নীল পাখি, অলৌকিক ভোর, ফেরা হয় না
-সুনির্মল বসু
সেইসব অলৌকিক ভোরগুলো কোথায় গেল,
সেইসব কৃষ্ণচূড়ার দিনগুলো কোথায় পথ হারালো,
সেইসব রঙবেরঙের ঘুড়ি ওড়া বিকেলগুলো কবে যে হারিয়ে গেল।
মনে পড়ে, কাঠ বাদাম গাছের নিচে শীতল পুকুরে শুকনো পাতাদের ভেসে যাওয়া,
মাথার উপর ঢাউস ঈগলের ডানা মেলা, কী সব দুরন্ত দিন, মানুষের শৈশবে কত কী যে থাকে!
জ্যোৎস্না রাতে বাঁশবনের নিচে হ্যারিকেনের আলোয় পড়তে বসে আকাশের তারা গোনা,
কদম ফুলের গন্ধে ভরপুর মাতাল দিন,
মাটির ঘরের জানালা দিয়ে দূরের পৃথিবীর সংকেত,
উদাসী সরষেক্ষেতে রাত পরীদের বাতাসে ভেসে বেড়ানো,
স্মৃতির অ্যালবামে মায়াময় হাত রাখলে,
ভেসে ওঠে কত টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ।
রাতের আকাশে অরণ্য পাখির গান, জানালায় চাঁদ সেদিনও শুভরাত্রি জানিয়ে যেত,
ভোরের তারার দিকে তাকিয়ে স্বপ্নের রাত পেরিয়ে কখন যেন সকাল আসতো,
গাছে গাছে কত ফুল, প্রজাপতির ডানায় কত বর্ণ বাহার,
নদীর বুকে ভেসে আসতো ভাটিয়ালি সুর, দুর্গাপুজোর সকাল সন্ধ্যে কত যে পবিত্রতা এনে দিত মনে,
কতকথা জেগে থাকতো মনের সংগোপনে!
কবে যেন বড় হয়ে গেলাম,
রাত পরী, নীল পাখি, দুধেল জ্যোৎস্না ভেজা রাত,
সোনালী ঈগল, শিরিষ গাছের কাঠঠোকরা পাখি আজ আর দেখি না,
চাঁদের পালকি চড়ে রাত আজো আসে, নদীর জলের জোয়ার-ভাটার মতন দিন রাত্রি আসে,
ফিরে ফিরে যায়, আমার দেখা হয় না,
শৈশবের সেই মনটা কবে যেন কোথায় পিছনে ফেলে এসেছি,
ওরা আমায় ডাকে, বলে, যাবি,
বলি, আমার সময় বেশি নেই,
শৈশবের দিনগুলো বলে, কতকিছু পেতে গিয়ে প্রতিদিন কতকিছু যে হারিয়ে ফেলেছিস,
বললাম, আমি যে একবার পিছনে ফিরতে চাই,
শৈশবের দিনগুলো বললো, তা কি করে হয়, মন পবিত্র না হলে, সেই দিনগুলোতে আর ফেরা যায়না।
দিনান্তে অস্তগামী সূর্যের দিকে চেয়ে থাকা ছাড়া এখন আর কোনো উপায় দেখি না।