ট্রাডিশন যখন যেমন
-সুজিত চট্টোপাধ্যায়
সকাল সাতটা। মেঝেতে বাবু হয়ে বসে, জানালার গরাদেতে হাত আয়না ঠেসান দিয়ে দাঁড় করিয়ে, গালে সাবান ঘষে ব্লেড লাগানো রেজার দিয়ে দাড়ি কামান নন্দুবাবু। তারপর বাজার।
সকাল আটটায় রান্নাঘরের সামনে ধরাস করে ফুট দেড়েক সাইজের কাৎলা কিংবা রুই ফেলে দিয়ে কলতলায় চলে যান চান সেরে নিতে।
ইতিমধ্যে স্ত্রী কমলা, সেই মাছের ঝোল আর ভাত, তরকারি, ভাজা ইত্যাদি রান্না করে, অপেক্ষায় আছেন।
কত্তা চান সেরে দেওয়ালে টাঙানো যাবতীয় ঠাকুর দেবতাদের প্রণাম ঠুকেই খেতে বসবেন। আপিস আছে। ভীষণ চাপ। ট্রামের মান্থলি টিকিট করা আছে। বাদুড়ঝোলা নিত্যকার জীবনের যন্ত্রণা।
সন্ধ্যে ছটা। নন্দুবাবু। বাড়ি ফিরে, কলতলায় হাতমুখ ধুয়ে ধুতি পড়ে চেয়ারে বসে খবরের কাগজ পড়বেন। স্ত্রী কমলা একটু মুড়ি চানাচুর, কিংবা দুটো গরম রুটি একটু হালুয়া, সঙ্গে এককাপ চা। কত্তার টিফিন। সন্ধ্যে সাতটায় রেডিওতে বাংলা সংবাদ। দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন পল্লীমঙ্গল অনুষ্ঠান চলছে। কত্তার কান, চোখ, মুখ সব একসঙ্গে চলছে।
গিন্নির ফুরসৎ নেই। রাতের খাবার বানাতে হবে। ছেলে মেয়েরা পড়ছে। শাশুড়ির জ্বর এসেছে। রাতে কত্তা ঘুমিয়ে না পড়লে, বলতে হবে, শ্বশুরের কাশির ওষুধটা ফুরিয়ে গেছে। ইলেকট্রিক বিল জমা দেবার কালই শেষ তারিখ।
সেদিন গিয়েছে কালের অতলে। এখন, নন্দুবাবুর উত্তরাধিকারী মিঃ কুন্তল ব্যানার্জি। অটো সেভারে মসৃণ করে দাড়ি কামিয়ে, সেলফোন তুলে বাপিকে মাছের অর্ডার দিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল। ফ্রিজে রাখা মাছ সব্জি ইত্যাদি বের করে নিয়ে গিয়েছে মানুদি। রান্না করার লোক।
মিসেস ব্যানার্জি এখনো শুয়ে আছেন। গতকালের নাইট পার্টির ধকল। হ্যাংওভার।
ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে, ওয়াড্রব থেকে স্যুট বের করে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাই বেঁধে নিয়ে চলে এলো ডাইনিং টেবিলে। ব্রেকফাস্ট সাজানো আছে। ঝটপট খেয়ে সোজা ড্রাইভিং সিট। হর্ন দিয়ে চলে গেল। তাড়া আছে। আজকের ডিরেক্টরস মিটিংটা খুবই ইম্পর্ট্যান্ট।
রাত নটা। দু’ পেগ হুইস্কির সাথে চিকেন পকোড়া কিংবা হ্যাম স্যান্ডউইচ। টিভিতে নিউজ বুলেটিন। মিসেস ব্যানার্জির পলিটিক্যাল মিটিং আছে। মানুদি খবরটা জানিয়ে দিয়ে, আজকের মতো চলে গেল।ওর ডিউটি আবার কাল শুরু হবে।
পেরেন্টসের দায়িত্ব যথাযথ মর্যাদায় দেওয়া আছে ওল্ডএজ হোমে। ছেলে দেরাদুন স্কুলে। উইন্টার ভ্যাকেশনে আপার্টমেন্টে আসে কিছু দিনের জন্য।
সব ব্যবস্থা এবশোলিউটলি ও কে। নো প্রবলেম। শুধু একাকীত্ব বোধ মাঝেমধ্যে,
নইলে নাথিং, নো প্রবলেম, নো..
ভীষণ চমৎকার লেখাটা দাদা
খুব ভালো লাগল ।
দারুন সৃষ্টি