আত্মকথন
-সুনির্মল বসু
মধ্যরাতে দুধেল জ্যোৎস্নায় পাহাড়ের খাঁজে চাঁদ দেখলে, তোমার কি কোনো চাঁদ মুখের কথা মনে পড়ে, বিগত পঞ্চাশটা বসন্ত পেরিয়ে আসার পর কারো জন্য বুকের বাঁ দিকে চিন চিন ব্যথা অনুভূত হয়, মধ্যরাতে কোনো নারীর কান্না কি তোমার রাতের ঘুম কেড়ে নেয়?
সিনেমার ফ্ল্যাশব্যাক ছবির মতো নির্জন উপকূলে উদাস নীল সমুদ্রে আজো কি স্মৃতিতে ভাসে সেদিনের প্রিয় নায়িকা, এক লহমায় কলেজ ভার্সিটির দিনগুলো ভেসে যায়? কফি হাউস, বসন্ত কেবিন, বসুশ্রী সিনেমা, গড়িয়াহাট মোড়, কত সোনালী বিকেলের অর্থপূর্ণ ছায়াছবির কোলাজ,
আমি তোমায় ভালোবাসি, অনন্যা,
ভ্যাট, বাজে বোকো না,
ওই দ্যাখো, রাস্তা পেরুচ্ছেন কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত,
দেখছি তো, কবি রাস্তা পেরুলে, পথে সময়ের উতরোল ঢেউ ওঠে, ট্রাম লাইন পেরিয়ে, অজস্র জনতার ভিড়ে সময় হেঁটে যায়,
মাঝে মাঝে অতীত বড় বাঙ্ময় হয়ে ওঠে, অমলেন্দু, আমি তো তোমাকে দুহাত দিয়ে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিলাম, তুমি তো আমায় ফিরিয়ে দিলে,
পুরুষের অক্ষমতা তুমি বুঝবে না,আমাকে চলে যেতে হল, অনেক দূর,রাতের নিয়ন আলো, লেকের ধার, গোলপার্কের রাস্তায় কত স্মৃতি পড়ে আছে, যে নিজে থেকে হারায়, তাকে খুঁজে কি লাভ,
খুঁজি না তো, নদীর ঢেউ সরে গেলে, তটরেখার পলিমাটি ভেসে ওঠে, যে দিনগুলো খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছিল, মাঝে মাঝে হঠাৎ হঠাৎ জেগে ওঠে,আমাকে আর তুমি কখনো খুঁজো না অমলেন্দু,
অনন্যা, আমি কখনো তোমাকে খুঁজি না, কোনো কোনো দিন বিকেলে, অথবা, ভরা সন্ধ্যায় তুমি আমার স্মৃতির মধ্যে এসে পড়ো,
স্মৃতি কি এতটাই পরাক্রমী,
বোধহয়, নইলে পঞ্চাশ বছর তো কম সময় নয়,
অমলেন্দু, সেসব দিন আমি আর মনে করতে চাই না,
ভুলে যেতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু পারলাম কই,
আমার জীবন যেন খোলাপাতা একটা বই,
এভাবে মনে কষ্ট পুষে রাখলে বাঁচা যায় না,
জানি, স্মৃতি এত নির্মম, তোমার সঙ্গে দেখা না হলে ভাল হত,
তুমি দেখছি স্মৃতিতে বাঁচো, আমি উদাস আকাশে জনতার অরণ্যে ভাসি,
সব কথা হয়েছে বলা, এভাবেই প্রতিদিন বাঁচি,
এ এক একাকিত্বের খেলা, বয়ে যায় বেলা, পাহাড় থেকে সাগর, সাগর থেকে রাজপথ সে দিনের স্মৃতি নিয়ে সাক্ষী থেকে যায়,
তুমি বড্ড অদ্ভুত,
আমি স্বাভাবিক নই, স্বাভাবিক হলে, একটা গড়পড়তা জীবন খুঁজে পেতাম,
দেখো না খুঁজে,
তাঁকে আমি খুঁজি না কখনো, অনুক্ষণ নিজের মধ্যে খোঁড়াখুঁড়ি চলে, এভাবেই বেঁচে আছি বেঁচে থাকার ছলে, জীবন আমার অন্য কথা বলে,
আজ যাই, অমলেন্দু, আমাকে ভুলে যেও, আমাকে মনে রেখো না,
পারি না, সবার মত হতে পারলাম না, অনন্যা,
বেশ, তুমি তোমার মতো হোও, আজ চলি,
কী করে ভুলি সেদিনের কথাকলি,
দুটি ভিন্ন পথে ওরা এগিয়ে যায়।