Site icon আলাপী মন

কবিতা- “ছেঁড়া তমসুক”

।।  অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার আমার।। 

ছেঁড়া তমসুক
– সঞ্জিত মণ্ডল

মনের গহন কোনে সুক্ষ্ম এক তীক্ষ্ণ অনুভূতি সূচ ফোটায়,
বুকের মাঝখানে ঠিক মনের কাছটায়।
দিনরাত কত রক্ত ঝরায়-,
শুধু কত রক্ত ঝরায়!
বারে বার মনে পড়ে যায়,
কখন কোথায় কবে, বিলোল বক্ষে কার
চন্দনের পত্রলেখা নিমেষের তরে তবু করেছি আবিষ্কার!
কখন কোথায় কার প্রদীপ্ত চোখের সেই নীলাভ তারায়,
হারিয়ে গিয়েছি কত মায়াবী সন্ধ্যায়।
কখন কোথায় কার বঙ্কিম গ্রীবায়
চুম্বনের ব্যাপ্ত শিহরণে নিশীথ মায়ায়
হারিয়েছি তবু সেই আমার আমিকে আপন ইচ্ছায়।
জানিনা কোথায় আছো কার আঙিনায়।
তথাপি খুঁজেছি কত নিশীথে সন্ধ্যায়
কখনো পদ্মাপারে, কভু মেঘনায়;
ধরণীর বুকের ভীতরে, কভু মেঘে, কভু দূরে,
কভু নীল সাগরের তীরে
আকাশের ভেসে যাওয়া মেঘে কভু নীল নিলীমায়-
গাঙচিল সারসের প্রমত্ত ডানায়—-
কখনো বা দোয়েলের কোকিলের গুপ্ত ঠিকানায়।
আক্ষেপ থেকে যায়, খুঁজে আমি পাইনি তোমায়।

জানিনাতো আজ তুমি আছোটা কোথায়!
হয়তো কোন সুদূর পল্লীবাংলায়,
নিদাঘ দুপুরে,গৃহস্থের বধু সেজে কলসী কাঁখে জল আনতে যাও।
হয়তো দুপুর শেষে, সানের ঘাটেতে বসে অতীতের স্মৃতি দিয়ে মেখে
পা ছাড়িয়ে বসে তুমি কাঁচা আম লবণে জরাও।
হয়তো উদাস দিনে আপন আঙিনা কোনে শালিকের ঝগড়া শুনে বাঁশের বেড়ার কোনে, আপনার মনে কভু আনমনা হও।
নয় কোনো কোন ঘুঘু ডাকা উদাসী দুপুরে
আপনার জিভের উপরে,
জামের রঙীন দাগ মুছে ফেলে দিতে তুমি আয়না তুলে নাও ।
জিভ দেখে, চকিতে কী ভেবে তুমি আয়না ফেলে দাও—-।

এখানে তখনি জেনো এ বুকের কোনে
আয়নার ভাঙা কাঁচ তীব্র ফুটে যায়।
এই দূরে,রূপনারাণের তীরে,
আমার অজান্তে বুকে তীব্র ব্যথা হয়।
গোধুলীর রাঙা মেঘ হৃদয়ের আনাচে কানাচে নীরবে নিভৃতে কতো রক্ত ঝরায়,
জানিনাতো তোমারও হৃদয়ে বুঝি আমারই মতোই কোনো একদিন সেথা রক্ত নদী বয়—-।
মনে হয় তুমি বুঝি ভোলোনি আমায়।
তাই আজও ব্যথাটা কমে না কিছুতেই;
ছেঁড়া তমসুক খানা, কবে যেন আরো ছিঁড়ে যায়,
ভগ্ন হৃদয় নিয়ে ভাঙা চোরা দিন গুণে একা একা নদী তীরে আজো বসে তব প্রতীক্ষায়
ছেঁড়া তমসুক খানি নদীজলে ভেসে চলে যায়।

Exit mobile version