোর সময় দেখলাম রাজা আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত এক কৃতজ্ঞতার হাসি হাসছে। নিরাজকে দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছিলাম। এতগুলো টাকা হেরেও ওর কোন দুঃখ নেই, উল্টে আমাকে বললো, “সাচ মে বিনোদ ভাই, তুমি রাজারাম ভাইয়ের সাচ্চা দোস্ত আছো, রাজাভাই ভি কভি হারতা নেহি থা, জিন্দেগী মে একবার হারা আউর দুনিয়া সে বাহার চলা গ্যায়া। পার কাল ভাই কাল মেরা আউর এক দোস্ত কে ভি লিয়ে আসবো। ওহ একদম জ্যোতিষ আছে, যা বলে তাই হয়।“ আমিও অদ্ভুত এক আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললাম কালই দেখা যাবে। গেট থেকে বেরিয়ে এসে আমার মাথায় একটা চিন্তা এলো, এই টাকাগুলো জিতেছে রাজা আমি তো শুধু মাধ্যম, আর এই টাকাগুলোর আমার কোনো প্রয়োজনও নেই। তাহলে কোন ভাবে যদি এই টাকাগুলো রাজারামের মা এর কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় খুব ভালো হয়। যেমন ভাবা তেমনই কাজ আমি সকালের সেই উর্দিপরা ভদ্রলোককে খুঁজে বার করলাম। তারপর তার কাছ থেকে রাজারামের মায়ের ঠিকানা নিয়ে পৌঁছে গেলাম রাজারামের বাড়ি। বাড়ি বলার চেয়ে ঝুপড়ি বলাই ভালো। সন্ধ্যে হয়ে গেছে, আমি বাইরের থেকে রাজা রাজা বলে ডাকতেই সকালের সেই ভদ্রমহিলা “কউন হ্যাঁয়” বলে বাইরে বেড়িয়ে এলেন। তারপর আমায় দেখে আবার ভাঙ্গা ভাঙ্গা হিন্দিতে বললেন “কউন হয় বেটা, রাজা সাথে কি কাম আছে?” আমি বেশ বুঝতে পারলাম উনি আমায় চিনতে পারেননি। আমি বললাম, “আমি রাজার দোস্ত আছি। রাজা নেই?” উনি বাইরে বেড়িয়ে এসে আলোর নীচে দাঁড়িয়ে আমাকে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন। আমিও দেখলাম ওনাকে তুমি বললে বিশ্বাস করবে না সুনন্দদাদা ওনাকে দেখতে অবিকল আমার পিসির মত যিনি বেশ কয়েক বছর আগে গত হয়েছেন। উনি আমায় ঝুপড়ির ভিতরে নিয়ে বসালেন তারপর সকালের মত পরিস্কার বাংলায় বললেন “তুমি কে বাবা? তোমার কথা তো আমি রাজার কাছে কোন দিন শুনিনি। আমার কথা শুনে ঘাবড়ে যেও না আমি বাংলারই মেয়ে, ভাগ্যচক্রে এখানে এসে পড়েছি, কয়েকবছর আগে স্বামী গত হয়েছেন তারপর মাস ছয়েক আগে ছেলেটাও চলে গেলো। কিন্তু ও কোনোদিন বলেনি তো ওর কোন বাঙ্গালী বন্ধু আছে।“ আমি কোনো রকমে ওনার প্রশ্নের জাল এড়িয়ে ওনার হাতে টাকা কটা দিয়েই বেড়িয়ে পড়লাম। কিছুটা এগিয়ে আসতেই দেখি রাস্তার উলটো দিকে দাঁড়িয়ে আছে রাজা, আর ওর মুখটা অদ্ভুত প্রশান্তিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে। পর দিন সকালে মাঠে যেতেই দেখি সেই উর্দিপরা ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন ঠিক গেটের কাছে। আমাকে দেখতেই উনি বললেন “বেটা তুমি তো বললে তুমি রাজার দোস্ত আছো, কিন্তু তুমি যে রাজার দূর সম্পর্কের ভাই সেটা তো বলোনি।” আমি একটু হেসে বললাম আপনি জানলেন কি করে?” উনি বললেন “আজ সকালে রাজার মায়ের সাথে দেখা হয়েছিলো সেই বললো“ আমি কিছু বললাম না শুধু একটু হেসে মাঠের দিকে চলে গেলাম। ভিতরে দেখা হয়ে গেলো নিরাজের সাথে ও আজকে ওর বন্ধু অভিজিৎকে নিয়ে এসেছে। আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। সেদিনও আমি অনেক টাকাই জিতলাম রাজার সাহায্যে। আর সেই টাকাও দিয়ে এলাম রাজার মা’কে, সেদিন রাজার বাড়ি যেতেই রাজার মা আমাকে জড়িয়ে ধরলেন, তারপর কান্না জড়ানো গলায় বললেন জানো আমার ছেলেটা খুব ভালো ছিল, মাঠে কাজ করার সুবাদে প্রচুর বড় বড় মানুষের সাথে পরিচয় ছিল ওর, তাদের কেউ ভালো ছিল কেউ খারাপ, আমার ছেলেটা সেই ভালো খারাপের ফারাক করতে পারল না। শেষ হয়ে গেলো। প্রথম প্রথম বাড়িতে টাকা দিত খাওয়া পরার খবর রাখত। কিন্তু তারপর কি যে হলো, জুয়া খেলার নেশায় সব শেষ হয়ে গেল । একবারও আমার কথা ভাবলো না । আমি সেদিন ওনাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে আবেগের বশে পিসি বলে ডেকে ফেললাম। সেদিন ফেরার পর রাতে আমাকে আবার দেখা দিলো রাজা আর একপ্রকার মিনতি করলো আমি যেন ওর মাকে আমার সাথে নিয়ে আসি তার জন্য যি আর্থিক সাহায্য লাগে ও সব করবে এই বাজি ধরার মাধ্যমে। শুধু আমায় একটাই কথা দিতে হবে আমি প্রয়োজন ছাড়া ওর সাহায্য পাব না আর সে প্রয়োজন যেন কোনো ভাবে প্রাচুর্য আর বিলাসিতার জন্য না হয়। তাহলে ও আমাকে কোনো সাহায্য করবে না। এতদূর বলে বিনোদ থামলো। আমাদের কথাবার্তার মধ্যে চা এসে গেছিল। এবার বিনোদ চুপ করতে বউমা বললো শুধু বসে অপেক্ষা করলে চলবে একটু কিছু খেতেও তো হবে নাকি। একটু মুড়ি বাতাসা দিয়ে গেলাম খেয়ে নাও, আর সত্যি দাদা কাল তুমি না থাকলে কি যে হতো? কাল সারারাত আমরা দু’জনে চোখের পাতা এক করতে পারিনি, আমি তোমাকে যখন দেখা হোল তখনই বলতাম কিন্তু পাছে তুমি ভয় পাও তাই বলিনি, কাল তুমি যাকে দেখেছ সে রাজা” মুড়ির বাটিটা এগিয়ে দিতে দিতে বললো বৌমা “বিনোদ কাল সারাক্ষণ আমার সাথেই ছিল তোমার বাড়ি যায় নি“
সুনন্দ একটু হেসে বললো, “সত্যি রে বিনোদ তুই আসল বাজীকর, যে নিজের লোভের সংযমের বাজি খেলে প্রতিবার আর জিতে যায়, তোর প্রতি আমার শ্রদ্ধা বহুগুণ বেড়ে গেলো।“
বলতে বলতে দরজা খোলার শব্দ হলো, আর দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল বিনোদ। ভিতরে ঢুকতেই সুনন্দকে দেখে বিনোদ বলে উঠলো “আরে সুনন্দদাদা তুমি কখন এলে, তোমাকে একটা ভালো খবর দিই। জানো পিসি ভালো আছে ডাক্তার বলেছে ভয়ের আর কোন কারণ নেই, তুমি কাল যা উপকার করলে, তুমি আমার ভগবান।”
সুনন্দ চমকে টুলের দিকে তাকিয়ে দেখলো, টুলটা খালি কেউ নেই। সুনন্দর মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করে উঠলো অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আগে ওর মুখ থেকে শুধু একটা কথাই বেরলো “তাহলে এতক্ষন?”

Loading

Leave A Comment