রম্য রচনা,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

রম্য- “নেই কাজ তো খই ভাজ”

।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।

 

“নেই কাজ তো খই ভাজ”
-রাখী চক্রবর্তী

 

 

“নেই কাজ তো খই ভাজ “
প্রবাদ বাক্যটি শুনে একটা বিষয় মাথায় ঢোকে না খই ভাজা কি কোন কাজের মধ্যে পড়ে না ?অকর্মণ্য গুলোই
কি খই ভাজার দায়িত্ব নিয়েছে, জানি না বাপু!
চিড়ে ভাজা, মুড়ি ভাজা, চাল ভাজা এগুলো কাজের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ।খই সেভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি তাই বোধহয় খই ভাজাকে পরিশ্রমের আওতায় আনা হয়নি।
সাধারণত
হাতে কাজ না থাকলে মানুষ কি করে।বৌ ,ঝি ,পাড়ার কাকিমা জেঠিমা মাসীমা ঠাকুমা এনারা পিএনপিসি অর্থাৎ পর নিন্দা পরচর্চা করতেন ।না ,না রাগ করলে হবে না সবার কথা বলিনি কিন্তু।
কেউ কেউ ঠাকুর দেবতা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন।তাহলে খই ভাজার কথা এলো কেন?
ছেলেরা বা বয়োজ্যেষ্ঠরা হলে চায়ের দোকানে আড্ডা বা ক্লাবে আড্ডা দিতেন। না,না
বড় ভুল‌ হয়ে গেছে তখন কি ক্লাব ছিল না কি,তখন মাঠ ঘাট ছিল, পথে ঘাটে বনে জঙ্গলে শৌচকর্ম করতে যেতেন আর নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন
।সেখানে তো খই ভাজার কোন প্রশ্নই আসত না ।এমন প্রবাদ প্রবচনও তো হতে পারতো “কাজ নেই তো ধম্ম কম্ম কর” বা “কাজ নেই তো সেলাই ফোড়াই কর” বা‌ “কাজ নেই তো রাজনীতি কর” ‌।এই
রাজনীতি’র ব্যাপারটা ঠিক না,ছেড়েই দিলাম, রাজনীতির গভীরে প্রবেশ না করাই ভালো।আসল  কথায় আসা যাক
গ্রামের মা ,বৌ ,ঝি’রা অন্ন সংস্থানের জন্য খই ভাজে।শুধু খই কেন মুড়ি, চিড়ে, চাল ভাজে।ওনাদের পরিশ্রমকে কুর্নিশ জানাতে হয় ।সবচেয়ে বড় কথা
দই দিয়ে খই খেতে যে অসাধারণ লাগে তা কম বেশি সবাই জানি।তাই খই বা খাবার নিয়ে
কোন রকম ব্যঙ্গ রসিকতা করা একদম ঠিক না।ধনীদের কাছে সবই হাস্যকর।খেটে খাওয়া মানুষ গুলো জানে খই ভাজতে গেলে আগুনের প্রয়োজন হয়।ইদানীং রান্নার গ্যাস সব জায়গায় পৌছেছে।কিন্তু কয়েক বছর আগেও জ্বালানীর জন্য কাঠ জোগাড় করা কতো কষ্টের ছিল ।
বর্ষায় কাঠ ভিজে থাকতো।হাঁড়ি চড়তো না।মাটির দাওয়া বসে কপাল চাপড়াতো আর বৃষ্টি দেখতো অসহায় মা‌ ঠাকুমারা , ওনাদের চোখের জলের সাথে বৃষ্টির জল মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতো।
প্রত্যন্ত গ্রামে আজও জ্বালানি হিসেবে কাঠই ব্যাবহৃত হয়,
আধুনিক যুগে এয়ারকন্ডিশন ঘরে বসে বলা যেতেই পারে ” নেই কাজ তো
পপকর্ন ভাজ”।কিন্তু কে বলবে ? আমি আপনি না কি ‌নতুন প্রজন্মের কেউ ?
” নেই কাজ তো পপকর্ন ভাজ “
খই ফোটার মতোই শব্দ হবে ফুটফাট।হাঁড়ি চড়বে ।ভাত ফোঁটার গন্ধ পেয়ে ছোট্ট ছেলেমেয়ে গুলো মাঠ থেকে ছুটে এসে বলবে,” মা ভাত খিদে পেয়েছে “
দিন বদলাচ্ছে জীবন ধারণের গতি পাল্টাচ্ছে ।তাই খইয়ের বদলে প্রবাদ বাক্যে পপকর্ন যদি যুক্ত হয়।”নেই কাজ তো পপকর্ন ভাজ” । বেশ বড়লোক বড়লোক ব্যাপার শোনাবে তাই না।
আর খইটা থাক আগের মতোই দই ,কলা, মিষ্টি দিয়ে খাওয়ার জন্য।আর সবশেষে প্রার্থনা করি প্রতিটি শিশুর মুখে যেন খইয়ের মতো বুলি ফোটে,বোবা শব্দটি চিরতরে মুছে যাক,চিরতরে,,,,,

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page