একাদশী
-রাখী চক্রবর্তী
দীর্ঘ দশ বছর রোগে ভোগার পর দয়ানন্দ চৌধুরী মারা গেলেন। মৃত্যু কালে ওনার বয়স হয়েছিল পঁচাত্তর। একমাত্র সন্তান বিনয়বাবু বাবার শ্রাদ্ধ শান্তির কাজ খুব ভালো ভাবেই করেছেন। কোনো ত্রুটি নেই।
শ্রাদ্ধের দিন ও মৎস্যমুখীর দিন অনেক লোক খেয়েছে। এমনকি কুকুর বিড়ালরাও বাদ যায় নি। এই সব দেখে মানে বিনয়বাবুর পিতৃভক্তি দেখে
সামনের বাড়ির অলোক বাবু আপশোস করে ওনার স্ত্রী দীপাকে বললেন আমার বাবার কাজে পাঁচটা ব্রাহ্মণ খাইয়ে দায় সারলাম। বিনয় দেখিয়ে দিল। কাকে বলে পিতৃভক্তি।
দীপা বললো, খুব পিতৃভক্তি, দশ বছর ধরে দয়ানন্দ মেসোমশাই রোগে ভুগছিলেন একটা ডাক্তারও দেখায়নি তোমার বন্ধু বিনয়। না ওষুধপত্র, না ভালো পথ্য। কঙ্কালসার দেহ নিয়ে বিছানায় পড়ে ছিলেন মেসোমশাই। ভগবান মুক্তি দিলেন ওনাকে।
মরার পর লোক দেখানো ভক্তি। আমরা বাবার জন্য অনেক করেছি। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে দু’ তিন ধরে লোক দেখানো লোক খাওয়াই নি। আর মাকেও যত্নে রেখেছি। যে মানুষটাকে বেঁচে থাকতে একটু ভালবাসা, একটু যত্ন, একটু খাবার দিতে পারল না- মৃত্যুর পর আদিখ্যেতা দেখানো।
বড় ছবি, ফুলমালা। যেন বাবা অন্ত প্রাণ, এবার মাসীমার কি দূরগতি হয় দেখো। খাটিয়ে খাটিয়ে না শেষ করে দেয় মাসীমাকে। অসীমারও তো মা আছে। আর সবচেয়ে বড় কথা বিনয়বাবু কেন প্রতিবাদ করেন না।
অলোকবাবু- অশান্তির ভয়ে। এমন অনেক ছেলে আছে বৌকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে মা বাবার মূল্যটুকু হারিয়ে ফেলে। বিনয় হয়তো পরিবারে শান্তি বজায় রাখতে চায়।
দীপা- বিনয়বাবুর মার আজ একাদশী। মাসীমাকে আমি ফল সাবু দিয়ে আসি।
দীপা ফল সাবু নিয়ে বিনয়বাবুর বাড়িতে গেল।গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে শুনতে পেল বিনয়বাবুর স্ত্রী অসীমা বলছে, আজ একাদশী মা। একবারই খাবার খাবেন। জল খেতে পারেন। তাতে কোনও পাপ হবে না। তবে সাবুমাখা সেই রাতেই খাবেন।
দীপা মাসীমার হাতে ফল সাবুর প্যাকেটটা দিয়ে বললো, খাবেন মাসীমা ।
অসীমা ফলের প্যাকেটটা নিয়ে বললো, দীপা এ সব আবার কেন?
বিনয়বাবু অসীমার দিকে তাকিয়ে ঘরে চলে গেলেন।
একমাস পর অসীমার মা ব্যাগপটরা নিয়ে মেয়ের বাড়ি হাজির।
জানিস তো অসীমা, বৌমা বড় জ্বালায়। আমি আর আধপেটা খেয়ে থাকতে পারবো না। এই বয়সে এতো পরিশ্রম করতে পারি না রে মা। আমি মরণ কাল পর্যন্ত তোর কাছেই থাকবো। মেয়ে কখনও খারাপ হয় না। ছেলে- ছেলের বৌ সব খারাপ হয়। বিনয় শাশুড়ির সব কথা শুনে অসীমাকে বললো, দাও বাজারের ব্যাগটা দাও।বাজার করে আনি। ওহ্ আর একটা কথা অসীমা, মনে আছে তো কাল কিন্তু একাদশী। ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে রেখেছো তো! দুটো লাল দাগ।
বিনয়বাবু মুচকি হেসে বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন।