Site icon আলাপী মন

অণুগল্প- প্রভু আমার প্রিয় ‌আমার

প্রভু আমার প্রিয় ‌আমার
-সুমিতা দাশগুপ্ত

 

 

-“দাদু ও দাদু নীচে যাবে না?” ঠাকুরমশাই তো কখন এসে গেছে। পুজোও শুরু করে দিয়েছে, একটু পরেই আরতি হবে। ঠাম্মা তোমাকে নীচে যেতে বললো।”
-“আমি যে এখানেই আরতি দেখতে বসে আছি দাদুভাই।”
-“সে আবার কী, এখানে আবার কে আরতি করবে? কোন ঠাকুরের আরতি?”
-“এখানে যে স্বয়ং প্রকৃতি আয়োজন করেছেন জগদীশ্বরের বন্দনায়। ওই দেখো পুবের আকাশ আলো করে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে। বাতাসে ফুলের সুগন্ধ। এইসব আয়োজন কী শুধুই এমনি এমনি কোনও কিছুই বৃথা যায় না জেনো।”
-“যাঃ , কী যে বলো না তুমি! দুটো কী এক হলো নাকি?”
-“এক‌ই দাদুভাই। তফাৎ শুধু কে কেমন ভাবে দেখবে তার উপরে। ওখানে গৃহস্থের গৃহকোণে বিগ্রহের পায়ে আত্মনিবেদন, আর এখানে প্রকৃতির মাঝে অসীমের আরাধনা।”
-“বা -রে,আরতি করতে তো কতো কিছু লাগে, যেমন পঞ্চপ্রদীপ, ধূপ, আরও কতো কী। এখানে সেইসব ‌কোথায়?”
-“এখানেও সব আয়োজন তৈরি। ঐ দেখো, পূর্ণিমার চাঁদে পঞ্চপ্রদীপের আলো, ফুলের সুবাসে ধূপধুনোর আয়োজন, হাওয়ায় নারকেল পাতারা চামর দোলায়।”
-“আর মন্ত্র? মন্ত্র পড়বে কে?”
-“কেন আমি।”
-“তুমি মন্ত্র জানো?”
-“জানি বৈকি। শোনো মনকে যা ত্রাণ করে, তাই হচ্ছে মন্ত্র। আমার ‌অবলম্বন শুধু কিছু গান, ঐ ভাষাতেই আমি আত্মনিবেদন করি, ওটাই আমার মন্ত্র।”
-“দাদু, তোমার পাশে একটু বসি?”
-“ইচ্ছে হলে বসবে বৈকি! যাও তাহলে ওপাশ থেকে ছোট টুলখানা টেনে নিয়ে এসে বসো।”
অতঃপর সেই চন্দ্রালোকিত সন্ধ্যায়, দাদু তাঁর উদাত্ত কণ্ঠে গান ধরলেন-“ধায় যেন মোর সকল ভালোবাসা, প্রভু তোমার পানে…”
নীচ থেকে ভেসে আসা ধূপের গন্ধ আর ফুলের সুবাসে মাখামাখি হয়ে সেই সুর, পার্থিব সীমানা ছাড়িয়ে পাড়ি দিচ্ছিলো ঊর্ধ্বলোকে।

Exit mobile version