“বাপ বাপই হয়”
-রাখী চক্রবর্তী
শশীভূষণ– গঙ্গার পারে বসলে মনটা হু হু করে ওঠে। তোমারও হয় নিশিকান্ত?
নিশিকান্ত- হয় সব হয়, নিরিবিলি জায়গা, পাখীদের..
শশীভূষণ– রাত হলো কি পাখীগুলো কিচির মিচির করা শুরু করে দিল। বটগাছের কি বিশ্রাম নিতে নেই?
নিশিকান্ত- না না শশীভূষণ, পাখীগুলো ক্যাঁচর ম্যাচর করে। আর বটগাছই তো ওদের আশ্রয় দিয়েছে। তা না হলে ওরা থাকতো কোথায়।তোমার ঝাঁকড়া চুলের মধ্যে!
শশীভূষণ– রসিকতা করছো। তবে জানো আগে বেশ লাগত পাখিদের ঝগড়া শুনতে। তারপর যখন গিন্নি এল, তখন থেকে পাখিরাই আমাদের ঝগড়া শুনতো।
নিশিকান্ত– হা হা, ভালো বলেছো শশীভূষণ।
এখন পরম শান্তিতে আছো কি বলো?
শশীভূষণ– শান্তি আর কোথায় ! চিন্তা যে পিছু ছাড়ে না। বলি তুমি কতোটা শান্তিতে আছো নিশিকান্ত?
নিশিকান্ত– আমি! দিনে চোখের পাতা এক করতে পারি না। ছবি সন্তানসম্ভবা। বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত টেনশন থাকবে। তবে তোমার সাথে দু’দণ্ড কথা বলে যেটুকু শান্তি পাই, তাই নিয়ে দিব্য আছি।কেমন ফুলে ফেঁপে গেছি দেখো।
শশীভূষণ — ও ও, আমার ঘরটা কেমন ফুলে ফেঁপে উঠেছে ।
নিশিকান্ত –মানে! ঘর আবার ফুলে ফেঁপে ওঠে নাকি ?
শশীভূষণ- যত কাচরা সব এখন আমার ঘরে রাখে বৌমা। ট্রাঙ্ক, ব্যাগ ,পুরনো খাতা বই। পরত এর ওপর পরত জুতো। আগে এই ঘর আমার কাছে মন্দির ছিল।
নিশিকান্ত– ও তাই বলো। আমরাই তো আবর্জনা, তা আমাদের ঘর কি করে মন্দির হবে?
শশীভূষণ — ঐ ছেলে মেয়েটা গঙ্গার ধারে ঘুরঘুর করছে দেখছো তো। মনে হয় বসার জায়গা ঠিক যুত্সই হচ্ছে না।
নিশিকান্ত– তাই হবে। গাছের তলায় সিমেন্টর বেঞ্চ তো পাখিদের টয়লেট করার জায়গা। কতো এ্যা লেগে আছে। সাদা হলুদ, কালো।
আমরা বেশ ভালো বসার জায়গা পেয়েছি।
শশীভূষণ– ওদের দেখে আমার যৌবনের উন্মাদনা ফিরে এল।
নিশিকান্ত– মরণ দশা। তোমার ছেলের বয়সী।ভালো করে দেখো।
শশীভূষণ– এই নিশিকান্ত ছেলেটার চুলের কাটিংটা রজতাভ’র মতো না! হ্যাঁ গো ও আমার ছেলে রজতাভ!
নিশিকান্ত– দাঁড়াও ভালো করে দেখি। অন্ধকার তো..
শশীভূষণ– হা হা হা। তোমার আমার আবার অন্ধকার। আমাদের জীবনে কখনও আলো ছিলো?
নিশিকান্ত– হ্যাঁ ও রজতাভ, চলো আমরা উঠে যাই ওদের বসতে দিই। বকবকম্ করুক ওরা। ঐ দেখো ওরা এখানেই আসছে।
শশীভূষণ– পুলিশের ভ্যান এখন এখানে কেন?দেখো নিশিকান্ত। আমার রজতাভ’র কোন বিপদ হবে না তো।
নিশিকান্ত– মেয়েটার সাথে পুলিশ কি কথা বলছে। ওহ আচ্ছা, পুলিশ মেয়েটিকে ধরতে এসেছে। রজতাভ মেয়েটির সাথে আছে। বিপদ হলেও হতে পারে রজতাভ’র। কোথায় গেলে শশীভূষণ? শশীভূষণ…শশীভূষণ
শশীভূষণ– ছেলেকে পুলিশের হাত থেকে বাঁচাতে গেছিলাম, পুলিশ চোখে ধাঁধা দেখছে এখন। দেখো, কেমন করে রজতাভকে খুঁজছে..
নিশিকান্ত –তাই তো। কিন্তু রজতাভ কোথায়?
শশীভূষণ– ঐ দেখো, গঙ্গার ঘাটে যে নৌকাটা বাঁধা আছে। ওই নৌকাতেই আছে রজতাভ আমার ছেলে।
নিশিকান্ত — বাপ বাপই হয়। কি বলো। যে ছেলে তোমার গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারলো। সেই ছেলেকে পুলিশের হাত থেকে বাঁচালে..
শশীভূষণ –তুমি বা কম কিসে যাও। ছবি’ও তোমার সব সম্পত্তি নিয়ে তোমাকে ধাক্কা মেরে ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছিল। এমন মেয়ের জন্য চিন্তাতে তোমার দুপুরে ঘুম আসে না। আসলে বাপ বাপই হয়।
চলো নিশিকান্ত তাল গাছে চড়ে বসি, তা না হলে থাকার জায়গা পাবো না, আজ সকালে চারটে বাবার আমাদের মতো ভয়ানক মৃত্যু হয়েছে।
নিশিকান্ত– ওই বাপরাও কি আমাদের মতো ছেলেমেয়েদের জন্য ভাববে?
শশীভূষণ– হ্যাঁ, হ্যাঁ বাপ বাপই হয়।