কবিতা- স্বপ্নকুমারী, মেঘমালা

।। অমরনাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।

 

স্বপ্নকুমারী, মেঘমালা
-সুনির্মল বসু

 

 

সেদিন আকাশে মায়াময় চাঁদ ছিল, নক্ষত্রগুলো পৃথিবীর দিকে চেয়েছিল,সুপারি গাছের মাথা বাতাসে দুলছিল,রাতের শীতল নদী বয়ে যাচ্ছিল, আমার চোখে ঘুম নয়,ঘুমের আবেশ ছিল,
তখন তুমি স্বপ্নে এলে যেন,
আমার মেঘমালা,নীল জ্যোৎস্নার ঝাউ বন পেরিয়ে ঢেউ ঢেউ কেশরাশি দুলিয়ে তুমি এলে,
বেনারসী শাড়ির ঘোমটা সরিয়ে আমায় বললে, আমি এসেছি, আমি এসেছি।
কেউ কি এলো, কেউ কি এলো, জীবনে কার পদ সঞ্চার,এত সুন্দর জ্যোৎস্না ধোওয়া মুখ আমি জীবনে দেখি নি,
বললাম,বোসো, দুজনে জ্যোৎস্নায় ভিজি, সারারাত আকাশের ‌তারা গুনি।
সে আমার পাশে বসলো।
বললাম,এত দেরি করে এলে কেন, আমি বড় ক্লান্ত।
সুখের দিনে সবাই আসে, আমি দুর্দিনে এলাম।
তুমি কি স্বপ্নকুমারী,
কি জানি, আমাকে তুমি যা ভাবো, যেভাবে পাও, সেই আমি।
রোজ রাতে আমি তোমার জন্য দরোজা খুলে রাখি।
যখন দখিনা বাতাস ভোর রাতে বয়, আমি তোমার কাছে আসি,
তুমি আমার মতো আকাশের তারা গোনো,
হ্যাঁ তো।
তুমি আমার মতো একা।
সৃষ্টিশীল মানুষ তো একাই। আমি স্বপ্ন দিই, তুমি কবিতা দাও।
তোমার বন্ধু কারা,
চাঁদের আলো, সূর্যতোরণ, নদী,গাছপালা।
আশ্চর্য,ওরা তো আমারো বন্ধু।
তাই বুঝি।
হ্যাঁ তো।
মেঘমালা বলল, আমি ভালো মানুষ খুঁজতে বেরিয়েছি, আমি তাদের স্বপ্ন বিলোই।
তুমি থাকো কোথায়,
অলোক বর্ষের ওপারে।
সেটা কোথায়,
তোমার মনে।
তাই।
মন ই তো সব। যে রঙে রাঙাবে, সেই রঙে দেখা দেবে।মন পরিস্কার না হলে, ভালো জিনিস দেখা যায় না।
ভোর হয়ে আসছিল,তখন। গাছের পাতায় শিশির ঝরছিল, ভোরের পাখি ডাকছিল।
মেঘমালা বলল,আজ যাই। কোনো ভালো মানুষের দুঃখী মানুষ হোতে নেই। মানুষের কাছে কখনো কাঁদবে না, মানুষের জন্য কাঁদবে।
আবার কবে আসবে।
তুমি চাইলেই আমি আসবো।
কথা দিচ্ছ।
তিন সত্যি করে বলছি।
তখন পদ্ম বনের ওপারে সূর্যের প্রথম আলো এসে পড়লো,
আমার মেঘমালা বাতাসের নিরালম্ব ঢেউয়ের মতো মিলিয়ে গেল।

Loading

Leave A Comment