Site icon আলাপী মন

গল্প- পাশেই আছো মা

।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।। 

 

পাশেই আছো মা
– রাণা চ্যাটার্জী

 

 

কইগো শুনছো জানলা দিয়ে সকালে আলো ফুটতে না ফুটতেই ধড়ফড় করে উঠে বসল তৃণা। অঘোরে ঘুমিয়ে থাকা রজতকে ঠেলেই চলেছে। “উফ কি হলো কি”!

জানো আজকে স্বপ্ন দেখলাম মা কে।এই নিয়ে প্রায় সাত বার গো।বলছি হ্যাঁ গো এটাও কি সম্ভব বলো!!
“আচ্ছা গো,আর একটু শুয়ে নেই,উঠে বলছি” বলেও আর ঘুম এলো না রজতের।”মনটা প্রসন্নতা য় ভরে উঠেছে তার ।মা আজ প্রায় দেড় বছর নেই,অসম্ভব যন্ত্রণা কাতর মুখ নিয়ে দুরারোগ্য ব্যাধিতে অনেক বছর কষ্ট সহ্য করে বেঁচেছিলেন। শয্যাশায়ী হলেও আপ্রাণ মনোবলে শরীরের কষ্ট উপেক্ষা করে সকলের দিকে ছিল সমান নজর।

নতুন বিয়ে হয়ে আসা এবাড়ির বউ তৃণা কে ভীষন স্নেহ করতেন মা।”যা তুই পড়তে বোস,আমি সব সামলে নিচ্ছি” এমন ভাবে সাপোর্ট কজন শাশুড়ি করে! অতীত থেকে চলে আসা একটা ভুল ভাবনা শাশুড়ি আর বৌমা বুঝি দুই প্রতিপক্ষ সেটা এ বাড়ীতে এলে কারোর বোঝার উপায় থাকতো না এরা দুজন মা মেয়ে না শাশুড়ি বৌমা! একটা নিখাদ বন্ধুত্ব যে কত সুন্দর ভাবে ডালপালা মেলতে পারে, পল্লবিত হয় তার চরম সুন্দর দৃষ্টান্ত ছিল তৃণা ও শাশুড়ি সবিতা।দুজনের মধ্যে ছিল দারুন একটা এডজাস্টমেন্ট যা অন্যদের ঈর্ষান্বিত করত। দুপুরে খাওয়া শেষ হলে কাজ গুছিয়ে চলতো দুজনের নিটোল গল্পের আসর।সময়ের সাথে সাথে সংসারে বহু বাধা-প্রতিবন্ধকতা এসেছে, বাইরের লোকের আক্রমণ ।”ও দিদি রান্নাঘরটা ছেড়ে বউটাকে কাজে লাগাও” “ওর যখন সময় হবে ঠিক দায়িত্ব বুঝে নেবে”এমন চাঁচাছোলা উত্তরে থেমে যেত প্রতিপক্ষ।

যেদিন সবিতা দেবীর মৃত্যু হল কে জানতো তৃণা ও রজতের হাতে দুপুরের শেষ খাবার টা খেয়ে শান্তির ঘুমের ঢলে পরবেন উনি । খেতে খেতে জড়িয়ে যাওয়া গলায় বারবার বলছিলেন, তার নিজের স্বর্গীয়া দিদির নাম করে,’ ওই দেখ ওই দেখ দিদি ডাকছে আমায়!”বিষয়টা আজ ভাবলে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ওঠে প্রিয় মানুষটাকে হারানোর যন্ত্রনা।

ব্যালকনিতে সবিতা দেবীর যে মালা পড়া ছবিটা রয়েছে, প্রত্যেকটা দিন ঘুমাবার আগে রজত হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। মায়ের সঙ্গে সব কথা শেয়ার না করলে তার যে ঘুম আসবে না !যেন মা তাকিয়ে বলে, যারে সকালে উঠতে হবে অফিস জার্নি, শুয়ে পর।তৃণা প্রায়শই স্বপ্ন দেখছে আর বলছে জানো আজও মা কে দেখলাম কি সুন্দর স্নান সেরে নতুন শাড়িটা পরে বেঞ্চে বসে।আমি পড়ছিলাম মাথায় হাত রেখে বলছে যা খেয়ে নে,।এর পর দুজনে প্রতিদিনের মতো সবজি বাজার বেরুলাম। অবাক কান্ড কি জানো, মা একদম সুস্থ,নিজেই হেঁটে বাজার যাচ্ছে। পাড়ার সবাই দেখে খুব অবাক যে মানুষটার শেষ কয়েক
বছর হুইল চেয়ারে কেটেছে একদম নিরোগ,সূর্যের আলোয় আলোকিত।

ঘুম থেকে উঠে মায়ের ছবির দিকে তাকিয়ে মন খুশিতে ভরে উঠলো রজতের।মনে মনে বললো আমি তো জানি মা, তুমি কেবল ছবি নও এ সংসারের রক্ষাকারী,সব সময় আমাদের পাশে আছো।যেখানেই থাকো ভালো থেকো মা,প্রণাম তোমায়।

Exit mobile version