অলসতার সপক্ষে
-সুনির্মল বসু
চলতি প্রবাদ আছে, অলস মস্তিষ্ক নাকি শয়তানের বাসা। কিন্তু মডার্ন টাইমস ছবিতে চার্লি চ্যাপলিন ক্রমাগত একটানা কাজ করলে, মানুষ কেমন যন্ত্র মানুষ হয়ে যায়, তাকে তির্যক হাসির মাধ্যমে উপস্থাপিত করেছেন। দই পাততে হতে হয় একটু আড়ালে গিয়ে। এই আড়াল টুকুকে মেনে নিতে পারলে, কখনো কখনো মহৎ সৃষ্টি সম্ভব। উন্নত মানের সৃষ্টির জন্য এই নির্ভৃত সাধনা জরুরী। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিগুলি অলসতার স্বভাবে সৃষ্টি হয়েছে। বাইরে থেকে যাকে অলসতা মনে করা হয়েছিল, ভেতরের সৃষ্টিশীল মন তাকে বুদ্ধির নব নব উন্মেষ শালিনী প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে নানা উপহারে পৃথিবীকে ভরিয়ে দিয়েছে।
হান্না নিউটনের ছেলে আইজ্যাক নিউটন নিরীহ ছাত্র হিসেবে প্রতিদিন সহপাঠীদের কাছে মার খেতেন। অলস ছাত্র হিসেবে তাঁর দুর্নাম ছিল। একদিন সহপাঠীদের পাল্টা মার দিয়ে তাঁর আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। অলস মানসিকতা তাঁকে উদ্ভট চিন্তা এনে দেয়। গাছ থেকে আপেলটা নিচে পড়ল কেন,
উপরে উঠে যায় নি কেন, এই সূত্র ধরে তিনি আবিষ্কার করেন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। ততদিনে তিনি কেপলারের সূত্র এবং গ্যালিলিওর গতিসূত্র ও চলমান বস্তুর বল বিদ্যা শিখে নিয়েছিলেন।
টেলিফোনের আবিষ্কারক বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল জাতিতে ছিলেন স্কট। ছোটবেলায় ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি কানাডায় চলে যান।
ভগ্ন শরীরে তিনি বিদ্যুৎ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।
টেলিফোনে তাঁর প্রথম সংলাপ, মিস্টার ওয়াটসন, কাম হেয়ার প্লিজ, আই ওয়ান্ট ইউ।
টেলিফোন, গ্রামোফোন, চলচ্চিত্র, রেডিও, টেলিগ্রাফি, বৈদ্যুতিক আলো, সবখানেই অবদান রেখে গিয়েছেন বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন। অথচ, স্কুলে সবাই তাকে মাথামোটা ছেলে বলতো।
অর্থ ও সুনামে পৃথিবী বিখ্যাত হলে, তিনি একদিন নিজের ড্রয়ার খুলে দ্যাখেন, ছোটবেলায় স্কুলের প্রিন্সিপালের লেখা তাঁর মায়ের কাছে পাঠানো চিঠি। যেখানে তাঁকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, মাথামোটা ছাত্র হিসেবে। চিঠির নিচে এডিসন লিখলেন, একটি ব্যর্থ ছেলে টমাস আলভা এডিসনকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে গিয়েছেন, প্রেরণা দাত্রী জননী। তারপর নিজের নাম স্বাক্ষর করলেন।
অলস এবং মাথামোটা ছাত্র টমাস আলভা এডিসন পরবর্তীকালে আমেরিকার নৌবাহিনীর প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হন।
বিজ্ঞানের ছাত্র মাত্রই জানেন গ্যালভানোমিটার এবং ভোল্টমিটারের নাম। বিজ্ঞানী লুইজি গ্যালভানি এবং বিজ্ঞানী ভোল্টা দুজনেই ইতালির মানুষ। রঙ ঝরাই করাকে আমরা বলি গ্যালভানাইজ করা। প্রথম জীবনে রাজনীতির জালে জড়িয়ে পড়েছিলেন গ্যালভানি। অলস ভাবে জীবন কাটছিল তাঁর। বিজ্ঞানমনস্ক মাথা সতত সক্রিয় ছিল গ্যালভানির । তাঁর যুগান্তকারী আবিষ্কার গুলি পরবর্তীকালে মাইকেল ফ্যারাডের আবিষ্কারের পথ সুগম করে দেয়।
জার্মানির দানিয়ুব নদীর তীরে উলম শহরে আইনস্টাইনের জন্ম। ছাত্র হিসেবে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে ক্রমাগত ব্যর্থতা ছিল তাঁর। মহাকর্ষ, সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে একে একে বহু গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছিলেন তিনি। আইনস্টাইনের গবেষণার উপর থিসিস লিখেছিলেন বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। একদা অলসতার কারনে প্রাণিবিদ্যা এবং উদ্ভিদবিদ্যায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, সেই মহাবিজ্ঞানী স্যার আলবার্ট আইনস্টাইন ১৯২২ সালে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার পান।
এবার অলসতার সপক্ষে সাহিত্যকারদের কথায় আসি। রাশিয়ান লেখক মিখাইল শলোকভ পেশায় ছিলেন রাজমিস্ত্রি। ধীরে বহে ডন, উপন্যাস লিখে তিনি নোবেল পুরস্কার পান। অলস মানুষ হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল। না লিখে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ফ্রান্সের লেখিকা গ্রাৎসিয়া
দেলেদদা। ইনি অসামান্যা সুন্দরী ছিলেন। দিদিমার বাড়ির পুকুরে স্নান করতে গিয়ে তাঁর পা ভেঙে যায়।
লোকলজ্জার ভয়ে তিনি বাইরে বেরোতেন না ।বাড়িতে বসে দিদিমার ছাপাখানায় উপন্যাস ছাপিয়ে ফেলেন। সেই উপন্যাসটি তাঁকে নোবেল পুরস্কার এনে দেয়। তিনি কোনোদিন লেখক হতে চাননি। একবার আলজেরিয়াতে প্লেগ রোগ দেখা দিলে, শরীর খারাপ নিয়ে আলবেয়ার কামু চিকিৎসকের কাছে যান, চিকিৎসক তাঁকে জানান, তাঁর পরমায়ু অল্পদিনের। তিনি দ্য প্লেগ উপন্যাস লিখে নোবেল পুরস্কার পান,পরে গাড়ি দূর্ঘটনায় মারা যান।
প্রথম জীবনে মুষ্টিযোদ্ধা ছিলেন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। একসময় রিং এর মধ্যে প্রবল মার খাবার পর, তিনি মুষ্টিযুদ্ধ ছেড়ে দেন। অলস ভাবে সময় কাটাতে কাটাতে জীবনের প্রবল ব্যর্থতার কথা স্মরণ করে তিনি উপন্যাস লেখা শুরু করেন এবং নোবেল পুরস্কার পান ও লেখক হিসেবে বিশ্ব খ্যাতি অর্জন করেন।
গন্ডগোল না হলে, জার্মানির লেখক পল হেইস লিখতেই পারতেন না, প্রবল আনন্দপ্রিয় অলস এই লেখক এভাবেই পৃথিবী কাঁপানো উপন্যাস লিখেছিলেন। রীতিমতো পার্টি দিয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে তিনি লিখতেন।
ম্যান এন্ড সুপারম্যান এবং আর্মস এন্ড দ্য ম্যান, লিখে বিখ্যাত হয়েছিলেন ইংরেজি লেখক জর্জ বার্নার্ড শ। তিন মাসে তিনি উপন্যাস শেষ করতেন। পিচবোর্ডের কাগজে লিখে তিনি উপন্যাস শেষ করতেন। তাঁর সহকারী পাতা সাজাতেন। লেখা শেষ হলে, আড্ডাবাজ এবং অলসতা প্রিয় বার্নার্ড শ বাড়ির সামনের যেকোনো ট্রামে উঠে পড়তেন, এবং শেষ পর্যন্ত যেতেন। তারপর আবার বাড়ি ফিরে আসতেন।
ফ্রান্সের গ্রামের ছেলে ছিলেন বালজাক। শহরে এসে ধনী সুন্দরী মহিলাদের সম্পর্কে আসেন। তাঁরা লেখকের দারিদ্র নিয়ে ব্যঙ্গ করেছিলেন। এই সময় উপন্যাস লিখে বালজাক পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ লেখকে পরিণত হন।
অলস এবং আড্ডাবাজ ছিলেন রবার্ট ব্রাউনিং। বার বার প্রেমে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। জার্মানিতে এসে দেখা হল, প্রেমিকা এলিজাবেথ বারেট ব্রাউনিং এর সঙ্গে। কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেন কবি রবার্ট ব্রাউনিং।
যুদ্ধে গিয়ে পা খোড়া হয়ে গিয়েছিল কবি জর্জ গরডন লর্ড বায়রনের। ঘরে বসে তিনি চাইল্ড হ্যারল্ড কাব্য লেখেন। এবং বিশ্ব বিখ্যাত কবি হিসেবে স্বীকৃত হন।
সিক্স ক্যারেক্টারস ইন সার্চ অফ অন অথর, লিখে বিখ্যাত হন ইটালির লেখক লুইজি পিরানদেললো।তিনি উঁচু মাচায় বসে লিখতেন, সেখানেই ঘুমাতেন।
এই অলসতার সময়ে তাঁর শ্রেষ্ঠ সাহিত্য রচিত হয়েছিল। কোনোদিনই লেখক হবার কথা ছিল না স্যার ওয়াল্টার স্কট এর। তিনি অলস ভাবে সময় কাটাতেন। প্রতিবেশী একজন বিশাল প্রাসাদ বানিয়ে অহংকার দেখান, তখন স্যার ওয়াল্টার স্কট দ্য রবিন হুড ,উপন্যাস লিখে লেখক এবং ধনী মানুষ হিসেবে বিখ্যাত হন। আড্ডাবাজ মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন লেখক এইচ জি ওয়েলস। ট্রেনে ভ্রমণ করতে করতে তিনি উপন্যাস লিখে যেতেন।
রাশিয়ান লেখক ম্যাক্সিম গোর্কি মা উপন্যাস লিখে বিখ্যাত হয়েছিলেন। একসময় জীবনে চরম ব্যর্থতা এসেছিল বলে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে নাম নেন, আলেক্সি ম্যাক্সিমোভিস পেসকভ। এই নামের অর্থ হলো, জীবন সম্পর্কে তিক্ত। পরে তিনি পৃথিবী বিখ্যাত হন। পরবর্তীকালে স্ট্যালিনের প্রধান বন্ধু হয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ছিন্নপত্র লিখেছিলেন, পদ্মা নদীতে বোটে চড়ে যাবার পথে অলস মুহূর্তে। এটি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পত্রসাহিত্য।
বাংলা ভাষার লেখকদের মধ্যে আশুতোষ মুখোপাধ্যায় বহুবার চাকরি ছেড়েছেন, অথবা তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সংবাদপত্র অফিসে কাজে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। সবরমতী, কাল তুমি আলেয়া, উপন্যাস লিখে বিখ্যাত হয়েছিলেন। কবি সমর সেন ছাত্র হিসেবেও কৃতী ছিলেন। কিন্তু কোনো জায়গাতে বেশিদিন চাকরি করতে পারেননি। চড়া ব্যক্তিত্ব, স্বতন্ত্র ভাবনা, সৃষ্টিশীল অলস মানসিক চলন থাকার ফলে তিনি লিখেছেন কম।শ দেড়েক কবিতা কিন্তু তাঁকে বাংলা সাহিত্যে বিখ্যাত করে রেখেছে। বোম্বে প্রবাসী কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজের প্রাক্তন ছাত্র লেখক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় অলস অবকাশে একদিকে যেমন ব্যোমকেশ সমগ্র লিখেছেন, তেমনি অত্যন্ত সফল ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখেছেন, তুঙ্গ ভদ্রার তীরে।
সাংবাদিকতার অবকাশে লেখক নিমাই ভট্টাচার্য লিখেছেন মেম সাহেব এর মতো সারা জাগানো উপন্যাস। কলকাতার মিত্র ইন্সটিটিউশনের ছাত্র
প্রেমেন্দ্র মিত্র এক দুপুরে বেনারসের বাড়িতে বসে জীবনের প্রথম ছোট গল্প লিখেছিলেন, তেলেনাপোতা আবিষ্কার। প্রখ্যাত লেখক নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায় এমএ পরীক্ষার পর দিনাজপুরের বাড়িতে বসে এক অনার্স মুহুর্তে জীবনের প্রথম গল্প লিখেছিলেন, বর আসিতেছে।
গরীব চাষির ছেলে ছিলেন শিল্পী অগাস্তা রোদা। তিনি রাজা ভিক্টর ইমানুয়েলের কাছে প্রদর্শনী করবার জন্য সাহায্য চেয়ে ছিলেন। পাননি। পরবর্তীকালে রাজা তাঁর তৈরি ভাস্কর্য মূর্তি দেখে মোহিত হন। একটি মুহূর্তে ঢাকা ছিল। রাজা দেখতে গেলে, শিল্পী তাঁকে নামিয়ে দেন। বলেন, ওখানে একটা নাইটেঙ্গেল পাখি ডিম পেড়েছে। আমার শিল্পের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। রাজা শিল্পীর এই জীবন দর্শন শুনে আপ্লুত হন। সারা জীবন অলস ভাবনা থেকেই অগস্ত্য রোদা অসম্ভব সুন্দর ভাস্কর্য মূর্তি রচনা করে গেছেন।
চোখে দেখতেন না শিল্পী বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়। নন্দলাল বসুর কাছে আঁকা শিখতে গেলে, রবীন্দ্রনাথ তাঁকে উদয়নের বাড়ির সিলিং এ
ছবি আঁকতে বলেন, সেই ছবির সূত্রে তিনি নন্দলাল বসুর কাছে অংকন শিক্ষার সুযোগ পান। পরবর্তীকালে সত্যজিৎ রায় তাঁকে নিয়ে তথ্য চিত্র তৈরি করেছেন। ইনার আই। শিল্পী নন্দলাল বসু, যামিনী রায়, রামকিঙ্কর বেইজ অলস মুহূর্তে বহু পৃথিবী কাঁপানো ছবি এঁকেছেন, মূর্তি গড়েছেন। বাইরে থেকে এইসব কাজের নেপথ্য লোক দেখা যায় না হয়তো, তবু সৃষ্টিশীল মন কোন্ এক বিশেষ মুহূর্তে সৃজনের পৃথিবী খুঁজে পেয়েছে।
সঙ্গীত জগতে অনেক দুর্দান্ত গান লেখা ও সুর রচনা আর মুহূর্ত তৈরি হয়েছিল অলস মুহূর্তে। একবার শচীন দেব বর্মন কিশোর কুমারকে বাড়ি থেকে গাড়িতে করে তুলে নিয়ে ফাঁকা ধানক্ষেতে ছুটতে বললেন। তিনি নিজেও তখন ছোটা শুরু করেছেন।
পরবর্তীকালে অমর প্রেম ছবি গানের সুর দিলেন, কুছ তো লোগ কহেঙ্গে, লোগো কা কাম হ্যায় কহেনা। ভি বালসারা ঘোড়ার খুরের শব্দ থেকে বহু নতুন নতুন গানের টিউন তৈরি করেছিলেন। গীতিকার গুলজার ওয়েল্ডিং মেশিনে কাজ করতেন এক সময়, পরবর্তীকালে তিনি অজস্র অসম্ভব সুন্দর গান লিখেছেন। আইপিটিএ তে যোগ দিয়েছিলেন এক সময়। পরবর্তীকালে গীতিকার শৈলেন্দ্র অলস মুহূর্তে হিন্দি ছবি গাইডের গানগুলি লিখেছিলেন। পূর্ববাংলার নদীতে সস্ত্রীক নৌপথে যাবার সময়, একটি গ্রাম্য মেয়েকে শচীন কর্তা দেখেছিলেন, মেয়েটি বিভিন্ন নৌকোর মাঝির কাছে তাঁর বাপের বাড়ির সংবাদ নিতে চাইছিল। শচীন কর্তা স্ত্রী মীরা দেব বর্মণকে এ বিষয়ে গান লিখতে অনুরোধ করেন। লেখা হয় সেই বিখ্যাত গানটি, সুজন মাঝিরে, ভাটি গাঙ বাইয়া।
অলসতা সব সময় সমালোচনার লক্ষ্য হলেও, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি গুলি অলসতার মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছিল। ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান ই হোক, অথবা ভারতবর্ষের তাজমহল, বহু বছরের পরিশ্রম, বহু অলস সৌন্দর্য ভাবনা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠশিল্প তৈরি হতে সাহায্য করেছিল।
অলসতাকে তাই আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিলে চলবে না, বাইরে থেকে অলসতা চোখে পড়লেও, ভিতরে ভিতরে মানুষের সৃষ্টি প্রেমী মন এই অবসরে নতুন আবিষ্কারের দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অসম্পূর্ণ রেখে রবীন্দ্রনাথ ভাগ্যিস জমিদারি দেখতে গিয়েছিলেন, তাই সৃষ্টির সোনার ধানে তাঁর তরী পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। অলস মনের অবসর না থাকলে, কবির সোনার কলমে এমন মহৎ সৃষ্টির রচিত হত কি।
এই অলসতা টুকু না থাকলে, আমরা রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী নাটকের যন্ত্র সভ্যতা পেতাম। যেখানে মানুষের কোন নাম নেই। সাতচল্লিশের ক, ঊন চল্লিশের গ। এমন যান্ত্রিক কাজ কারবারে আর যাই হোক, মহৎ সৃষ্টি কখনোই সম্ভব নয়।