Site icon আলাপী মন

গল্প- অভি

অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

অভি
-পায়েল সাহু

রক্তিম, অভিনন্দা, অমৃতা, নীতা আর মৌলি কলেজ থেকেই অভিন্ন হৃদয় বন্ধু। যেখানে থাকে সেখানেই একসঙ্গে, যা করে একসাথে পরামর্শ করেই।
রক্তিম আর নীতা একই অফিসে চাকরি করে এবং বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে পরবর্তীকালে। মৌলি কলেজে পড়ায়, অমৃতা গৃহবধূ আর অভি মানে অভিনন্দার পেশা ফটোগ্রাফি।

অভি নিজেকে ছেলে হিসেবেই ভাবতে ভালোবাসে, তার সাজপোশাক চেহারা সবটুকুই ছেলেদের মতো, এমনকি গলার স্বর অব্দি। তাই অচেনা কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে সে নিজের “অভি” নামটা বলতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করে। শুধু মনে নয়, কলেজে পড়ার সময় থেকেই সে বেশ বুঝতে পারে আর পাঁচটা মেয়ের মতো মানসিকতা তার নয়, ছেলেদের প্রতি সে কোনো আকর্ষণ বোধ করেনা বরং মেয়েদের তার ভালো লাগে বেশি, মেয়েলি শরীরের খাঁজ-ভাজ তাকে টানে, অসম্ভব আকর্ষণ বোধ করে, যদিও মনে মনে এসব ভাবলেও নিজের বন্ধু-বান্ধবীদের কাছে কখনোই বলে উঠতে পারেনি, কিছুটা লজ্জায়, কিছুটা নিজের অস্তিত্ব সংকটে সমস্যায়।

ফোটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার পর আচমকাই মডেল হিসেবে তার কাছে উপস্থিত হয় রিয়া , নিজের পোর্টফোলিও বানানোর উদ্দেশ্যে। রূপসী রিয়াকে দেখে নিজেকে হারিয়ে ফেলে অভি (অভিনন্দা)। দিনের পর দিন বিভিন্ন জায়গায় ফোটোশুট করতে করতে অদ্ভুত একটা বন্ধুত্ব তৈরি হয় দুজনের। প্রেমিক থাকলেও অভির আবেদন, অভির আন্তরিক ব্যবহার মুগ্ধ করে রিয়াকে। অভি ভীষণ ভরসার জায়গা হয়ে ওঠে রিয়ার কাছে।

ফটোশুট চলাকালীন পোশাক পরিবর্তনের সময় হঠাৎই নিজেকে উন্মুক্ত করে অভির কাছে নিজেকে সম্পূর্ণরুপে মেলে ধরে রিয়া। কোনোরকম ক্ষতির সম্ভবনা না থাকায় দিনের পর দিন রিয়া শারীরিক ভাবে মিলিত হতে থাকে অভির সঙ্গে। আর অভিও ভেসে যায় আনন্দের সাগরে।
ধীরে ধীরে অভির চেষ্টায় রিয়া একজন নামকরা মডেল হয়ে ওঠে। কিন্তু এসবের মাঝে প্রায় বছরখানেক অভি সম্পূর্ণরুপে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল নিজের প্রাণের বান্ধবীদের কাছ থেকে। যদিও এই সম্পর্ক, অভিনন্দার নিজের নতুন পরিচয় তার মা বাবা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি, সম্পূর্ণ রুপে সম্পর্ক ছিন্ন করেন তার সঙ্গে।
এই সময় হঠাৎ একদিন অমৃতার ছেলের অন্নপ্রাশনের নিমন্ত্রণ পায় অভি। অনুষ্ঠানের দিন সে পৌঁছে যায় তার আদরের রিয়াকে সঙ্গে নিয়েই। যথারীতি বন্ধুরা সকলে অবাক হলেও সকলে হাসিমুখে মেনে নেয় তাদের অভির প্ৰিয় মানুষটিকে। বন্ধুদের সঙ্গে আবার নতুন করে যোগাযোগে সবার দিনগুলো হৈহৈ করে কাটতে থাকে।
কিন্তু জীবন রং পাল্টায় প্রতি মুহূর্তে। সোজা সরল ভাবে সে চলতে শেখেনি। রক্তিম আর নীতার বৈবাহিক কলহ ভীষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে বন্ধুদের মধ্যে এবং ধীরে ধীরে সেটা এগোতে থাকে বিবাহ বিচ্ছেদের দিকে। নিজের সন্তানের কথাও আর ভাবতে চায়না রক্তিম।

অভি ভীষণ ভাবে চেষ্টা করে ওদের সম্পর্কটা জোড়া দিতে কিন্তু রক্তিম ট্রান্সফার নিয়ে নেয় অন্য রাজ্যে এবং সবার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এই সময়গুলোতে অভি তার এককালের প্ৰিয় বান্ধবীকে যথাসম্ভব সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করে, খুশী রাখার চেষ্টা করে।

ঠিক এই সময় রিয়া ধীরে ধীরে প্রফেশনাল ব্যস্ততা দেখিয়ে দূরত্ব বাড়াতে থাকে অভির সঙ্গে এবং তাকে দেখা যেতে থাকে মডেলিং এর বিভিন্ন আসরে তার পুরোনো প্রেমিকের সঙ্গে। দিশাহারা অভির ফোনটুকুও তোলার সময় হয়না রিয়ার, বরং ঘটা করে ফেসবুকে পোস্ট হয় রিয়া এবং তার প্রেমিকের বিয়ের এনগেজমেন্টের খবর। দুই দিশাহারা, হতাশাগ্রস্ত বান্ধবী নীতা এবং অভি (অভিনন্দা) আঁকড়ে ধরে নিজেদের। একজন স্বামীহারা, আর একজন? সঠিক সংজ্ঞা হয়তো নেই, ছিলোনা কোনোদিনই, তবে এই কথাটুকু স্পষ্ট হয়ে যায় রিয়া নিজের শরীর দিয়ে অভির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে জীবনে।

পাঁচ বছর কেটে গেছে। রক্তিম আর ফিরে আসেনি, কোনো যোগাযোগ রাখেনি নীতার সঙ্গে, বদলে অভি বুক দিয়ে আগলে রেখেছে নীতা এবং তার সাত বছরের ছোট্ট মেয়ে মিলিকে। হ্যাঁ পরিচয় অবশ্যই আছে তাদের, অভি নীতার বড়ো দাদা আর মিলির ভালো মামু।

Exit mobile version