যে নদী হারায় স্রোত
-সুনির্মল বসু
আমি অনামিকা, আসল নামটা গোপনেই থাক, এই নামটাই ভালো, কী হবে আসল নামটা জেনে!
সারা দেশে আমার মতো কত দুঃখী মেয়ে আছে, যাদের রূপ নেই, ডিগ্রি নেই, বাপের পয়সা নেই। জীবনের সব ক্ষেত্রে হার যাদের ললাট লিখন, আমি তাদেরই একজন।
সুকল্যাণ দ্যাখো, কী বোকা আমি, একদিন তোমাকে নিঃশর্তে ভালোবেসেছিলাম, বিশ্বাস করেছিলাম। তোমার এম,এ পরীক্ষার আগে যখন রাত জেগে তুমি পড়তে, নকশা কাঁটা চাদর গায়ে আমি আমাদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতাম, তুমি না ঘুমোতে গেলে, আমি ঘুমোতে যেতে পারতাম না।
সুকল্যাণ, তুমি বলেছিলে, চাকরি পেলেই বিয়ে হবে আমাদের। চাকরি হচ্ছিল না তোমার, বাড়িতে আমার জন্য পাত্র দেখা শুরু হয়েছিল, আমি বেঁকে বসেছিলাম, বাবা মাকে জানিয়েছিলাম, আমাদের ভালোবাসার কথা,ওরা চুপ করে গেছিলেন। আমি যে জেদী, তা ওরা জানতেন।
কতদিন তখন তুমি আর আমি বনজ্যোৎস্নায়, অন্ধকারে হেঁটে গেছি, কৃষ্ণচূড়ার বন, রাজপথ, নদীর ধার আমাদের ভালোবাসার সাক্ষী থেকেছে, ভবিষ্যৎ জীবনকে ঘিরে দুজনে একসঙ্গে কত স্বপ্ন দেখেছি।
তারপর একদিন শুনলাম, তোমার চাকরি হয়েছে, বিনিময়ে ওদের মেয়েকে বিয়ে করতে হবে।
বিয়ে হলো তোমাদের, তোমার জীবন থেকে হারিয়ে গেলাম আমি।
শুনেছি গাড়ি, বাড়ি, সংসার, সব নিয়ে সুখী তুমি। ভালো..তবু, মায়াবী বিকেলগুলো, নদীর ধার, রাতের আকাশ কেন যে এত কাঁদায়!
ভরা নদী শুকিয়ে গেলে, মরুভূমি হয়ে যায়, চেয়ে চেয়ে দেখলাম।