কবিতা- পদ্মঝিলের ওপারে

পদ্মঝিলের ওপারে
– সুনির্মল বসু

 

 

প্রজাপতি ওড়া সকাল, ফুলের উপত্যকা, পদ্ম ঝিলের ওপার,
আজও আমায় ভাবায়, আজও তোমার স্মৃতি আমাকে কাঁদায়, জীবন থমকে থামে, স্মৃতির কিনারায়,
সুকন্যা, তোমাকে কি স্মৃতি থেকে মোছা যায়,
নিম গাছের ছায়া, নদীর পাড়, সরল রাজপথ, মধুময় সোনা ঝরা সন্ধ্যা, সে কথা জানে,
জীবনের তখন ছিল অন্যরকম মানে,

হলুদ শাড়িতে সবুজ আল পথ পেরিয়ে আশ্চর্য তোমার সেই জল টুকু ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলা,
কিছু বলা, কিছু না বলা,
তোমাকে একটা দিন না দেখতে পেলে, শহরে অঘোষিত বন্ধ, নদীতে থমকে যাওয়া জাহাজ,
পার্কস্ট্রিটে পথে দাঁড়িয়ে যায় বিপন্ন এম্বুলেন্স,

সুকন্যা, দোলনচাঁপার বন পেরিয়ে পদ্ম ঝিলের ওপারে তোমাদের মাটির বাড়ি,

টালির চাল, কাঠবাদাম গাছের ছায়া, সবুজ পাতার নিচে মাছরাঙ্গা, উদাসী দিন, অবুঝ স্বপ্ন ভেসে যায়,
সেদিন রিবন দিয়ে চুল বেঁধে আলপথ ধরে তুমি আসতে, বাতাসে ভাসতে, আর আমি, গভীর মুগ্ধতায় ভালোবাসায় মরে যেতাম,

একদিন বললাম, অ্যাই, তুমি আমার ভোরের বাতাস হবে,
তুমি বললে, আমি যা আমি তাই,
তোমাকে কি সকাল বেলার সুর বলবো,
আমি সুকন্যা, আমাকে সুকন্যাই বলবে,

একদিন নদীর ওপারে তোমার বিয়ে হয়ে গেল,
আমি তখন কাঠ বেকার,
আকাশ দেখা ছেলেকে ভালোবাসা যায়, বিয়ে করা যায় না,
কপালে কুমকুম টিপ, লাল বেনারসীতে তুমি তখন
কেমন অনন্যা,
সুকন্যা, তুমি চলে গেলে, কতদিন তোমাকে দেখি না,

আজো জানালা দিয়ে পদ্মঝিল দেখি,
সব এক রকমই আছে,
আজো ঝিলে গঙ্গাফড়িং ওড়ে, প্রজাপতি রঙ ছড়ায়,
আজ আমার থেকে বহু দূরে তুমি সুকন্যা,
পদ্ম ঝিলের ওপার কাঁদে, স্মৃতি রঙ বদলায়,
পৃথিবীতে আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতি হয়,
নদী মোহনার দিকে যায়,
চলে যাওয়া সময় আর কখনো ফিরে আসে না।

Loading

Leave A Comment