।। অমরনাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।
ঝরা পাতার কান্না
–সুনির্মল বসু
বর্ষায় জল থৈ থৈ নদী দেখলে, দ্বীপের মধ্যে পলাশ-বনে অজস্র আগুনরঙা ফুল ফুটে উঠলে,
আম গাছে নতুন মুকুল এলে, সোমলতা, তোমাকে মনে পড়ে,
খুব ভোরে শিশির ভেজা ঘাসে তোমার সঙ্গে হেঁটে যাবার স্মৃতি মনে পড়ে,
নদীতীরে কৃষ্ণচূড়া গাছের ছায়ায় কত বিকেল কেটেছে আমাদের,
এখন আমি একলাই যাই,
নদী আকাশ সঙ্গীহীন নৌকা চেয়ে দেখি,
ভাগ্যিস তোমাকে পাইনি, তাই ভালোবাসা জেগে আছে, নিউল্যান্ডের দুর্গা পূজার প্যান্ডেল, জনতা রেস্টুরেন্ট,
সু তৃপ্তির মিষ্টির দোকান, নদীর ধার সে কথা জানে,
তোমাকে পেলে, প্রতিদিনকার ধূলিমলিনতায় এভাবে তোমাকে পেতাম না,
এখন যখন খুশি, তখন তোমাকে পাই,
স্বপ্নে কতদিন তোমার সঙ্গে হেঁটে যাই, নীল জ্যোৎস্নায় তোমার সঙ্গে নদীর তীরে এসে দাঁড়াই,
মধ্যরাতে তোমার সঙ্গে আকাশের তারা গুনি, গম্বুজওয়ালা প্রাসাদের চূড়ায় দাঁড়িয়ে পায়রা ওড়াই,
তোমাদের নীল কাচের বাড়ির বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তোমার গাওয়া রবি ঠাকুরের গান শুনি,
দুর্গাপুজোর মহাষ্টমীর সন্ধ্যায় তোমার সঙ্গে প্রতিমা দেখতে বের হই,
রাতে স্বপ্নে তুমি আমার কাছে জ্যোৎস্নায় ভিজে আসো, চারদিকে উদাস হাওয়া বয়ে যায়,
স্বপ্নে নীল সমুদ্র সৈকতে তুমি আর আমি জল ছুঁয়ে ছুঁয়ে হেঁটে যাই,
সোমলতা, তুমি এখন পরস্ত্রী, তোমাকে পাইনি বলে আজ আমার মনে কোনো গোপন কষ্ট নেই,
আমার ভালোবাসায় অবিকল তুমি আগের চেয়ে অনেক বেশি করে বেঁচে আছো,
শুধু বসন্তের দিনে কৃষ্ণচূড়া গাছ লালে লাল হলে, চোখে জল আসে,
হেমন্তে পাতা-ঝরার কালে আমার ভারী কান্না পায়,
আসলে, জীর্ণ পাতার মতো আমিও যে তোমার জীবন থেকে ঝরে গেছি।