Site icon আলাপী মন

গল্প- ইনকাম

“ইনকাম”
-উজ্জ্বল সামন্ত

 

 

আয় বা রোজগার একটা মানুষের ব্যক্তিত্ব, মনুষ্যত্ব, দায়িত্ব বা কর্তব্য নির্ধারণের মাপকাঠি ঠিক করে কি?

পেশায় ব্যবসাদার অবনী বাবু তার একমাত্র কন্যা অহনার বিবাহের জন্য খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কন্যা কলেজ পাশ করেছে। মধ্যবিত্ত পরিবার তাই মেয়ের উচ্চশিক্ষার জন্য আর খরচ করতে রাজি হননি আত্মীয়দের পরামর্শে। মেয়ের বয়স হয়ে যাচ্ছে এবার বিয়ে দিয়ে দাও। না হলে, আবার মেয়ে প্রেম ভালোবাসা করবে, না হয়তো কোথাও পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে বংশের মুখে চুনকালি দেবে। এই কথা শুনে অবনীবাবুই সত্যিই খুব চিন্তিত। তার আর্থিক সঙ্গতিও খুব একটা নেই। দাবিহীন পাত্র, খবরের কাগজে বিজ্ঞাপনেই দেখতে পাওয়া যায়। পরে ফল হয় অন্য।

অবনীবাবুর একটি‌ সম্ভ্রান্ত পরিবারের উচ্চ পদে সরকারী চাকুরীরত পাত্রের সঙ্গে মেয়ের বিবাহ দেওয়ার জন্য হন্যে হয়ে পাত্র খুঁজছেন। প্রায় জনা কয়েক ঘটকের সঙ্গে দেখা করে মেয়ের উপযুক্ত পাত্র খুঁজে দিতে বলেছেন। অনেক খোঁজাখুঁজি চলছে কিন্তু মনের মতো পাত্র পাওয়া যাচ্ছে না। অবশেষে শহরের কোন এক বনেদি পরিবারের একমাত্র ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিবাহ হয়। পাত্র উচ্চ পদে চাকরিরত। একটু বয়স্ক, মেয়ের থেকে প্রায় বছর পনেরো বড়। কিন্তু তাতে কি, পাত্র সরকারি চাকরি করে, সোনার আংটি আবার বাঁকা। ঘটক যোগাযোগ দিলে মেয়ের বাবা পাত্রের বাড়িতে দেখা করে মেয়ে দেখতে আসতে বলেন।

প্রথা বা রীতি অনুযায়ী ছেলেরাই মেয়ে দেখতে আসে। কয়েক যুগ ধরে এই নিয়ম চলে আসছে। এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। পাত্রপক্ষ কন্যাকে পছন্দ করলো। দেনাপাওনা মোটামুটি দাবি দেওয়া যা ছিল অনেক আলাপ আলোচনার পর ঠিক হলো। একটি শুভ দিন দেখে মেয়ের বিবাহ সম্পন্ন হল।

শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে অহনা কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারলো না। কারণ তার শাশুড়ির আরো অনেক পণ বা আরো উচ্চবংশের মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে হতো এই প্রত্যাশা ছিল। সংসারের নানা খুঁটিনাটি নিয়ে কথায় কথায় কথা শোনাতো। মহিতোষ বাড়ির একমাত্র ছেলে একরোখা জেদী প্রকৃতির। কারো কথা কোন আমল দিত না কোনোদিনই। বাবা মা’রও অবাধ্য ছিল। এছাড়াও তার নানাবিধ চারিত্রিক দোষ ছিল। অফিস থেকে রোজ দেরি করে বাড়ি ফিরতো আকণ্ঠ মদ্যপান করে। কখনো কখনো বাড়ি ফিরতো না কাজের অজুহাতে।
প্রথম প্রথম অহনার খুব রাগ হতো। মহিতোষের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলেও যাচ্ছেতাই ভাবে অপমান করতো। কখনো কখনো অশ্রাব্য গালিগালাজ বা গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করত না। যেন সংসারের নিয়মে একটু একটু করে অহনা শেষ হয়ে যাচ্ছিল মনে মনে। কিন্তু মুখ ফুটে কাউকে একথা বলতে পারছিল না।

কিছু মাস পর কানাঘুষো শোনা যায় অফিসের এক কলিগের সঙ্গে মহিতোষ দীঘা মন্দারমনি এসব জায়গায় ঘুরতে যায়। কখনো কখনো এসকর্ট গার্ল কল করে নিয়ে যায়। সন্দেহ হয় একদিন, যখন ফোন আসে মহিতোষের মোবাইলে, তখন মহিতোষ বাথরুমে ছিল। ওপাশের নারীকন্ঠে‌ জানতে চাইছিল স্যর আপনি মন্দারমনির হোটেলে কখন চেক-ইন করবেন। অহনা কোন উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেয়।
মহিতোষ বাথরুম থেকে বের হলে‌ অহনা জিজ্ঞেস করে আজকে কখন বাড়ি ফিরবে? আজ আমাদের বিবাহবার্ষিকী, তোমার মনে আছে মহিতোষ?
মহিতোষ তখন বললো, চেষ্টা করছি তাড়াতাড়ি ফেরার।
এই কথা শুনে অহনা মনে মনে খুশি হলো। কিন্তু তার খুশি দীর্ঘস্থায়ী হলো না মহিতোষের ফোনে। রাত্রি তখন দশটা, মহিতোষ ফোনে বলে বাড়ি ফিরতে পারছি না। অফিসের কাজ পড়ে গেছে পরশু ফিরবো।
অহনার বিশ্বাস এক নিমেষে ভেঙে যায় তাসের ঘরের মতো।

তারপর দিন ওর বাবা মাকে চিঠি লিখে জানায় যে তাকে যেন এসে নিয়ে যায়। দিন সাতেক পর অবনীবাবুই এসে মেয়েকে নিয়ে যান। অবনীবাবু স্ত্রী মেয়ের চোখ মুখ দেখে কিছু একটা আন্দাজ করেন। একান্তে মেয়ের সঙ্গে কথা বলে জানেন যে তার বিবাহিত জীবন সুখী নয়। “মা আমার পক্ষে আর সংসার করা সম্ভব নয়। তোমরা তোমার মেয়েকে চাও না আমার সংসার চাও?” অহনার মা অনন্যা আর কোন উত্তর দিতে পারেননি।

বছর দুয়েকের মধ্যে মেয়ের মিউচুয়াল ডিভোর্স হয়ে যায়। অহনা এই দু’ বছরে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি জুটিয়ে নেয়। অবনীবাবু ও অনন্যা দেবী খুবই চিন্তিত মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে। ভবিষ্যতে একা একা মেয়ে কি করবে, তাদের অবর্তমানে! মেয়ের মন বুঝতে চায়। অহনা বলে ওসব পরে হবে।

মাসখানেক পর অহনা ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট ও খবরের কাগজ একটি বিজ্ঞাপন দেয়।
বিজ্ঞাপনটি এরকম ছিল:
শিক্ষিতা, স্লিম, ফর্সা, ৫’৩”, বয়স২৭+, কন্যা রাশি, মিথুন লগ্ন, ব্লাড গ্রুপ এ +পাত্রীর জন্য উপযুক্ত সুশিক্ষিত সরকারি/বেসরকারি উচ্চপদে আসীন (বেতন ন্যূনতম মাসিক ৫০০০০/-) পাত্র কাম্য। নিচের মোবাইল নাম্বারে *******যোগাযোগ করুন!

Exit mobile version