প্রেমিকের ডাকনাম
-কাজল দাস
-“তোকে তুমি বলে ডেকে ফেলি যদি
কেন আকাশকে ছুঁয়ে ফেলে নদী।”
হ্যাঁ, সেদিন তুমি ছিলে- তুই।
আর তুই থেকে তুমিতে আসতে দীর্ঘ একটা পথ নদীর মতোই বয়ে গেছে অন্য ঠিকানায়।
বলতে গেলে এক প্রকার উন্মাদনাই ছিল- তুমি শোনা আর তুমি বলার ভেতর।
ছিল একটা লজ্জা সিক্ত উচ্চারণ- তুমি।
বেশ অধিকারের জোরেই- তুমি ডাকা।
তুমি!
কি ভালো যে লাগতো, যেন নতুন একটা সম্পর্ক, নতুন একটা পরিচয়।
তার পর এই পরিচয়ের জের টেনে-
তুমি হয়ে উঠলে স্ত্রী, সীমন্তিনী।
তোমাকে পেলাম নব রূপে,
সেদিনের পাওয়াটা ছিল- সম্পূর্ণ অন্যরকম,
সব গোপনীয়তা ভেঙে-
আমি পেলাম তোমাকে,
আর তুমি পেলে-
শাঁখা, সিঁদুর, পলা, শ্বশুর শাশুড়ি,
সম্পূর্ণ নতুন পরিবার।
একটা রাস্তা ভেঙে রাজপথ হলো ঠিকই,
কিন্তু ফুটপাত জুড়ে শুধুই একাকীত্ব।
প্রেমিকার ডাকনাম গেল বদলে।
ডাকতে ডাকতে ক্লান্তি এলো,
সংসারের বেড়াজাল টোপকে-
প্রেমিকা এলো না।
তারপর একদিন বুকের ওপর মুখ রেখে বললে-
আমি মা হতে চলেছি।
সেদিন এক অদ্ভুত আনন্দে ছুটে গিয়েছিলাম তোমার কাছে।
তোমার চোখে চোখ রেখে-
খুঁজে নিয়ে ছিলাম নিজেকে,
আমি সন্তান পেলাম,
বাবা শব্দটার সাথে পরিচয় অনেক আগেই,
কিন্তু এই পরিচয় যেন সম্পূর্ণ অন্যরকম।
ভালো লাগা ভালোবাসার সাথে-
আমি পেলাম- দায়বদ্ধতা,
আর তুমি পেলে-
অদৃশ্য এক ডানা, নিজস্ব এক আকাশ,
নতুন একটা ঠিকানা,
অতএব নিয়ম মেনে আবারও বদলে গেল ডাকনাম।
রাজপথ গিয়ে পৌঁছাল কাজল লতায়।
সেই অন্ধকারেও আমি ভীষণ একা।
এভাবে ভাবিনি কখনো-
ভেবেছিলাম প্রেমিকের কোনো ডাকনাম হয় না।
ভেবেছিলাম হয়তো দূরত্ব কমিয়ে ফেলেছি।
ভেবেছিলাম হয়তো হাতের কাছাকাছি।
ভেবেছিলাম-
একটা অপেক্ষার অপেক্ষায় আজো তুমি হয়তো জানালার দীর্ঘ নিঃশ্বাসে দাঁড়িয়ে আছো।
সময় পেরিয়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে
বলবে- ভালোবাসি।
বৃষ্টির অবগুণ্ঠন সরিয়ে ভেজা ঠোঁটৈ-
ভিজিয়ে দেবে ঘুমন্ত মরুভূমি।
ভেবেছিলাম!
তাই নিরুদ্দেশ সম্পর্কে ঘোষণায়-
এখনো একটা হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকাকে খুঁজি।
যাকে কয়েক বসন্ত আগে হারিয়ে ফেলেছি গাঁটছড়ার অচিরেই।
লজ্জা বসনের আড়ালে আজো একটা প্রেমিকার মুখ মনে পড়ে।
যাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলে-
সহজ হয়, বিরক্ত নয়।
যার আঙুলে আঙুল রাখলে-
জগৎ জয়, অস্বস্তি নয়।
এখন তার নতুন পরিচয়।
কিন্তু আমি প্রেমিক হয়েই রয়ে গেলাম।
জানো- আমি না, প্রেমিক হয়েই রয়ে গেলাম
জানি হয়তো নামকরণের চৌহদ্দি পেরিয়ে-
তোমার প্রেমিকা হয়ে ওঠা আর হবে না,
তাই-
ফিরে পেতে চাই ‘তোকে’,
তুমির ভেতর থেকে ছোঁ মেরে তুলে নিতে চাই- ‘তোকে’।
সেই না বলা কথার ভাঁজে ছেঁড়া মুহূর্তদের,
জন্য আমি অপেক্ষারত।
পাশাপাশি, ঘেঊষাঘেষি করে বসে আছে ‘তোকে’- ছুঁয়ে দেখার অনুভূতি।
পুরনো রাস্তার নিস্তব্ধ অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছি, আজো একটা চিঠির অপেক্ষায়।
জানিস আজো আমি স্কুলের পাঁচিল টপকাই।
তোর বাংলার পিরিয়ডগুলো এখনও খুব দীর্ঘ, শেষ হয়েও যেন শেষ হয় না।
সময় পেরিয়ে যায়-
আমি রাস্তায়।
বিশ্বাস কর আমি আজও অপেক্ষারত।
আর কতো দাঁড়িয়ে থাকবো, আর কতো!
রাস্তাগুলোও ক্রমেই চওড়া হতে হতে ফুটপাতে এসে দাঁড়িয়েছে।
এখন আর আমার অপেক্ষা করার মতো জায়গা নেই।
এমনো তো হতে পারে
তুমি আবার- তুই হয়ে গেলি।
তাহলে গোটা শহরটাই দেখবি কেমন আবার আগের মতো হয়ে গেছে।
তার চেয়ে তুই আবার- তুই হয়ে যা,
লুকিয়ে ফেলি তোকে সবার অলক্ষ্যে,
তার চেয়ে তুই আবার স্কার্ট হয়ে যা,
কিংবা নীল সাদা শাড়ি, না হয় অন্য কিছু,
তার চেয়ে তুই আবার-
পারিস তো তুই আবার প্রেমিকা হয়ে যা!