Site icon আলাপী মন

অণুগল্প- ত্রাণ

ত্রাণ
-অঞ্জনা গোড়িয়া

 

 

আমাদের পঞ্চম ত্রাণ যাত্রা আগামী কাল সকাল আটটায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আজ যাওয়া সম্ভব হয় নি।
বেশ জোরে জোরে ঘোষণা করা হলো ক্লাবের সামনে। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হলো বড়ো করে একটা ফেস্টুন বানাতে। যাতে কোথায় কোথায় ত্রাণ দেওয়া হলো সব উল্লেখ থাকবে। ক্লাবের নামটা বড়ো বড়ো করে লিখতে হবে। সবাই দেখুক, জানুক আমরা কোনো কিছুতে পিছিয়ে নেই। মানুষের পাশে আছি সব সময়।
ক্লাবের সভাপতি নিরঞ্জনবাবু বুক ফুলিয়ে ঘোষণা করে চলে গেলেন।
আরও বললেন, ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য কালকে ত্রাণে থাকছে ত্রিপল, হাঁড়ি কড়াই আর কিছু শুকনো খাবার। সব কিছু সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতে হবে। সব নির্দেশ দিয়ে গেলেন ক্লাবের ছেলেদের।

পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল এই গাঁয়ের’ই নবীন চাচা। মুখটা কাঁচুমাচু করে মাথা নিচু করে সব শুনছিল। হাতটা বাড়াতে গিয়েও থমকে গেলেন।
পরের দিন যথাসময়ে ত্রাণের গাড়ি এসে হাজির। ফেস্টুনটা তৈরি। বেশ বড়ো বড়ো করে লেখা আছে ক্লাবের নাম। সভাপতির নাম। সবাই প্রস্তুত।
পথ রোধ করে দাঁড়ালো নবীন চাচা। হাত জোড় করে বললো, বর্ষায় খড়ের চালটা নেমে গেছে। ঘর থেকে টপটপ করে বৃষ্টি পড়ছে। তোমরা তো ত্রাণ দিতে যাচ্ছো। দেবে গো একটা ত্রিপল? আমার ঘরের জন্য। আর কিছু শুকনো খাবার। ছেলেটা সকাল থেকে না খেয়ে আছে। আমি বড়ো মুখ করে বলে এসেছি, তোর জন্য ক্লাব থেকে খাবার আনছি। দেবে গো সভাপতিবাবু?
মুখটা বিরক্তির সুরে বললো, দেখতে পাচ্ছো, সব মাল রেডি হয়ে গেছে ইয়াস দূর্গত এলাকার জন্য। আর তোমার এখুনি বলার সময় হলো। এখুনি মিডিয়া আসবে খবর দিয়েছি। সংবাদ শিরোনামে আসবে আমাদের ত্রাণ প্রকল্পটি। এখন যাও তো বাপু। ত্রাণ দিয়ে ফিরে এসে দেখা যাবে। যদি বাঁচে তো, তোমার জন্য একটা ত্রির্পল ..
থাক বাবু, তোমরা যাও। শুভ কাজে যাচ্ছো। আমার কাছে কিছু খুচরো পয়সা আছে যদি ওদের কাজে লাগে, নেবে গো ত্রাণের জন্য?
আমাদের ঠিক চলে যাবে দুবেলা। আগে ওরা তো বাঁচুক। বলেই লুঙ্গির খুঁটে বাঁধা একটা টাকার বান্ডিল এগিয়ে দিল সভাপতির দিকে। অনেক দিন ধরে জমিয়ে ছিল ছেলের পড়ার জন্য। তাই শত অভাবেও এ-টাকা খরচ করে নি। আজ সেই টাকাই তুলে দিল ইয়াস কবলিত এলাকার ত্রাণের জন্য।
ততক্ষণে মিডিয়া হাজির। সেখান থেকে কোনোক্রমে মাথা নত করে একপ্রকার ধাক্কা খেয়ে এগিয়ে চললো ত্রাণের গাড়ি।

Exit mobile version