।। অমরনাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ।।
মূল্যবোধের অবক্ষয়
-শিলাবৃষ্টি
আজকে বড়ই লজ্জার বিষয় এটাই যে — বর্তমান যুবসমাজের নৈতিক মূল্যবোধহীনতা!যে মানুষের মধ্যে আছে অনন্ত সম্ভাবনা,যা দিয়ে মানুষ পারে একটা স্বর্গ রচনা করতে– সেই মানুষই মনুষ্যত্বহীনতায়,মানহীনতায় ,হুঁসহীন হয়ে করছে একের পর এক জঘন্য অপরাধ।
পশুর সাথে সমাজের মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের আজ পার্থক্য কোথায়? লোভ তাদের গ্রাস করছে। মানুষ হয়ে উঠছে ক্রমশঃ স্বার্থপর। ভাবতে আজ অবাক লাগে — আমরা নাকি সেই বরেণ্য মহাপৃুরুষদের উত্তরসূরী! এই সেদিন যাঁরা নিজেদের জীবন দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন –আমরা তাঁদেরই ঘরের ছেলেমেয়ে ! অথচ আমাদের দেশের একটি শিশুও আজ নিশ্চিত জীবন কাটাতে পারেনা — তাকেও পাশবিক বল প্রয়োগ করা হয়! সে হয় ধর্ষিতা।
ছোটরা শিখছে কথায় কথায় মিথ্যে বলতে,ভালো লাগা জিনিসটা চুরি করতে। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে নানান কু কীর্তি করে বেড়াচ্ছে।
পণপ্রথা আইন করেও বন্ধ করতে পারেনি সরকার। বধূ হত্যা ,বধূ নির্যাতন সমাজে উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।বিবাহ বিচ্ছেদ আজ তো কোন ব্যাপারই নয়! সম্পত্তি নিয়ে গৃহ বিবাদ, বাপ- ছেলের কলহ,খুনোখুনি লেগেই আছে। শিক্ষককে আজ সামান্য সম্মানটুকু দিতেও ছাত্রদের কৃপণতা। মানুষকে ঠকানোতেই মানুষের চরম আনন্দ লাভ।
আজ এই সবের কারণ খুঁজতে গিয়ে মনে হয়েছে — যুবসমাজের উপর এখন পড়েছে উগ্র আধুনিকতার প্রভাব, একান্নবর্তী পরিবারের অভাব, সুবিধাবাদী নীতির ছড়াছড়ি, আদর্শের অভাব,পাঁচমেশালি সংস্কৃতির প্রভাবে বেপরোয়া মনোভাব। আর এসব কিছু একদিনে হয়নি – একদিকে এগিয়েছে সভ্যতা আর অন্যদিকে অবনমন ঘটেছে মূল্যবোধের।
মনে হয় সর্বাগ্রে চাই মানুষের মনে ন্যায় বোধের জাগরণ, তাহলে মনুষ্যত্বের জাগরণ ঘটবে। মহাপুরুষদের জীবনীপাঠ এবং তাঁদের জীবন পথের অনুসরণ করা।ধ্বংসের পথে না এগিয়ে কিছু সৃষ্টির মনোভাব রাখা।কর্মমুখী চেতনা যুবক সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে না দিতে পারলে ভয়ানক এক দিনের মুখোমুখি আমাদের হতে হবে হয়তো।বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নীতিশিক্ষার বা আদর্শচর্চার ক্লাস অবশ্যই রাখা উচিত। প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে আজ শৈশব বিপন্ন। প্রতিযোগিতা আর প্রতিযোগিতা! তাই ছেলেবেলা থেকেই ছেলেমেয়েরা বড় নিঃসঙ্গ ,বড় একা ।
এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে ভয়াবহ এক সময়ের সামনে আসতে হবে। তাই চাই বিশ্বাস । মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস। কারণ মানুষের মধ্যেই আছে প্রকৃত সম্ভাবনা। মানুষের চারিত্রিক সম্পদের অনুসন্ধান মানুষকেই করতে হবে ।।