আজ আট- নেই আস্বাদ
-রীণা চ্যাটার্জী
স্বামীর মঙ্গল কামনায় স্ত্রী-র উপবাস। উল্টোটা কোনো দিন ভাবা হলো না- আজ নারীদিবস।
ঘরোয়া শিক্ষার অঙ্গ, স্বামীর সংসারে গিয়ে সব মানিয়ে, মেনে চলতে হবে। উল্টোটা শেখানোর প্রয়োজন নেই, কারণ নারীর ঠিকানার ঠিক নেই- আজ নারীদিবস।
ঋতুকালীন যন্ত্রণার দিনেও নারীকে সকাল থেকে রাত হেঁশেল থেকে অফিস সব সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে হবে। না হলেই ঘরে বাইরে সমালোচনার আঙুল। উল্টোটা? ওটা তো সম্ভবই নয়- তবুও আজ নারীদিবস।
সন্তান জন্মের প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করেও নারীকেই মা হওয়ার শিক্ষা নিতে হয়- উল্টোটা? ওটা তো তান্ত্রিকতার অধিকার- আজ নারীদিবস।
বিধি, আচার-আচরণ, নিয়ম-কানুন সব শিখে নিতে হবে নারীকে- উল্টোটা? ছিঃ তাই আবার কখনো হয়! আজ নারীদিবস।
কি আর করলে সারাদিন? এই প্রশ্নটা একতরফা। উল্টোটা ভাবতে শেখানোর শিক্ষক কোথায়? আজ নারীদিবস।
পুত্র সন্তানের মা জানেন, তাঁর সন্তানের তো ঠিকানা আছে। আলাদা করে সামাজিকতা, গার্হস্থ্য শিক্ষার দায় থেকে তার রেহাই। কন্যা সন্তানের মা’কে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয় তাঁর মতো যে তাঁর কন্যার ঠিকানা বদলের পালা আসবে একদিন- গার্হস্থ্য শিক্ষার মান কম থাকলেই বংশের তুলোধোনা- আজ নারীদিবস।
উদাহরণ যত, বিতর্ক তত। বিপক্ষে ধ্বজা ধরার জন্য ভিড় লেগে যাবে- তাতে অবশ্যই অনেক নারীমুখ দেখা যাবে। আসলে ওনাদের রক্তে, মজ্জায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে নারীজন্মের তথাকথিত অর্থ- মেনে নেওয়া, মানিয়ে নেওয়া। কন্যাসন্তানকে শিখিয়ে নেওয়া, পুত্রবধূকে সংসার ধর্মে শিক্ষিত করে তোলা- ওনারা নিজেদের একনিষ্ঠ ধর্ম বলে মনে করেন। জীবন শেষে যা পাওয়া যায়- একটু ঠুনকো কর্তৃত্ব, কয়েকটি চাবি, সবার দাবি মিটিয়ে-মেটাতে ভগ্ন বা আধভগ্ন শরীরে হাসি-হাসি মুখ, সুখী-সুখী ভাব। মূল্যায়ন- সে আবার কি? আমার ‘আমি’কে বিসর্জন দিয়ে এই তো সংসার- সব পেয়েছির আসর।
বদল আসছে চিন্তাধারায়, আগামী প্রজন্ম ভাবছে- ভাবতে শিখছে নতুন করে। সমবেদনা নয় মূল্যায়নের দাবীতে প্রশ্ন তুলছে। প্রয়োজন একটু সাথ দেবার- ওদের কথাগুলো শুনতে আমাদের শিখতে হবে।
হ্যাঁ, শিখতে হবে- কারণ এখন সোস্যাল মিডিয়ার দৌলতে আপডেট মূলক অভিনন্দন বার্তার প্লাবনে একটি প্রতীক দিবস- নারী দিবস। শ্রমের সমমূল্য নির্ধারণ ও মানবিকতার তাগিদে দিনটি সূচনার হাত ধরলেও শ্রমের মূল্য তো দূরে থাক- প্রকৃতভাবে নারীর মূল্যায়ন এখনো হয় নি, আর ভাবনাতেও নেই। নারীদিবস তাই স্বাদে আসে নি, আপডেটের আহ্লাদে, কবিতার সুগন্ধি মেখে ঘুমিয়ে আছে। জাগাতে হবে, বাঁচাতে হবে, সাধে-আস্বাদে।
আর সেই অনাস্বাদিত স্বাদের ঘ্রাণটুকু হয়তো আসবে আগামী প্রজন্মের হাত ধরে, সেই ঘ্রাণের ভাগ নিতে হাত ধরতে হবে ওদের- যারা সমবেদনা নয়- সম্মানের প্রশ্নে ঝড় তুলেছে।
সাজিয়ে রাখা হাসি মুখগুলোও সেদিন বুঝে নিতে চাইবে নারীর প্রকৃত মূল্যায়ন। সবাই হাত ধরলে একটা বিশেষ দিন বলতে হবে না- ‘আজ নারীদিবস’
বলবো আবার-“ইচ্ছে, সুখে হোক না নারী দামী..”
খুব ভালো বক্তব্যে সুন্দর লেখা
ধন্যবাদ 🙏
নতুন করে আর কিই বা বলবো, অনবদ্য, অসাধারণ বল্লেও তো কম বলা হয়….
দারুণ লিখেছেন দিদিভাই
বাহ, বড় সুন্দর লেখাটা। কিন্তু সত্যিই কি পারবে আগামী প্রজন্ম… মনে বড় শঙ্কা, সন্দেহ এবং আশঙ্কাও…. তবে হ্যাঁ তারা পারুক এই কামনা অবশ্যই করি।
আগামী কথাটা একটু ব্যাপক অর্থে ধরতে হবে- কারণ পরিবর্তন একদিনে এক জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে না। আর ওদের কথা শোনা, ওদের মতো করে ভাবতে শেখা, ওদের ওপর গতানুগতিক চিন্তাধারার বোঝা চাপিয়ে না দেওয়া- সবকিছুর ওপর নির্ভর করছে এই পরিবর্তন। মনে শঙ্কা আর ভয় নিয়ে যেন ওদের দিকে সন্দেহের তির ছুঁড়ে দেওয়া হচ্ছে- মানসিকতা এটা হলে অবশ্যই প্রশ্ন চিহ্ন থেকে যাবে।
অনবদ্য সৃজন কবি
ধন্যবাদ সুধী🙏
খুব ভালো লেখা, তবে বদলে যাচ্ছে অনেক টাই।
তবে কথাটাই আসল কিন্তু- ধন্যবাদ 🙏