ভাত ডে
– জয়তী মিত্র
পাড়ার সবাই ওদের রকবাজ ছেলে বলেই জানে। পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে সব বেকারের দল। বাপের হোটেলে খাচ্ছে আর ঘরের খেয়ে বনের মোষ তড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এই ছেলেগুলোই পাড়ার সকলের অপদে-বিপদে হাজির হয়।
এবার সরস্বতী পূজোতে বেশ ভালো রকম চাঁদা উঠেছিল। রাজু, সুনু, বুবাই, রনি নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে পুজোর দায়িত্ব নিয়ে বেশ ভালোভাবেই পুজোর আয়োজন করে। রাজুর কাকা বাইরে চাকরী করে, অনেকদিন বাদে বাড়ি ফিরেছে, তার থেকে একটা মোটা টাকা চাঁদার আবদার করছে তার ভাইপো। কাকাও খুশি মনেই সেই আবদার রেখেছে। পাড়ার সব বাড়ীতে ঠাকুরের ভোগ প্রসাদ বিতরণ করেছে। পাড়ার,কাকু, কাকিমারা তাতে বেশ খুশী হয়েছে।
বেশ কিছু টাকা বাঁচিয়ে সবাই মিলে ঠিক করে খাল পাড়ের যে বস্তিটা আছে সেখানে একদিন গরীব মানুষগুলোকে খাওয়ানো হবে। মেরে কেটে সেখানে গোটা চল্লিশ জন লোক হবে।
একটা দিন গরীব মানুষগুলোকে ডিমের ঝোল আর ভাত খাওয়ালে খুব খুশি হবে বস্তির মানুষগুলো। ওরা তো ঠিক মত খেতে পায় না।
রাজু সকলের উদ্দেশ্যে বললো, শোন আজকাল কত ডে পালন করা হচ্ছে, যতসব বড়লোকি চাল, আর আমরা ভাত ডে পালন করে গরীবের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করি, ,চল সবাই বাজার করতে যেতে হবে।
তাদের আয়োজিত এই মহৎ উদ্দেশ্য দেখে পাড়ার সকলে খুশি হয়ে বেশ কিছু আরো টাকা দিল। ছেলের দল দ্বিগুণ উৎসাহে রান্নার তোড়জোড় করতে লাগল। তারপর বস্তিতে গিয়ে সবাইকে বসিয়ে ডিমের ঝোল, ভাত খাওয়াল। পাড়ার এক বয়স্কা ঠাকুমা মিষ্টির টাকা দিলেন। শেষ পাতে মিষ্টি পেয়ে বস্তির বাচ্চাগুলোর চোখে, মুখে খুশির ঝলক ছড়িয়ে পড়লো।
গরীব মানুষগুলো এক বেলা পেট ভরে খেতে পেয়ে দু’ হাত তুলে ছেলের দলকে আশীর্বাদ করলো।
পাড়ার সবাই ছেলেগুলোকে জড়িয়ে আদর করে বললো, তোরা আমাদের পাড়ার গর্ব, চিরকাল এমনি থাকিস তোরা।
‘ভাত ডে’ পালন করে গরীব মানুষ মানুষগুলোর একটা দিন খাওয়াতে পেরে ভীষণ আনন্দ পেল ছেলের দল।