Site icon আলাপী মন

গল্প- শিক্ষক দিবস

শিক্ষক দিবস
-অঞ্জনা গোড়িয়া

 

 

এই সবার মনে আছে তো, রবিবার শিক্ষক দিবস। শিক্ষকদের সম্মান জানানোর দিন। সেই সঙ্গে বিদায়ী শিক্ষকদের বিদায় সম্ভাষণ করার দিন।
আমাদের স্কুলে প্রতিবছরই এই দিনে ছোট করে একটা অনুষ্ঠান করা হয়। অনুষ্ঠানের পুরো দায়িত্ব থাকে নবম শ্রেণির ছেলে মেয়েদের।
এবছর আমাদের পালা। তাই খুব খুশি।
অনুষ্ঠানের পুরো খরচটাও আমাদের।
ক্লাসের মনিটর জোরে জোরে বলে দিল কাল প্রত্যেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা নিয়ে আসিস। বুঝতে পারছিস তো এবছর আমাদের পালা। ভালো করে অনুষ্ঠান করতে হবে। দেখিয়ে দিতে হবে আমরাই সেরা।

রাহল ক্লাসের সব থেকে ভালো ছেলে। কিন্তু বড্ড গরীব। আজ কেমন রাহুলের মুখটা শুকিয়ে গেল।
পরের দিন চাঁদা দেওয়ার কথা। সবাই নিয়ে এলো ১০০ টাকা চাঁদা। রাহুল শুধু শূন্য হাতে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে।
একজন বলে উঠলো, কি রে রাহুল, মাত্র ১০০ টাকা তাও দিতে পারলি না?
রাহলের বাবা সামান্য ডাব, নারকেল বিক্রি করে কোনো ক্রমে সংসার চালায়। যখন বিক্রি হয় তখন টাকা পায়। যখন হয় না, কিছুই পায় না।
রাহুল মৃদুস্বরে বললো, বাবা বলেছে পরের সপ্তাহে ঠিক দিয়ে দেবে। আজ একদম হাতে টাকা নেই।
কয়েকজন হেসে বললো, তোর জন্য কী শিক্ষক দিবস পিছিয়ে দেব? মাত্র ১০০ টাকা তাও নেই? আসলে তুই না দেওয়ার অছিলা করছিস। ছাড় তোকে দিতে হবে না। এই চল আমরা গিফট কিনতে যাই।
রাহুলকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়েই ওরা চলে গেল। চোখ দু’টো রক্ত জবার মতো লাল হয়ে গেল। ঠোঁটের পাতা কেঁপে উঠলো। রাহুল চুপচাপ পাথরের মতো দাঁড়িয়ে দেখল বন্ধুরা হইচই করে চলে যাচ্ছে উপহার কিনতে।
পরের দিন স্কুল ঘরটা সুন্দর করে সাজিয়েছে সবাই। আজই ৫ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস। বিদায়ী শিক্ষক বিষ্টু মাস্টারের বিদায়ী সম্ভাষণ।
ছোটো করে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন।
ছাত্রছাত্রীরা নিজ নিজ পারফর্ম করতে শুরু করলো মঞ্চে।
কিন্তু রাহুলের দেখা নেই।
বিষ্টু স্যার জিজ্ঞেস করলো, কী ব্যাপার রাহুল কোথায়? রাহুলকে উনি খুব স্নেহ করেন।
একজন মুচকি হেসে বললো, কী করে আসবে স্যার? চাঁদা দিতে পারে নি তাই লজ্জায় আসে নি।
স্যার অবাক হয়ে গেল ছেলেদের কথা শুনে।
এবার উপহার দেওয়ার পালা। স্যারের হাতে তুলে দিল দামী ডিনার সেট। একটা কলম আর ফুলের স্টিকার।
অনুষ্ঠান শেষ। ঠিক এমন সময় ছলছল চোখে রাহুল এলো হাতে একটা লাঠি নিয়ে।
মাথা নত করে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। স্যারের হাতে দিল সুন্দর একটা নকসা করা লাঠি আর একগুচ্ছ রক্তকরবী।
স্যার বুকে জড়িয়ে নিলেন রাহুলকে।
এটাই আমার সেরা উপহার। তোকেও লাঠি হতে হবে। এই সমাজের জন্য।
বৃদ্ধের সম্বল আর সমাজের জঞ্জাল সাফ করতে এই লাঠির খুব দরকার। রাহুল ফুঁপিয়ে উঠলো স্যারের বুকে।

Exit mobile version