গাছ লাগাও
-পায়েল সাহু
(চরিত্র- ভীষণ গাছ পাগল ব্যানার্জী বাড়ির ছেলে শুভ্র, শুভ্র’র মা, শুভ্র’র বাবা, শুভ্র’র ঠাকুমা)
মা: শুভ্র.. এই শুভ্র… কি ব্যাপারটা কি হ্যাঁ তোর? আমাকে লুকিয়ে ছাদে উঠে যাওয়া? হ্যাঁআআ.. দাঁড়া দাঁড়া…
ঠাকুমা: আহ্ বৌমা ছাড়ো তো, সকাল সকাল ছেলের পেছনে না পড়লেই নয়?
মা: আপনি থামুন মা, বাজারে গেলে সবজি, মাছ না কিনে খানকতক গাছ, গাছের চারা কিনে এনে হাজির করে, আর যত ফরমাশ আমাকে, এই সবজির খোসা ফেলবে না, ডিমের খোসা ফেলবে না, অফিস থেকে ফিরে কারো সঙ্গে কথা নেই, ছাদে উঠে গাছের সেবা করবে.. এসব চলবে না আর..
বাবা: সত্যি ছাদে পা রাখার জায়গা নেই আর।
ঠাকুমা: ওওওও তাই বুঝি? আর সেই ছাদের গাছে যখন ফল, ফুল হয় তখন তো পেড়ে আনতে বেশ ভালোলাগে, তখন তো কই লজ্জা করে না?
মা: এই দেখো তোমার মা সকাল হতে না হতেই পায়ে পা দিয়ে কেমন ঝগড়া শুরু করলো দেখো, আমার ছেলের গাছ আর আমি ফল, ফুল পাড়তে পারবো না?
বাবা: উফফফ মা তোমরা কি শুরু করলে কি? থামো না…
শুভ্র: কি হলো ঠাম্মা? এতো রাগারাগি কিসের? মা কি হয়েছে বলো?
মা: তোর ঠাম্মা বলেছে আমি তোর গাছের ফল ফুল পাড়তে পারবো না।
ঠাকুমা: না রে শুভ্র, কি মিথ্যে কথা বলছে দেখ!
বাবা: তা হ্যাঁ রে শুভ্র, জানিস যখন তোর মা রাগ করে কেন আজ আবার এতো গাছ কিনে আনলি?
শুভ্র: আজ 5th জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস বাবা।তাই ভাবলাম কয়েকটা গাছ কিনে নিয়ে যাই।
মা: এটা আবার কেমন দিবস? কবে থেকে শুরু হলো রে?
বাবা: হুম আমি জানি কিছুটা, প্রতি বছর 5th জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়, 1974 সালে প্রথম এই দিনটি পালিত হয়, পরিবেশ রক্ষার সচেতনতা এবং নতুন পদক্ষেপকে উৎসাহিত করতে রাষ্ট্রসংঘ পালন করে। এই বছর পরিবেশ দিবসের থিম “বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার” এই যে অতিমারী, এই যে সুপার সাইক্লোন, কেন হচ্ছে বলো তো? আসলে ভীষণ ভাবে বৃক্ষচ্ছেদন, প্রকৃতির প্রতি অসম্ভব অবহেলায় আজ এই পরিণতি। তবুও মানুষের হুঁশ নেই..
শুভ্র: হ্যাঁ বাবা তুমি ঠিকই জানো, তবে এর সূত্রপাত হয়েছিলো 1730 সালে। রাজস্থানের প্রত্যন্ত অঞ্চল খেজরিলি গ্রামে একটি রাজপ্রাসাদ গড়ার উদ্দেশ্যে তৎকালীন মেওয়ারের রাজা অভয় সিং-এর আদেশে শুরু হয় গাছকাটা, সেই সময় বিষ্ণই সম্প্রদায়ের মানুষ তার প্রতিবাদ করেন তিন সন্তানের জননী অমৃতা দেবীর নেতৃত্বে।তাঁদের উদ্দেশ্যে, যে করেই হোক খেজরি গাছগুলোকে বাঁচাতেই হবে তাঁদের। গাছের সঙ্গে নিজেদের বেঁধে রেখে শুরু হয় প্রতিবাদ। আর এই গাছকে জড়িয়ে ধরে থাকা অবস্থাতেই রাজার সৈন্যদের হাতে মৃত্যু হয় তাঁদের।
ঠাকুমা: আহা রে! কি নির্মম পরিণতি…
শুভ্র: হ্যাঁ ঠাম্মা, তবে এই প্রতিবাদ ওখানেই শেষ হয়ে যায়নি, 1963 সালে চিন ভারত যুদ্ধের পর ভারতের উত্তরাখন্ডে এই আন্দোলন শুরু হয়। উত্তর প্রদেশের করাতকল মালিকদের গাছ কাটার অনুমতি দেয় তৎকালীন উত্তরপ্রদেশে সরকার অথচ জীবনধারণের জন্য 10% বনজ সম্পদ ভোগ করতে দেওয়া হতোনা গ্রামবাসীকে। এদিকে অত্যাধিক গাছ কাটার ফলে কৃষির ফলন কমে যাচ্ছিলো, মাটি ক্ষয়, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে এসেছিলো সমগ্র অঞ্চলটির ওপর।
মা: তারপর? গ্রামের মানুষদের প্রতিবাদ সফল হয়?
শুভ্র: করাতকলের সদস্যরা গাছ কাটতে এলে সেখানে রুখে দাঁড়ান গওরা দেবী ও তার সঙ্গী মহিলা মঙ্গল মন্ডল। গাছকে জড়িয়ে ধরে প্রতিবাদে সরব হন জঙ্গলের বাসিন্দারা। গাছের সঙ্গে মানবিক অস্তিত্বকে আটকে রাখার এই লড়াইয়ের নাম চিপকো।
বহু লড়াইয়ের পর তাঁরা জিতেও যান।
মা: চোখে জল এসে গেছিলো রে, তবু ভালো মানুষ বাঁচাতে পারলো গাছগুলোকে।
শুভ্র:কিন্তু সেই জয় সাময়িক মা, বিভিন্ন সময়ে আমরা আমাদের প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলি, চোরাশিকারিরা তো আছেই, অজস্র বাড়ি ঘর, রাস্তা, ব্রীজ তৈরি হচ্ছে আর কাটা পড়ছে অজস্র গাছ। জঙ্গলে পশুপাখিদের থাকার জায়গাতেও আমরা হাত বাড়িয়েছি, ঘন জঙ্গলের গাছ কেটে তৈরি হচ্ছে রিসর্ট।
আর গাছের সংখ্যা আজ এতো কমে গেছে যে আমাদের পয়সা দিয়ে কিনতে হচ্ছে অক্সিজেন।
ঠাকুমা: সত্যি মানুষ আর কবে যে সচেতন হবে!
বাবা; হুম আচ্ছা আজ একটা কাজ করলে হয় না!
শুভ্র: কি কাজ বাবা?
বাবা: আজ যদি সারা পাড়ার সমস্ত বাড়িতে একটা করে অন্তত গাছ আমরা বিলি করতে পারি, কেমন হয়?
শুভ্র: খুব ভালো ভেবেছো সত্যি..
ঠাকুমা: এই শুভ্র, তাড়াতাড়ি বাজারে যা, দেখ দেরি করলে গাছওলা আবার চলে না যায়, শিগগিরই যা, আর যেতে যেতে হিসেব করে নিস কতগুলো গাছ আনবি, কেমন?
মা: হ্যাঁ, তাড়াতাড়ি যা..
শুভ্র: আর আজ আমাদের স্লোগান হবে
“বিশ্ব জোড়া আজ প্রাণের আমন্ত্রণ
এসো করি সবাই সবুজের সংরক্ষণ।”