রম্য- গ্যাসের কামাল

গ্যাসের কামাল
-পায়েল সাহু

 

 

দত্ত বাড়ির কর্তার পেটে বড়ো গ্যাস হচ্ছে কদিন ধরে। পাড়াতুতো ভায়রাভাই বেণীচরণ বালার শালা নাকি নামকরা ডাক্তার, তা সেই ডাক্তারের ওষুধ খাচ্ছেন বটে তবে সেই ওষুধ খেয়ে কমা তো দূরের কথা আরো যেন বেড়ে যাচ্ছে। এক ঘরে গ্যাস ছাড়লে পাশের ঘর অব্দি গন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
মহা মুশকিল…
এদিকে ভায়রাভাইয়ের বৌ মানে শালী, সে যতই পাড়াতুতো হোক না কেন, তাকে রাগালে চলবে না। অফিস আসতে যেতে তার মিষ্টি মুখ আর “জিজু টাআআআ টাআআআ” না শুনলে সেদিন শালা বাস ট্রেন কিচ্ছু সময় মতো মেলে না। তার ওপর বসের ঝাড় উপরি।
কিন্তু এখন কি উপায়, এই তো সেদিন অফিস যাওয়ার সময় “বেণী বাড়ি আছো নাকি?” একটু জোরেই বলে ফেলেছিলেন, আর সঙ্গে সঙ্গে বেণীর স্ত্রী ‘মণি’ মানে ওই নামেই মনে মনে দত্তবাবু ডাকেন, আর কি একগাল হেসে বুকের কাপড়টা ঠিক করতে করতে বেরিয়ে আসছিলো, আর ঠিক…. ঠিকককক সেই মুহূর্তেই বিকট শব্দ করে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো পাড়াময়।
দত্ত বাবুর আদরের মনি তো বমি করে ফেলে আর কি… আশেপাশের বাড়ির লোকেরা ছুটে এসে একজন বলে “এই বোম ফাটলো কোথায়? কেউ বলে নিশ্চয়ই কারো বাড়ি গ্যাস সিলিন্ডার burst করেছে তো কেউ বলে কবে ইঁদুর মরে পচে গেলো সেটা বুঝতেও পারলাম না?”
দত্ত বাবু তো লজ্জায় লাল, কি করে যে পালালেন সেখান থেকে তিনিই জানেন।
তার পরের দিন থেকেই তিনি নিজেকে গৃহবন্দী করে ফেলেছেন, এই গ্যাস সিলিন্ডার থুড়ি এই গ্যাসভর্তি ভুঁড়ি, ওহ্হো গ্যাসভর্তি পেট নিয়ে তিনি কিছুতেই যাবেন না তার মনির “টা টা” শুনতে |
অবশ্য পরের দিন সকালে তাকে দেখতে না পেয়ে দত্তবাবুর ‘মনি’ নিজেই ছুটে এসেছিলো হাতকাটা নাইটিটা পরে, আসলে দত্তবাবুর চিন্তায় মাথার ঠিক ছিলো না তার।
সব শুনে মুশকিল আসান ওষুধ সেই এনে দেয়।
ওদিকে দত্তবাবুর স্ত্রী সোনামনিদেবী সব দেখে বুঝে একটা ভুরু কপালে উঠিয়ে ভাবতে বসেন এর উপায়, কিন্তু ঘন্টাখানেক বাদেও ভুরু নিচে না নামায় বাধ্য হয়ে ফোন করেন বেণীবাবুকে।
বেণীবাবু যে কিছু বোঝেন না এমন নয়, তবু অপেক্ষা করছিলেন জল মাথার ওপর দিয়ে যাওয়ার, তা সে জল কিছুতেই মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছিলো না বলে তিনিও কিছু করে উঠতে পারছিলেন না।
তবে এই সুযোগে তিনি বদলা নিয়েই নেবেন ভাবলেন।

পর দিন থেকে সোনামনি দেবী সারাদিন বাড়িতে গুনগুন করে গাইতে লাগলেন “আমার যেমন বেণী তেমনি রবে বাল (চুল) ভিজাবো না” এই এক লাইনই গাইতে লাগলেন, তবে একটু জোরে হলো তখন, যখন দত্তবাবুর আদরের ‘মনি’ তার জিজুর খোঁজ নিতে এলো।
আজও ভুল করে তাড়াহুড়োয় বাড়িতে পরা হাতকাটা নাইটিটাই পরে এসেছিলেন, তবে সোনামনিদেবীর গান শুনে বেশিক্ষণ এ বাড়িতে থাকার ভরসা পেলেন না। ওদিকে বেণী বাবুও বাড়িতে তখন চিৎকার করে গাইছেন “ও মেরি সোনা রে, সোনা রে, সোনা রে, দে দুঙ্গা জান জুদা মত হোনা রে..”

এখন বেণীবাবুর স্ত্রী মানে দত্তবাবুর পাড়াতুতো শালী বেশ ভালোই বুঝে গেছেন “দামে কম মানে ভালো বেণী ফার্নিচার” নিজেকে সামলে নিয়েছেন খুব তাড়াতাড়ি।

দত্তবাবুও আজকাল তার বৌ সোনামনি তার বাল মানে চুল ভিজিয়ে স্নান করছেন নাকি সেটা খেয়াল রাখছেন।

তোমরাও একটু খেয়াল রেখো তো… যতই হোক দত্তবাবুর আমাদের লোক খারাপ নয়…. তাই না?

Loading

Leave A Comment