গল্প

গল্প- সেয়ানে সেয়ানে

সেয়ানে-সেয়ানে
-জয়তী মিত্র

সকালে ঘুম থেকে উঠেই সুমিতা দেবী শুরু করে দেন পরচর্চা। এই কাজে তিনি একেবারে সিদ্ধহস্ত। কাজের মাসি মালতীর সাথে চায়ের কাপ নিয়ে বসে পড়েন পাড়া প্রতিবেশীদের নিয়ে খোশগল্পে।পরচর্চা না করলে নাকি তার ভাত হজম হয় না।

শপিং মলে সেদিন দেখা তার প্রতিবেশী গৌরী দেবীর সাথে। দেখা হতেই একগাল হেসে সুমিতা দেবী জিজ্ঞাসা করেন, ও দিদি তোমার ছেলে বৌমা কি সমুদ্রে বেড়াতে গেছে?

আমার বৌমা বললো- তোমার বৌমা হট প্যান্ট পড়ে সমুদ্রে স্নানের ছবি দিয়েছে।

গৌরী দেবী বলেন, ঠিক বলেছে তোমার বৌমা। আমার ছেলে সুদীপ আর বৌমা রিমি দুজনেই মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরী করে। একদম ছুটি পায় না, তাই দুজনের কোথাও যাবার সময় হয় না। তাই কদিনের ছুটি পেতেই দুজনে বেড়াতে গেছে, আমি জোর করে পাঠিয়েছি। আর সমুদ্রে তো কেউ শাড়ি পড়ে স্নান করে না, তাই হট প্যান্ট কিনে নিয়ে গেছে বৌমা। খুব মিষ্টি লাগছে বৌমাকে হট প্যান্ট পড়ে। ওদের অল্প বয়স, এখনই তো আনন্দ করবে। এর পর বাচ্চা হলে তো আর কথাই নেই, তখন কোথাও যাবার সময় পাবে না। তোমার বাড়ির সবাই ভালো আছে তো?
গৌরী দেবীর কথা শুনে সুমিতা দেবী বলেন, আমরা খুব ভালো আছি, আর থাকবো না’ই বা কেন? আমার বৌমা কত যত্ন করে আমাদের কর্তা গিন্নি দুজনকে। ঘরের কাজ, রান্না বান্না এক কথায় জুতো সেলাই থেকে চণ্ডী পাঠ সব বৌমা’ই করে। আমি বৌভাতের পরদিনই বৌমাকে বলেছিলাম, সংসার এখন তোমার, আমি কোনো কাজ করতে পারবো না। সবকিছু তোমাকে বুঝে নিতে হবে। আমার এখন ছুটি, আমি পায়ের ওপর পা তুলে খাব। আমার বৌমা অক্ষরে অক্ষরে আমার কথা মেনে চলে। খুব ভয়ও পায় আমাকে। শাড়ি ছাড়া অন্য পোশাক পড়ে না। যা বলি তাই শোনে। তারপর আজকাল আবার আমার খুব বাতের ব্যথা হয়। তখন তো রাতদিন আমার সেবা করে। আমি খুব খুশি এমন বৌমা পেয়ে। ওই রাতদিন বাইরে বেরিয়ে চাকরী করবে এইসব আমার একদম পছন্দ নয়। চাকরী করা মেয়েরা খুব একটা সুবিধার হয় না। তাছাড়া সারাদিন বাড়ির বাইরে থাকলে সংসার করবে কখন! আর আমিই শুধু সারাজীবন সংসারের ঘানি টানবো না’কি বলো?

গৌরী দেবী সব শুনে বলেন,”বাহ! তোমার বৌমা তো খুব ভালো হয়েছে। আসলে আমি বাড়ীতে আমার একটা মেয়ে এনেছি, কোনো কাজের লোক আনিনি, আর যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমি তার স্বাবলম্বী হবার পথেও বাধা দেইনি আর বেড়াতে গিয়ে ছোট পোশাক অনেকেই পড়ে। বাড়ীতে তো আর পড়ে না। আমার বৌমা বলে-আমি ওর আধুনিকা শাশুড়ি। বৌমা আমার একজন খুব ভালো বন্ধু। আমরা দুজন একে অপরের সুখ দুঃখের সাথী, একে অপরের পরিপূরক।

গৌরী দেবীর এইসব কথা হজম হলো না সুমিতা দেবীর। তার তখন জোঁকের মুখে নুন পড়ার মত অবস্থা। আর এক সেকেন্ড সেখানে না দাঁড়িয়ে,”আজ আসি” বলে সেখান থেকে বিদায় নিল সুমিতা দেবী।

Loading

One Comment

  • দীপঙ্কর বিশ্বাস

    খুব ভালো লাগল।ছোট অথচ বার্তাবহ

Leave A Comment

You cannot copy content of this page