মনোরথ
– লোপামুদ্রা ব্যানার্জী
-হ্যাঁ গো বৌমা, তুমি কি মেয়েছেলে গো? স্বামী রাগ করে না খেয়ে শুয়ে পড়লো আর তুমি দিব্যি বসে বসে মুরগির ঠ্যাং চিবোচ্ছো!
সবে মাত্র লেগ পিসটাতে কামড়টা বসিয়েছিল শ্রাবন্তী। একটু বিরক্ত হয়েই বলে, আপনার ছেলে যদি রাগের হোল সেল মার্কেট হয় তাহলে আমি কি করবো মা?
-দেখো বৌমা, পুরুষ মানুষের অমন একটু আধটু যখন তখন রাগ হয়। তা বলে তুমি স্ত্রী হয়ে অভুক্ত স্বামীর আগে খেয়ে নিলে?
শ্রাবন্তীর এগারো বছরের মেয়ে শ্রীমন্তী বলে ওঠে, ঠাকুমা স্ত্রীরা যদি অভুক্ত স্বামীর আগে খেয়ে নেয় তাহলে কি হয়?
শ্রীমন্তীর ঠাকুমা মৃদুলা দেবী চোখগুলো গোল গোল করে বলে, পাপ হয় পাপ, মহাপাপ।
শ্রীমন্তী আবার জিজ্ঞাসা করে, ঠাকুমা পাপ কি ? আর মহাপাপ কি পাপের বাবা?
শ্রাবন্তী আর না হেসে থাকতে পারলো না। মাথাটা নিচু করে চোখ, মুখ বন্ধ করে নিঃশব্দে হেসে চলেছে।
মৃদুলা দেবী শ্রীমন্তীকে বলে পাপ করলে নরকে যেতে হয় আর পূর্ণ করলে স্বর্গে।
শ্রীমন্তী খেতে খেতে বলে, ঠাম্মা নরক আর স্বর্গের মধ্যে কি তফাৎ?
-নরকে গরম তেলের কড়াই-এ মানুষকে ঢুবানো হয় আর স্বর্গে সুখই সুখ। কত আরাম।
শ্রীমন্তী বলে, কবে আমি স্বর্গে যাবো?
-বালাই ষাট! তুই কেন এইসব জায়গায় যাবি! এই তো তোর কচি বয়স।
-তুমি তো ঠাকুমা বুড়ি হয়ে গেছো। তাহলে কি এবার তুমি স্বর্গে বা নরকে যাবে?
কিছুটা বিরক্তির সুরে মৃদুলা দেবী বলে, ওরে আগে মরি। তারপর তো যাবো এইসব জায়গায়।
শ্রীমন্তী আবার বলে, মৃতদেহের শরীরে তো কোন অনুভূতি থাকে না। তাহলে তো তাকে গরম তেলে ফেলা হলেও তার তো কোন অনুভূতি থাকবে না। সুতরাং সে কোন কষ্ট ও পাবে না।;তাই না ঠাকুমা?
এবার মৃদুলা দেবী রেগে গিয়ে বলে, মাংসের হাড় চিবোচ্ছো, চিবোতে থাকো। খেতে খেতে এতো কথা কেউ বলে না।
ঠাকুমার কাছে ধমক খেয়ে শ্রী ( শ্রীমন্তী) চুপচাপ খাবারের থালাতে মনোনিবেশ করে।
শ্রাবন্তী শ্রী-কে জিজ্ঞাসা করে, কি রে একটা লেগ পিস দিই তোকে?
শ্রী তাড়াতাড়ি হাত নেড়ে বলে, থাক মা । বাবাকে দিও। বাবা তো লেগ পিস খেতে পছন্দ করে।
মৃদুলা দেবী শ্রীর কথা শুনে বলে, মেয়ের তো বাপের ওপর টান হবেই। দেখো এইটুকু মেয়ে কেমন বাবার কথা ভাবছে! হ্যাঁ গো বৌমা, তোমাদের তো ভাবের বিয়ে। এ কেমন তর ভাব তোমাদের। হৃদয় বলে কি তোমার কিছুই নেই?
শ্রাবন্তী আঙ্গুলগুলো ভালো করে চেটে বলে, ছিল বারো বছর আগে হৃদয় নামক একটা বস্তু আমার। এখন আর সত্যি আমার কাছে নেই। ওটা তো আপনার ছেলেকে দিয়ে দিয়েছি। আর আপনার যদি এতই অসুবিধা হচ্ছে যান না আপনার ছেলের কাছে। ডেকে নিয়ে আসুন তাকে খাবার টেবিলে। তাহলে বুঝবো আপনার ছেলে কেমন আপনাকে মান্য করে।
মৃদুলা দেবী বলে, বৌমা চ্যালেঞ্জ করো না। আমার খোকা সেই ছেলেই নয় যে মায়ের কথা অমান্য করবে।
শ্রাবন্তী মুচকি হেসে বলে, খুব আশ্বস্ত হলাম মা। আমি রান্নাঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে শুতে যাচ্ছি। আপনি আপনার ছেলেকে খাবার বেড়ে দেবেন।
এই বলে শ্রাবন্তী কিচেনের কাজগুলো গুছিয়ে বাথরুমে যায় ফ্রেশ হতে। এই কদিন বেশ ভ্যাপসা গরম পড়েছে। জলে ভালো করে ওডি-কোলন দিয়ে বেশটি করে স্নান করল সে। তারপর স্লিভলেস সাদা সুতীর নাইটটা পরে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো।
আজও কিন্তু শ্রাবন্তী বেশ সুন্দরীই আছে। তলপেটে মেদ জমলেও অতিরিক্ত নয়। রোজ সকালে উঠে নিয়ম করে ব্যায়াম করে। প্রথম প্রথম আকাশকে পীড়াপীড়ি করতো একটু ব্যায়াম করার জন্য। আকাশের চূড়ান্ত অনীহা দেখে আজকাল আর কিছুই বলে না সে।
শ্রাবন্তী, আকাশের প্রেম কলেজ লাইফ থেকে। আকাশের প্রেমে হাবুডুবু খেতো শ্রাবন্তীই বেশি। আকাশ কলেজ পাশ করার বছর তিনেকের মধ্যেই যেমনি সরকারি চাকরিটা পেয়ে গেল তেমনি শ্রাবন্তী বিয়েটা ছটপট সেরে নিতে চাইলো।
নিজের কেরিয়ার নিয়ে তেমন ভাবে নি কিছুই শ্রাবন্তী। আসলে তখন তার বড্ড বিয়ে পেয়েছিল। স্বপ্নে, জাগরণে সে মগ্ন আকাশের প্রেমে। তবে সেই মগ্নতার রেশ খুব বেশি দীর্ঘ হয় নি। অষ্টমঙ্গলার পর থেকেই শুরু হয়েছিল হৃদয়ের ভগ্নতা।
ছোট্ট ছোট্ট কথা আমাদের মনকে অসীম আনন্দে ভরিয়ে তোলে আর ছোট্ট ছোট্ট মনান্তর আমাদের মনকে ভেঙে খানখান করে দেয়। শ্রাবন্তীর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। শ্রাবন্তী ও আকাশ দুটো সম্পূর্ণ আলাদা পরিবেশ থেকে বড় হওয়া দুটো মানুষ।
শ্রাবন্তী ছোটবেলা থেকেই গান করতে খুব ভালোবাসে। স্কুলের, পাড়ার যে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সে গান গাইতে স্টেজে উঠবেই।
শ্রাবন্তীর অষ্টমঙ্গলার পর পর-ই রবীন্দ্র জয়ন্তী অনুষ্ঠিত হয়েছিল আকাশদের পাড়ায়।
শোনা মাত্রই শ্রাবন্তী আনন্দে, উৎফুল্ল হয়ে আকাশকে বলে, আমি একটা রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইবো তোমাদের পাড়ার অনুষ্ঠানে।
পাশে বসেই ছিলেন মৃদুলা দেবী। উনি বললেন, সে কি গো বৌমা! এই তো কদিন বিয়ে হয়ে এলে। আগে পাড়ার লোকজনদেরকে ভালো করে চেনো, জানো। তারপর তো ওদের সাথে অনুষ্ঠান করবে।
আকাশও একটু বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, সে না হয় বলে দিতে পারি কিন্তু তুমি এতো পাবলিসিটি প্রিয় তা তো আগে জানতাম না।
শ্রাবন্তী যেন আকাশ থেকে পড়লো। রবীন্দ্র জয়ন্তীতে একটা গান গাইবে তার জন্য তার পাবলিসিটি নিয়ে ওদের মাথা ব্যথা হয়ে গেল।
আকাশের ওপর রাগ করেই শ্রাবন্তী সেবার আর রবীন্দ্রজয়ন্তীতে গান গাইতে গেল না। কিন্তু চোখের জলে ভিজিয়ে ছিল বালিশ। তবে আকাশ কিন্তু একটি বারের জন্যও স্নেহমাখা হাত দিয়ে শ্রাবন্তীর চোখের জল মুছিয়ে দেয় নি। হয়তো টের পায়নি কখন শ্রাবন্তী নিঃশব্দে কেঁদে ছিল।
বিয়ের পরের বছরই কোল আলো করে এলো শ্রীমন্তী। যখন নার্স এসে জানালো তার মেয়ে হয়েছে তখন খুব আনন্দ হয়েছিল শ্রাবন্তীর। মনে মনে ঠিক করে রেখেছিল মেয়েকে তার মনের মতো করে বড় করবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি।
শ্রীমন্তী বছর চারেক এর হতে না হতেই তাকে ড্রয়িং, ডান্স স্কুলে ভর্তি করে দিল।
শ্রী ড্রয়িং করতে ভালোবাসলে ও নাচতে মোটেই আগ্ৰহী ছিল না। তাও বছর তিনেক টেনে টেনে নাচের স্কুলে নিয়ে গিয়েছিল শ্রাবন্তী। তারপর শ্রাবন্তী নিজেই হাল ছেড়ে দিয়েছিল। শ্রাবন্তী ভাবলো পড়াশোনাটাই করুক মন দিয়ে।
শ্রী নাচ ছেড়ে দেওয়ায় খুশি মনে আকাশ বলেছিল, আমি তো আগেই বলেছিলাম ওসব নাচ টাচ শিখিয়ে লাভ নেই। তার চেয়ে ড্রয়িং-টা শিখুক। লেখাপড়াতেও কাজে লাগবে। ধীরে ধীরে শ্রাবন্তী বেশ বুঝতে পারছিল আকাশের ভাবনার জগত আর তার ভাবনার জগতের মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক। কিন্তু তা বলে কি শ্রাবন্তী তার সাংস্কৃতিক দিক থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেবে? না, শ্রাবন্তী এই বারো বছরে নিজের মনকে নতুন করে ঠেলে সাজিয়ে নিয়েছে। সময় পেলেই সে হারমোনিয়াম নিয়ে বসে পড়ে। রবীন্দ্র সংগীতের জন্যই যেন তার গলাখানি তৈরী। অপূর্ব লাগে তার গলায় শুনতে, ‘আমি তোমার প্রেমে হবো সবার কলঙ্ক ভাগি’, ‘ যেদিন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’ অথবা ‘ জাগরণে যায় বিভাবরী.. ‘
আকাশদের পাড়ায় এখন মোটামুটি সকলেই জেনে গেছে আকাশের বউ খুব ভালো রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়। আর সেই কারণেই আজ তাদের পাড়ার ক্লাবের ছেলেরা সন্ধ্যা বেলায় এসেছিল আকাশদের বাড়ি।
তারা শ্রাবন্তীকে অনুরোধ করে দূর্গা পূজার সপ্তমীর দিন সন্ধ্যায় যেন শ্রাবন্তী এক দেড় ঘন্টা তাদের পূজা মন্ডপে গান গায়। আর এই কাজের জন্য ক্লাব কমিটি শ্রাবন্তকে পাঁচ হাজার টাকা পারিশ্রমিক হিসেবে দিয়ে যায়। আর এইখানেই আকাশের আপত্তি।
আকাশের যুক্তি, ওদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া মানে কিন্তু ওদের হাতে চলে যাওয়া। এবার থেকে যখন তখন শ্রাবন্তীকে পাড়ার ছেলেরা ডাকবে গান গাইতে। আর আজকাল ক্লাবগুলোতে বারোমাসে চব্বিশ পার্বণ লেগেই আছে।
শ্রাবন্তী রসিকতা করে আকাশকে বলেছিল, তাহলে তোমার বউ-এর পাবলিসিটি বেড়েছে বলো। গান গাওয়ার জন্য লোকে পয়সা দিতে চাইছে। ভালোই হলো বুঝলে। এবার থেকে গানটাকে আমার জীবিকা করে নেবো।
আকাশ বিদ্রুপের সুরে বলে, বাড়ির নিরাপত্তা ভালো লাগছে না আর? তাই বাইরে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। এই শেষ কথাটার মধ্যে যথেষ্ট কু ইঙ্গিত ছিল।
শ্রাবন্তী এই কথাটা শোনা মাত্রই প্রতিবাদী কন্ঠে বলে ওঠে, নিজের মানসিকতা দিয়ে অন্তত আমার মনকে বুঝতে এসো না।
আকাশ হঠাৎই চিৎকার করে বলে উঠে ছিল, আমার মানসিকতা খারাপ! তুমি এতদিনে আমাকে এই চিনলে? আমার উচিত’ই হয় নি তোমার পাড়ায় গান গাওয়া নিয়ে কোনো কথা বলা। তোমার যা ইচ্ছা তাই করো।
এই বলে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ড্রয়িং রুম ছেড়ে বেড রুমে চলে যায়। ঘরে ঢুকে ফ্যানটা ফুল স্পিডে চালিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়েছিল।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে শ্রাবন্তী ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে রাত্রিকালীন রূপচর্চা করতে। গোলাপ জল,নাইট ক্রিম, পাউডার এইসবের সুগন্ধি নাকে ভুরভুর করে ঢুকছে আকাশের। রূপচর্চা শেষ করে শ্রাবন্তী খাটের ওপর এলিয়ে দেয় তার সতেজ শরীরটা।
আজ আর আকাশের অভিমানে শ্রাবন্তীর চোখে জল আসছে না। বরং মন থেকে কোথাও যেন জোর পাচ্ছে সে। আজ আর রাতের খাবার আকাশ খেলো না বলে তাকে পীড়াপীড়ি করলো না। বরং মনে মনে সে বললো, পেটের জ্বালা ধরলে বাপ বাপ করে খাবে। তাছাড়া তার শাশুড়ি মা তো ছেলের খাবারের দায়িত্ব নিয়েছেন। সুতরাং শান্তিতে এবার নিদ্রা যাওয়া যায়।
চোখটা সবে লেগেছে হঠাৎ শ্রাবন্তী বুঝতে পারে তার কোমরে আকাশ হাত রাখলো। শ্রাবন্তীর কাঁধের কাছে মুখ নিয়ে এসে আকাশ বলে, আমি খুব খারাপ না? তোমাকে খুব কষ্ট দিই।
শ্রাবন্তী তো অবাক হয়ে যায়। এতবছর আকাশের কথায় ব্যথা পেয়ে যখন কেঁদে কেঁদে চোখ জবা ফুলের মতো লাল করে ফেলেতো, যখন অধীর আগ্রহে আশা করে বসে থাকতো আকাশের কাছ থেকে একটু সান্ত্বনা বাক্য শোনার জন্য তখন অবজ্ঞা ছাড়া কিছুই জোটে নি।
আর আজ যখন নিত্য অশান্তিতে পুড়ে মনটা পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে তখন আকাশ সহানুভূতির হাত বাড়াচ্ছে। কি অদ্ভুত !
নিজের মনেই মৃদু হেসে চলেছে শ্রাবন্তী। আকাশের দিকে মুখটা ঘুরিয়ে বলে, যদি রাগ কমে গিয়ে থাকে তাহলে যাও গিয়ে খেয়ে নাও। তোমার মাকে বলবে খাবার বেড়ে দেবে।
আকাশ তাড়াতাড়ি বলে, মা কেন? তুমি খাবার বেড়ে দেবে না আমায়।
-না ,আজ আর আমি দিতে পারবো না। এইমাত্র ফ্রেশ হয়ে শুলাম।
– শ্রাবন্তী তুমি কি আমার ওপর এখনো রেগে আছো। প্লিজ লক্ষ্মীটি আর রাগ করো না। তুমি ক্লাবের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতে চাইছো, গাও না। কোনো আপত্তি নেই আমার। তবে ওদের কাছ থেকে টাকা পয়সা না নেওয়াই ভালো। বুঝলে।
শ্রাবন্তী কিছুতেই বুঝতে পারছে না টাকা পয়সা নিলে আকাশের অসুবিধাটা কোথায়? একবার ভাবলো আকাশের কথাটাই শুনবে সে। ক্লাব কমিটিকে টাকাগুলো ফিরিয়ে দেবে।
কিন্তু পরমুহুর্তেই শ্রাবন্তীর মনে হলো, এতগুলো টাকা ছেড়ে দেবো। জীবনে এই প্রথম তার যোগ্যতার দাম কেউ দিচ্ছে। তাছাড়া তো মাঝে মধ্যে তো শুনতে হয় শাশুড়ি, বর এদের কাছ থেকে যে, রোজগার করলে বুঝতে টাকার দাম কত। ঈশ্বর যখন সেই সুযোগ শ্রাবন্তীকে দিচ্ছে তখন সেই সুযোগ হাতছাড়া করার কোন মানেই হয় না।
শ্রাবন্তীর উত্তরের অপেক্ষায় তৃষিত চাতকের মতো শ্রাবন্তীর মুখের দিকে চেয়ে আছে আকাশ। শ্রাবন্তী ঠোঁটের কোণে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, রোজগারের স্বাদ যখন পেতে চলেছি তখন তাকে আমি গ্ৰহণ করবোই।
তোমার চিন্তা নেই তোমাদের কারোর খাওয়া দাওয়ার কোন অসুবিধা হবে না। যাও গিয়ে খেয়ে এসো। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। আর হ্যাঁ, তোমার জন্য লেগ পিস আছে রাখা। খেয়ে নিও।
আকাশ বুঝতে পারছে শ্রাবন্তী খুব শক্ত মুডে আছে। বেশি বাগবিতণ্ডা না বাড়িয়ে একটু কষ্ট করে হাসি এনে বলে, তুমি তো লেগ পিস খেতে ভালোবাসো। তুমিই খেতে পারতে। আমিই তো সবসময় খাই।
শ্রাবন্তী এবার মাথা বালিশের উপর হাত দিয়ে নিজের মাথাটা তুলে বলে, আমি আজ লেগ পিস খেয়েছি। শ্রী খায় নি। তোমার জন্য রেখে দিয়েছে।
আকাশের বিস্ময় আর শেষ হচ্ছে না। আর কোনো কথা না বাড়িয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে নিজেই টেবিলের ওপর রাখা খাবারগুলো একটা প্লেটে নিয়ে খেতে লাগলো।
শ্রাবন্তীর আজ মনে মনে খুব আনন্দ হচ্ছে।
আত্মতৃপ্তিতে মন খানিক ভরে উঠেছে। সংসার ধর্ম পালন করার নামে নারীই শুধু বঞ্চিত হয়ে আসছে দিনের পর দিন। মেয়েদের গায়ে জোর করে যেন ত্যাগীর লেবেল এঁটে দেওয়া হয়েছে। মন না চাইলেও সমাজের ভয়ে, লোকলজ্জার ভয়ে অনেক ত্যাগই মেয়েরা স্বীকার করে পরিস্থিতির চাপে।
তবে শ্রাবন্তী আজ পেরেছে, শুধু মনের কথা শুনতে। মনটাকে আজ আর ভারি লাগছে না তার। বরং বেশ হালকা, ফুরফুরে মনে হচ্ছে।
শ্রাবন্তী নিজের মনেই বলে, এবার থেকে নিজের মতো করে বাঁচবো। আর মেয়েকেও শেখাবো স্বাধীন দৃষ্টি ভঙ্গি ও মানসিকতা নিয়ে বাঁচতে। বেশ ঘুম আসছে দু’চোখ জুড়ে। আজ আকাশের জন্য অপেক্ষা করলো না শ্রাবন্তী। নাইট ল্যাম্পটা জ্বেলে মনোরথে চেপে ঘুমের দেশে পাড়ি দিল শ্রাবন্তী।