তীব্র আঁধার
-রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
সময়টা কি এইরকম হতে পারে- দু’টো বাড়ি পরে ডাকাত পড়েছে, আমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ি? নাহ্, মনে হয়। তীব্র সঙ্কটের মুখে- সভ্যতা, সংস্কৃতি হয়তো বা অস্তিত্ব।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ও দেশের নাগরিকরা যেভাবে আজ বিপদের সম্মুখে বিপন্ন হয়ে পড়েছে, ভাবতেই ভয় লাগছে।
সন্ত্রাস, আগ্ৰাসনের শিকার- এমন হবার কি কথা ছিল? কেন হলো? কিভাবে হলো?
ইতিহাস-ভূগোলের ভূমিকা অনেক প্রশ্ন হয়তো আপেক্ষিক ভাবেই উঠে আসবে। পরিণাম জানা নেই.. আরো রক্ত, আরো কান্না, আরো হাহাকার.. তারপর? নাহ্, ভাবতে পারছি না.. সব কেমন ঝড়ের মতো লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে মন, মস্তিষ্ক- বড়ো বেসামাল।
যে কোনো শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ মনে হয় আজ বড়ো অসহায়- শুধু অপেক্ষা পাপের আঁধার শেষে নতুন সূর্য উঠবে, আমাদের প্রতিবেশী দেশ আবার হাসবে। নাহলে তো আমরাও অসুরক্ষিত- ভাবনার ঘরে ছিদ্র হয়ে গেছে- ভাবনাও অসংলগ্ন..
ভালো থাকার উপায় জানা নেই- তবুও থাকতে হবে।
আগামীর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ বলতে কারা? পাকিস্তান , চীন , নেপাল , বাংলাদেশ নাকি আফগানিস্তান?
আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালোই ছিল। ওদের ওখানে বেশ কয়েকটি প্রজেক্টে ভারত মোটা টাকা ইতিমধ্যে ইনভেস্ট করে ফেলেছে। বাইডেন তাদের দেশের সুবিধা মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। লাদেনের ধ্বংস চেয়েছিল। দশ বছর আগেই তা সারা হয়ে গেছে। ওরা সেখানকার উন্নয়ন চাইছে না।
এই সুযোগে তালিবানরা আবারও বিশ বছর বাদে পূণরায় আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে। কাবুল দখল হয়ে গেছে। বিনাবাধায়।
এবার আমাদের প্রতিবেশী দেশ চীন , পাকিস্তান এমনকি বৃটেন , আমেরিকা তালিবান সরকার কে মান্যতা দিয়ে দিয়েছে।
প্রতিবেশী দেশ নেপালও ভারতের বিপক্ষে। সম্ভবত চীনের প্রশ্রয়ে। কেবলমাত্র বাংলাদেশ এখনো খানিকটা হলেও ভারত কে সম্মান দেয়। এইটুকু বাদ দিলে , ভারত এখন একঘরে।
এর জন্য দায়ী ভারতের বিদেশ নীতি।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বছরের বেশির ভাগ সময় বিদেশে কাটান। বক্তৃতা দেন। তবুও কোথায় যেন পোড়া গন্ধ।
সন্ত্রাসবাদীরা অস্ত্র হাতে নেত্য করছে। ইমরান খান পুলকিত। চীন উচ্ছ্বসিত। গনি কাঁড়ি কাঁড়ি সম্পদ নিয়ে পলাতক। তিনি ইউনাইটেড কিংডম এর চল্লিশ বছরের পুরনো নাগরিক। সুতরাং তার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত।
ভারত হারাধনের শেষ ছেলে। দেখা যাক কী সিদ্ধান্ত নেয়। ওয়েট আন্ড সি।
রাজনৈতিক ও বিতর্কিত বক্তব্য- যা হয়তো এখন কাম্য নয়, আর সে কথা বলতেই চাই নি। বলতে চেয়েছি শুধুমাত্র অসহায় মানুষগুলোর কথা, যাদের কথা ভাবার অবকাশ কখনো আসে না কারোর- রাজনৈতিক, কূটনৈতিক কোনো দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে। ইতিহাস কচলে তেতো স্বাদ নেবার সময় হয়তো এটা নয়। আপনার ইতিহাস ও রাজনীতির জ্ঞানের প্রকাশকে সাধুবাদ জানাই। ধন্যবাদ বন্ধু।
এটাকে কী বলবো ? তালিবান রিটার্ন না-কি তালিবান ২?
কেন বলছি একথা ?
১৯৯৬ সালের তালিবানি সন্ত্রাস ধ্বংসাত্মক বেপরোয়া কার্যকলাপ মানুষের মনে গেঁথে আছে। বিশেষ করে ভুক্তভোগীরা সেই আতঙ্কিত সময়ের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা কে ভুলে যাননি। ভুলে যাওয়া সম্ভবও না।
নারীদের ওরা শুধুমাত্র রক্ত মাংস চামড়া ছাড়া আর কিছুই ভাবে না।নারী সম্ভ্রম , নারী স্বাধীনতা , নারী শিক্ষা , এইসব চিন্তা ওদের উন্মাদ বর্বর মস্তিষ্ক বরদাস্ত করে না।
যারা শুধু মাত্র নিজেদের ধর্ম ভিন্ন অন্যের ধর্ম কে স্বীকার করে না , এমনকি শিয়া সুন্নি মুসলমান সম্প্রদায়ের বিভাজন কে প্রবল আক্রোশে সমর্থন করে , তারা যখন হঠাৎ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন , আমরা মেয়েদের স্বাধীনতা দেবো কিন্তু শরিয়তের নিয়ম মেনে , তখনই সন্দেহ আরও গাঢ় হতে থাকে।
আমেরিকার সেনা প্রত্যাহার আচমকা হতে পারে না। এটা বহু আগেই স্থির করা হয়েছিল , এখন কার্যকর করা হয়েছে। একাজ ওদের পক্ষে খুবই স্বাভাবিক। কেননা ওরা বেনিয়া জাত।ওরা হিসেব করে দেখেছে , ওখানে সেনা পোষার বাৎসরিক খরচের মাত্রা দিনদিন বেড়েই চলেছে। প্যানডেমিক কারণে তাদের যে আর্থিক দূরাবস্থা আসতে চলেছে , তাতে করে আর বাড়তি খরচ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তাই অন্য কারোর কথা না ভেবে , এমনকি এর ভয়াবহ পরিনতির বিষয় জানা থাকা সত্বেও নির্মম স্বার্থপরতার নজির সৃষ্টি করতে তাদের বাধলো না।
ভারত ইতিমধ্যে সেখানকার উন্নয়ন প্রকল্পে বাইশ হাজার কোটি টাকা ঢেলে দিয়েছে। আগামী দিনে চীন সেই সবই গ্রাস করবে। পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদি দের আরও উৎসাহ দান করবে।তারা কেউই স্থানীয় মানুষের কথা , নারী নিরাপত্তার কথা চিন্তাও করবে না। যেমন আমেরিকাও করেনি।
তিন লক্ষ আফগান সেনা , মাত্র আশি হাজার তালিবানির কাছে আত্মসমর্পণ করে দেয় , তখনই বোঝা যায় , এই রাজনৈতিক খেলার উৎস কোথায় ।
তাই এই ঘটনা সম্পুর্ণ ভাবে একটি রাজনৈতিক খেলা। যে খেলার পুতুল সেখানকার নিরীহ জনগন। আজকের এই অমানবিক নিষ্ঠুর ঘটনাও আগামীতে ইতিহাস হয়ে যাবে।