সৌরভ
-লোপামুদ্রা ব্যানার্জী
স্কুল পাড়ার মোড়ে নাড়ুর চায়ের দোকানে রোজ দুবেলা বসে আলোচনা সভা।আলোচ্য বিষয় পাড়া থেকে দিল্লি। পাড়ার মধু দালাল থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদী সকলের সমালোচনাতে মুখরিত হয় আলোচনা সভা খানি।বক্তারাও এক একজন দিকপাল।
বঙ্কুবিহারী পালের বয়স সত্তর ছুঁইছুঁই। দীর্ঘদিন জেলা কোর্টের মুহুরীর কাজ করে এসেছেন। উকিলদের সংস্পর্শে থাকতে থাকতে সেও অবলীলায় সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য বলে চালিয়ে দিতে পটু।
আর আছে গোবর্ধন হাঁসদা। বড়জোরা গ্ৰামের সরকারি স্কুলের পিওন ছিলেন। হাবে ভাবে তাকে তো স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলে মনে হয়। এলাকার লোকজন ছেলে মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করার সময় সবার আগে হাঁসদা বাবুর কাছেই ছোটে।
এছাড়া আরো একজন গুরুত্বপূর্ণ বক্তা হলেন কোয়াক ডাক্তার দীর্ঘাঙ্গী চট্টোপাধ্যায়। যেমনি দীর্ঘ তার কলেবর তেমনি লম্বা তার কথা। তার নাকি খুব হাত যশ। পাশ করা ডাক্তাররাও তার কাছে পরামর্শ করতে আসেন।
আজ রবিবারের সকালে নাড়ুদার চায়ের দোকানের আসন্ন নির্বাচনের দলবদলের হিরিক নিয়ে আলোচনাটা জমেছিল দারুণ কিন্তু হঠাৎই সেই আলোচনার গতিপথ হারিয়ে অন্য আলোচনা শুরু হয়ে গেল।
নাড়ুর চায়ের দোকানে রোজ সকালে আলুর চপ বিক্রি হয়।অতি অল্প আলুর পুর দিয়ে কিভাবে অতি উৎকৃষ্ট আলুর চপ নাড়ুদা বানায় তা বেশ আশ্চর্যজনক।
তবে আজকের নাড়ুদার দোকানের সামনে একটা লাল রঙের স্পোর্টস কার এসে দাঁড়াতেই আলোচনা সভার বক্তাগণ অতীব আশ্চর্য হয়ে উঠলো। তাদের আশ্চর্যের মাত্রা আরো বাড়লো যখন গাড়ি থেকে নেমে এল নুপুর বৌদি।
হালকা পিঙ্ক কালারের শাড়ি, এয়ারহোসটেস থ্রি কোয়ার্টার ব্লাউজ পরিহিতা, কানে সামান্য ছোট্ট দু’টি সোনার দুল, কপালে কালো টিপ ও ডানহাতে একটা দামি রিস্ট ওয়াচ, পায়ে সামান্য হিলের জুতো। গাড়ি থেকে নেমে নাড়ুদার কাছে এসে অতি ক্ষীণ কন্ঠে বলে, আমায় পাঁচটা আলুর চপ দাও তো নাড়ুদা।
নাড়ুদা কোনপ্রকার বাক্যব্যয় না করে একটা কাগজের ঠোঙ্গার মধ্যে পাঁচটা আলুর চপ দিয়ে বলে, বৌদি পঁচিশ টাকা দাও।
নুপুর বৌদি ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে টাকা বের করার আগেই স্পোর্টস কার থেকে নেমে এলো একজন সুদর্শন মাঝবয়সী পুরুষ। এগিয়ে এসে ত্রিশ টাকা দিল নাড়ুদাকে।
নাড়ুদা হাত বাড়িয়ে টাকাটা নিতে নিতে ভদ্রলোকের আপাদমস্তক গভীর ভাবে নিরীক্ষণ করে নেয়। নুপুর বৌদি গাড়ি করে চলে যাওয়ার পর শুরু হয় গভীর আলোচনা।
গোবর্ধন হাঁসদা বলে, আরে এতো মিত্র মাস্টারের ছেলের বউ না?
বঙ্কুবিহারী বলে, বা বা এতো একদম ভোল পাল্টে ফেলেছে। আগের থেকে গায়ের রং টা ফর্সা হয়ে গেছে দেখছি। শরীর স্বাস্থ্যও ফিরেছে বেশ।
দীর্ঘাঙ্গী বাবু বলে, মিত্র মাস্টারের ছেলে টুবাইটা অকালে চলে গেল। কত আর বয়স হয়েছিল। জোয়ান তরতাজা যুবক। সাতচল্লিশ আটচল্লিশ হবে। ঐ লম্বা চওড়া ছেলেটার হার্টের রোগ থাকতে পারে দেখে বোঝা সম্ভব ছিল না।
গোবর্ধন বাবু বলে, বেশি না, বেশি না। মাত্র দু’টো বছর ভুগলো ছেলেটা। চোখের সামনে কেমন একটা তরতাজা ছেলে চলে গেল।
বঙ্কুবিহারী বাবু, চায়ের ভাঁড়ে একটু চমুক দিয়ে বলে, টুবাই-এর এক ছেলে এক মেয়ে না? টুবাই যখন মারা যায় তখন তো ওরা বেশ ছোট ছিল।
দীর্ঘাঙ্গী বাবু বলে, ছেলেটার বারো আর মেয়েটার পনেরো।জ্বর, সর্দি হলে টুবাই তো সবার আগে আমার কাছেই নিয়ে আসতো।
একটু থেমে জিজাসু সুরে বলে, হ্যাঁ রে নাড়ু টুবাইয়ের বাড়ি তো তোদের পাড়ায়। ওদের এত ঠাঁটবাট চলে কি করে রে? দুবছরেই তো টুবাইয়ের বউ ভোল পাল্টে ফেলেছে।
নাড়ু লোহার কড়াইয়ের গরম তেলে গোটা পাঁচেক আলুর চপ ছেড়ে ছানতা দিয়ে হালকা নেড়ে মুখটা বেঁকিয়ে বলে, বুঝলেন ডাক্তার বাবু এই জগতে কেউ কারোর নয়।টুবাই ওর বউ কে কি কম ভালোবাসাতো! এই বউকে পাবার জন্য টুবাই সুইসাইড করতে গিয়েছিল।
গোবর্ধন বাবু ভ্রু কুঁচকে বলে, সুইসাইড? আগে তো কোনদিন শুনি নি টুবাই সুইসাইড করতে গিয়েছিল। তা ব্যাপারটা কি নাড়ু একটু খুলে বল তো।
নাড়ু গরম তেল থেকে চপগুলো তুলে ঝাঁঝড়িতে রেখে গ্যাসটা বন্ধ করতে করতে বলে, ও কাকা এইসব কথা কি আর রাষ্ট্র করতে আছে। আমরা এক পাড়ার লোক তাই জানি।
টুবাইকে তো ওর বউ প্রথমে কিছুতেই বিয়ে করতে চায় নি।টুবাইও নাছোড়বান্দা । একদিন নুপুরের নামে একটা সুসাইড নোট লিখে হাতের শিঁড়া কেটে আত্মঘাতী হয়। হসপিটালের বেডে শুয়ে সেলাইনের বোতলকে সাক্ষী রেখে টুবাই ও নুপুরের বিয়ে হয়।
গোবর্ধন বাবু চোখে মুখে একেবারে প্রফুল্ল এনে বলে, এতো একেবারে অঞ্জন চৌধুরীর সিনেমার মতো। তা এখন দেখছি টুবাইয়ের বউ বিধবা হয়েও নতুন সিনেমা করছে মনে হচ্ছে।
চায়ের দোকানে উপস্থিত সকলেই হো হো করে হাসির রোল তুলে চৌমাথা খানি কাঁপিয়ে তোলে।
হঠাৎই বঙ্কুবিহারী বাবু বলে, চুপ, চুপ। টুবাইয়ের মেয়ে আসছে এদিকে।
নিমেষে হাসি বন্ধ করে সকলে চা পানে মনোনিবেশ করলো।
টুবাই ও নুপুর বৌদির মেয়ে পায়েল সাইকেল থেকে নেমে সাইকেলটা নাড়ুদার দোকানের সামনেই স্ট্যান্ড করে গটগট করে হেঁটে এসে বলে, নাড়ু কাকু পাঁচটা আলুর চপ দাও তো তাড়াতাড়ি।
নাড়ু একটু আগেই ভেজে রাখার আলুর চপগুলো তুলে কাগজের ঠোঙ্গার মধ্যে রাখতে গেলে পায়েল বলে, আরে না না। ঠান্ডা চপ নেবো না। তুমি আমায় গরম গরম ছেঁকে দাও।
পায়েলের কথা শুনে নাড়ু একটু মনোক্ষুণ্ণ হয়ে বলে, তা হলে একটু দাঁড়াতে হবে কিন্তু।চপ ভাজতে সময় লাগে।
পায়েল সেইমতো দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে স্মার্ট ফোনখানা ঘাঁটতে লাগলো।
গোবর্ধন বাবু একটু গলা খাকারি দিয়ে বলে, তুই টুবাইয়ের মেয়ে না?
পায়েল ফোন থেকে চোখ না সরিয়ে বলে, হ্যাঁ।
গোবর্ধন বাবু আবার বলে, ইংলিশ মিডিয়ামেই পড়ছিস তো?
পায়েল এবারও মুখ নিচু করে বলে, হ্যাঁ।
দীর্ঘাঙ্গী বাবু বলে, তা দিদিভাই তোমার দাদু কেমন আছে এখন? অনেক দিন তোমার দাদুর সাথে দেখা হয় নি। এখন বোধহয় ঘর থেকে তেমন বের হয় না। আমি তোমার দাদুর বন্ধু হই। দু’একবার তোমাদের বাড়ি গিয়েছিলাম যখন তোমার বাবা অসুস্থ ছিল। তখন দেখে থাকবে হয়তো তুমি।
পায়েল এবার মোবাইল থেকে মুখটা তুলে দীর্ঘাঙ্গী বাবুর দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলে, হ্যাঁ আপনি তো হরলিকস নিয়ে দেখতে এসেছিলেন পাপাকে। দাদুর শরীর খুব একটা ভালো নয়।বড্ড পায়ে ব্যথা।
দীর্ঘাঙ্গী বাবু শশব্যস্ত হয়ে বলে, সেকি কথা। তোমার দাদুকে সুস্থ থাকতেই হবে এখন দীর্ঘদিন তোমাদের জন্য।
বঙ্কুবিহারী বাবু চশমাটা নাকের ডগায় এনে বলে, তোদের নীচের তলাটাতে ভাড়াটে খুঁজছিল তোর দাদু।পেয়েছিস?এ্যগরিমেন্ট করে নিয়েছে তো তোর দাদু?
এত ফালতু আলাপ চারিতায় পায়েল মনে মনে চরম বিরক্ত হলেও মুখে বলে, নতুন ভাড়াটে এসেছে। তবে এ্যগরিমেন্টের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।
এতক্ষণে নাড়ু পাঁচটা আলুর চপ ঠোঙায় দিতে দিতে বলে, তোর মা তো একটু আগেই পাঁচটা চপ নিয়ে গেল। কম পড়ে গেল?
পায়েল বলে, সৌরভ মামার তোমার আলুর চপ খুব ভালো লেগেছে। তাই আবার নিয়ে যাচ্ছি।
গোবর্ধন বাবু বলে, ওওওও, ঐ ভদ্রলোক তোর মামা হয় বুঝি? তা আমরা তো জানতাম তোর মায়ের ভাই বোন কেউ নেই। এটা কি সম্পর্কের মামা তোর?
পায়েল চপের ঠোঙাটা হাতে নিয়ে দাম মিটিয়ে চলে যাওয়ার সময় বলে, আমার মায়ের অফিসের বস হন উনি।
এই কথাটা বলে, সাইকেলে চেপে দ্রুতগতিতে বাড়ির দিকে রওনা দেয়।
বাড়িতে ফিরে এসেই পায়েল নুপুরকে বলে, আমাকে আর কখনো নাড়ুদার দোকানে পাঠাবে না বলে দিলাম।
নুপুর ক্ষীণ কন্ঠে বলে, কেন? কি হলো তোর আবার?
-জানো নাড়ু কাকার দোকানে গিয়ে আমাকে হাজার জনের হাজার কথার উত্তর দিতে হচ্ছিল। নাড়ু কাকা আবার জিজ্ঞাসা করে,এই যে তোর মা পাঁচটা আলুর চপ নিয়ে গেল তা বোধহয় কম পড়ে গেল নাকি?
আমি যেমনি বলেছি সৌরভ মামার তোমার দোকানের আলুর চপ ভালো লেগেছে তাই আবার নিতে এলাম। তেমনি গোবর্ধন দাদু সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, তোর মায়ের তো ভাই বোন নেই জানতাম। এটা তবে কেমন মামা? তুমি বলো মা ওদের এত পঞ্চায়েতের কি আছে?
আমি যেমনি বললাম সৌরভ মামা মায়ের অফিসের বস।শুনেই ওদের মুখগুলো কেমন যেন হয়ে গেল।
আর একটা কথা মা, তুমি সৌরভ মামাকে আমাদের বাড়িতে এবার থেকে কম আনবে। সেদিন রায় দিদু জিজ্ঞাসা করছিল, কে রে ওই ভদ্রলোক? আজকাল প্রায়ই তোদের বাড়িতে আসতে দেখি।
তাছাড়া সেদিন খেলার মাঠের ঘটনাটা ভাই তোমাকে বলে নি। স্কুল মাঠে ক্রিকেট খেলতে খেলতে প্রিন্সের সাথে ভাইয়ের ঝগড়া হয় ক্যাম্বিস বল হারানো নিয়ে। জানো প্রিন্সের কত বড় সাহস বলে কিনা তোর আবার পয়সার চিন্তা। তোর নতুন বাবার কাছে চেয়ে নিস।
এবার নুপুর কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে, চুপ কর পায়েল। কে কি বললো আর তা নিয়ে তুই সংসারে অশান্তি ডেকে আনছিস।
-দেখো মা অশান্তি আমারও ভালো লাগে না। কিন্তু পাঁচজনের বাঁকা বাঁকা কথাগুলো আমাদেরকেই শুনে বেড়াতে হয়।
মা-মেয়ের কথপোকথনের সুর ধীরে ধীরে উঁচুর দিকে যাচ্ছে। পাশের ঘর থেকে সৌরভও উঠে এসেছে দুজনের বাক বিতন্ডার মধ্যে।
সৌরভ নুপুরকে কিছুটা ধমকের সুরে বলে, কি হচ্ছে কি নুপুর? তুমি চুপ করো না। পায়েলের এখন বয়স কম।ওর পক্ষে কি সব সম্পর্কের গভীরতা বোঝা সম্ভব। তুমি ম্যাচিওর আর ও ইমম্যাচিওর।
নুপুর কিছু একটা বলতে যাবে হঠাৎ লক্ষ্য করে তার শ্বশুর মশাই দরজার পাশে দাঁড়িয়ে।তার নড়বড়ে মেরুদন্ডের শরীরটাকে কোনক্রমে লাঠির ওপর ভর দিয়ে টেনে টেনে সেখানে উপস্থিত হয়েছে।
তিনি কিছুটা গম্ভীর স্বরে পায়েলকে প্রশ্ন করেন, সৌরভ এই বাড়িতে এলে তোকে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এটা তোর খারাপ লাগে। কিন্তু সৌরভ যখন তোর স্কুলের মোটা টাকা মাইনে প্রতি মাসে দেয়, টিউশনির টাকা, নেটের রিচার্জ আরো কত নিত্য নতুন আবদার তোর মেটায় তখন তো ওর কাছে হাত পেতে নিতে খারাপ লাগে না।
টুবাই চলে যাওয়ার পর আমরা সকলেই অথৈ জলে পড়ে ছিলাম। আমার পেনশেনের সামান্য কটা টাকায় তোদের দুই ভাই বোনকে নামী স্কুলে পড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
আর তোর মা এল.আই.সি. অফিসে ঢুকেছিল সদ্য। সেই সময় সৌরভ যদি তোর মায়ের দিকে সাহায্যের, সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে না দিত তাহলে আজকে যে বড় বড় কথাগুলো বলছিস সেগুলো আর তোর বলা হতো না।
কিছুটা দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন নুপুরের শ্বশুর মশাই। বুঝলে বৌমা, অকৃতজ্ঞ। হাত পেতে উপকার নিতে লজ্জা করে না আবার সমালোচনা করতেও পিছপা হয় না। পাড়া প্রতিবেশী তো আছেই নিন্দে মন্দ করার জন্য। টুবাইয়ের চিকিৎসার পিছনেই জলের মতো পয়সা বেরিয়ে গেছে। তোমার যা গয়না ছিল সবই বিক্রি করতে হয়েছে। আমাদের দুর্দিনে একটি বারের জন্য পাড়ার কেউ এগিয়ে এসেছিল সাহায্যের হাত নিয়ে।
বলতে বলতে নুপুরের শ্বশুর মশাই এর গলা আদ্র হয়ে উঠেছে। তবুও তিনি বলেই চলেছেন। বুঝলে বৌমা পাড়ার লোকরা ভেবেছিল টুবাই চলে যাওয়ার পর তুমি ওদের দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করবে। কিন্তু তা তো তুমি করলে না। আর এইখানেই পাড়ার হিতৈষীদের মনোকষ্ট শুরু হলো।
আমরা নিজেদের আত্মসম্মান বজায় রেখে শাক ভাত, নুন ভাত খেয়ে দিন কাটিয়েছি। একটু মাছ মাংসের জন্য পায়েল, পাপাই বায়না করলে তুমি ওদেরকে বকতে আর আড়ালে চোখের জল ফেলতে। বৌমা আমি সব দেখতাম আর চুপ থাকতাম। আমিও যে অসহায়।
দেখ পায়েল দিদিভাই তুই তো বড়ো হচ্ছিস। পাঁচজনের পাঁচ কথায় কান না দিয়ে মায়ের দুঃখটা বোঝার চেষ্টা কর।
আর দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ভালোবাসা মানেই কি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক? না দিদিভাই তা কখনও হয় না। তোমারও তো অনেক ছেলে বন্ধু আছে সবার সাথেই কি তোমার প্রণয়ের সম্পর্ক?
দাদুর আবেগ তাড়িত কথাগুলো শুনে পায়েল এবার কেঁদে ফেলে। নুপুরকে জড়িয়ে ধরে বলে, মা আমাকে ক্ষমা করে দিও। সৌরভ মামাকে নিয়ে আমার মনে সামান্যতম নোংরা সন্দেহ থাকা উচিত নয়।
বাড়ীর এই গুমোট পরিবেশকে হাল্কা করার জন্য সৌরভ বলে, অনেক হলো কান্নাকাটি। আলুর চপগুলো একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেল যে। আবার নাড়ুদার দোকানে গেলে কিন্তু নাড়ুদা এবার রেগে যাবে। সৌরভের এইরকম রসিকতায় সকলেই হেসে ওঠে।
সৌরভ বলে, নুপুর চপগুলো একটু গরম করার ব্যবস্থা করো। আজ আর আমাকে আলাদা করে মুড়ি দিও না।আজ আমি, পায়েল, পাপাই আর তুমি একসাথে এক গামলাতে মুড়ি খাবো।
নুপুরের শ্বশুর মশাই হাসতে হাসতে বলেন, নাড়ুর আলুর চপের গন্ধকে ছাড়িয়ে নিখাদ এক ভালোবাসার গন্ধে ভরে উঠলো আমার এই বাড়ি খানা।