প্রবন্ধ,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

প্রবন্ধ- রবীন্দ্রনাথের দেশপ্রেম

।। অমরনাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।। 

 

রবীন্দ্রনাথের দেশপ্রেম
– শিলাবৃষ্টি

 

 

সূচনা~
রাক্ষসী পলাশী গ্রাস করে নিয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা সূর্যকে। দীর্ঘ দু’শ বছর ধরে শত শত সংগ্রামী নিজের দেশকে ভালোবেসে নির্ভয়ে এগিয়ে গেছে রণক্ষেত্রে,হাসি মুখে বলি দিয়েছে নিজের প্রাণ।
তবে দেশপ্রেম মানেই যে কেবল জীবন বিসর্জন দেওয়া, তা নয়।দেশের প্রতি ভালবাসার প্রকাশ নানা ভাবে ঘটতে পারে।কবিশ্রেষ্ঠ রবীন্দ্রনাথও পরাধীন ভারতবর্ষ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র উদাসীন ছিলেন না।সংগীতে, কবিতায়, প্রবন্ধে এবং অন্যান্য রচনায় তিনি সেই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।

বাল্যজীবন ও শিক্ষা
~~~~~~~~~~~
১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫শে বৈশাখ জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে যে বিস্ময়কর প্রতিভা জন্মগ্রহণ করেন- তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাতা সারদা দেবী। ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও ভোগবিলাসের মধ্যে যে তার জীবন কাটেনি–তা “জীবন স্মৃতি ” তে প্রকাশিত। বিভিন্ন নামী স্কুলের চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে নিয়ম মাফিক শিক্ষা তাঁকে পীড়া দিয়েছিল। ঠাকুরবাড়ির উন্নত পরিবেশের মধ্যেই শুরু হয় তাঁর শিক্ষা গ্রহণ। শুধু লেখাপড়াই নয়, সেকালের ঠাকুর পরিবারে সাহিত্য, শিল্প ও সঙ্গীত চর্চার যে অনুকূল আবহাওয়া ছিল, সেই আবহাওয়ার মধ্যেই ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

সারস্বত সাধনা~
~~~~~~~~~~
“জল পড়ে পাতা নড়ে” দিয়ে যাঁর ছন্দের অনুরণন শুরু হয়,তা থেকেই নির্মিত হতে থাকে পরবর্তী কাব্য জগৎ।
বনফুল, প্রভাত সঙ্গীত, সন্ধ্যা সঙ্গীত,ভানু সিংহের পদাবলী দিয়ে যাত্রা শুরু করে মানসী, সোনার তরী, নৈবেদ্য, গীতালি, গীতাঞ্জলি , পূরবী,বলাকা, মহুয়া ইত্যাদি হয়ে শেষ লেখায় তিনি থামেন মৃত্যুর দেড় ঘণ্টা পূর্বে। কবি ছাড়াও
ঔপন্যাসিক, নাট্যকার,প্রবন্ধকার,চিত্রকার,সুরকার,গীতিকার রবীন্দ্রনাথকে আমরা সবাই চিনি কিন্তু তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় মানুষ রবীন্দ্রনাথ। তিনি লিখেছেন-“মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক।”

স্বদেশ চিন্তা
~~~~~~~
স্বদেশচিন্তা – সৃজনকর্মে সদা ব্যস্ত মানুষটি শুধু সাহিত্য শিল্পের নন্দনকাননে নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি, প্রথম জীবন থেকেই তিনি দেশমাতাকে শৃঙ্খলমুক্ত করতে চেয়েছেন – দেশবাসীর মনে চেতনা জাগাতে তুলে নিয়েছেন কলম। লিখেছেন একের পর এক স্বদেশী গান – “আমরা সবাই রাজা”, “এক সূত্রে বাঁধিয়াছি সহস্রটি প্রান”, “এখন আর দেরি নয় ধরগো তোরা হাতে হাতে ধরগো”, “সংকোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান”, “ও আমার দেশের মাটি”, “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি”। ভারতবাসীর মনে দেশপ্রেম জাগাতে “ভারততীর্থ”র মত লিখেছেন কতনা কবিতা!

দেশপ্রেম ~
~~~~~~
সমকালীন বহু ঘটনা তাঁর মনে ঝড় তুলেছে – রুখে দাঁড়িয়েছেন – উদ্ধত, মত্ত বর্বরতার বিরুদ্ধে। মানুষের সুখ দুঃখের স্মারক হয়েছেন। নোবেল পুরস্কারের অর্থ তিনি দান করে দিয়েছেন। বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদী আন্দোলনে তিনি স্বয়ং যোগদান করেছেন। তাঁর রচিত “বাংলার মাটি বাংলার জল” এই আন্দোলনের মূলমন্ত্র ছিল। ১৯১৯ খ্রী. জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তিনি নাইট উপাধি ত্যাগ করেন। ভাতৃত্বের বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে সৃষ্টি করেছেন “রাখীবন্ধন”। তাঁর রচিত “জনগণ মন” গানটি আজ স্বাধীন ভারতের জাতীয় সঙ্গীত।

উপসংহার ~
~~~~~~~
ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়েছিল ১৯৪৭-শে কিন্তু – তিনি সেদিন সে আনন্দে যোগদান করতে পারেননি, কারন তার মাত্র ৬ বছর আগে ১৯৪১-শে বাইশে শ্রাবণ তাঁর জীবনাবসান হয়। কিন্তু এ শুধু তাঁর মরদেহেরই অবসান। এই ভাবসাধক কবিশ্রেষ্ঠ খণ্ডকালের হয়েও সর্বকালের। ভারত-আত্মার এই বিগ্ৰহকে তাঁর বঙ্গভূমি, তাঁর ভারতবর্ষ তো ভোলেইনি, সমগ্ৰ বিশ্বের দরবারে তিনি সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত।।

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page