Site icon আলাপী মন

অণু গল্প- ইনক্রিমেন্ট

ইনক্রিমেন্ট
-জয়তী মিত্র

আজ বিমলবাবু খুব খুশি। তার আজ ইনক্রিমেন্ট হয়েছে। ফলে মাইনে বেশ খানিকটা বেড়ে গেছে। বিমল বাবু একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। একমাত্র ছেলে বাইরে পড়াশুনা করে। এখানে উনি আর ওনার গিন্নি থাকেন। গিন্নি সুলতা খুব জাঁদরেল আর মুখরা টাইপের মহিলা, তাই বিমোলবাবু গিন্নিকে একটু সমঝে চলেন।
মাইনে বেড়েছে বলে খুশি হয়ে বিমল বাবু পাড়ার মোড়ের মাথা থেকে গরম কচুরি আর ছানার জিলিপি নিয়ে বাড়ি গেলেন। সুলতা কচুরি খেতে খুব পছন্দ করে।
বাড়ীতে পা রাখতেই গিন্নির মুখ ঝামটা শুরু হলো- পাশের বাড়ির মনিকা আর রেনুদি এসেছিল। মনিকার স্বামী দীপক বাবু কি সুন্দর এক জোড়া ঝুমকো গড়িয়ে দিয়েছে মনিকাকে, আমাকে দেখিয়ে গেল। আর রেনুদির স্বামী দশ হাজার টাকা দিয়ে একটা আসাম সিল্ক কিনে দিয়েছে। সেটাও নিয়ে এসে দেখিয়ে গেল। আমার গা জ্বলে যাচ্ছিল জিনিসগুলো দেখে। আর আমার পোড়া কপাল দেখো মিনসেটার হাত দিয়ে কিছু গলে না। খালি প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেয়- এই দেব, আর সেই দেব। দেবার বেলায় একটাই বুলি এখন টাকা নেই। সব চালাকি বুঝি, এত বছর সংসার করছি মানুষ চিনবো না। খালি মুখে মিষ্টি কথা বলে আমাকে দিয়ে কলুর বলদের মত সংসারের ঘানি টানিয়ে নিচ্ছে। ওরে বাবা! আজ আবার মন রাখতে কচুরি এনেছে, দেখো কি পিরিত, দেখলে গা জ্বলে যায়। আসল জিনিসের নাম নেই ভেবেছে খাবার জিনিস দিয়ে আমার মন ভোলাবে,আর আমি ভুলছি না।

গিন্নির মুখে এই বাক্যবাণ শুনে চুপ করে খাবারের ঠোঙাটা টেবিলে রেখে বিমল বাবু ফ্রেশ হয়ে বিছানার ওপর বসে বললেন, এক কাপ চা দাও তো।
সুলতা বললো, আমি এখন চা করতে পারবো না, একটু পরে দেব। আমার এখন অন্য কাজ আছে।
বিমল বাবু মনে মনে হেসে ভাবলেন এক্ষুনি মাইনে বেড়েছে শুনলে দশ কাপ চা দেবে সুলতা। আমি চিনি না ওকে! কিছু পাবার সময় গলার সুর কি মিষ্টি হয়ে যায়।
বিমল বাবু বললেন, সুলতা কাল রবিবার আমার সাথে একটু সোনার দোকানে যাবে, আমি একজোড়া সোনার দুল কিনে দেব তোমায়। আমার ইনক্রিমেন্ট হয়েছে।

পাশের ঘর থেকে লাফ দিয়ে এসে বরের গলা জড়িয়ে ধরে আদরমাখা সুরে সুলতা বললো, রোজ রোজ চা খাও আজ তোমাকে কফি করে দিচ্ছি বলেই রান্নাঘরের দিকে চলে গেল সুলতা। বিমল বাবু ভাবলেন, যাক ওষুধে কাজ হয়েছে, এখন কফিটা তো আয়েস করে খাই তারপর কি দেব সেটা পরে দেখা যাবে।
কফি হাতে নিয়ে এসে সুলতা বললো, আমাকে সোনা দিতে হবে না, তার থেকে বরং ঘুরতে নিয়ে চলো। দার্জিলিং চলো, সেই হানিমুনে একবার গেছিলাম। আর যাইনি। একটা পালাজো আর গাউন কিনেছি ওইগুলো পড়ে পাহাড়ে সুন্দর, সুন্দর ছবি তুলবো, মনিকা আর রেনুদি জ্বলে পুড়ে যাবে আমাকে দেখে। ওরা তো সাত জন্মে কোথাও যায় না। সব এক একটা কুয়োর ব্যাঙ কোথাকার।
বিমল বাবু হেসে বললেন, তাই হবে, কাল টিকিট কাটব, সামনের মাসে ছেলে আসবে কদিনের ছুটিতে তিনজনে ঘুরে আসব। এখন যাও কচুরি যে ঠান্ডা হয়ে গেছে ওগুলো গরম করে নিয়ে আসো জমিয়ে খাই।
সুলতা মুখে চওড়া হাসি এনে বললো, এক্ষুনি আনছি, দুজনে একসাথে খাব।

Exit mobile version