উৎসর্গ
-রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
শিক্ষক দিবস- এমন একজন মহতীর জন্মদিন, যিনি নিজের জন্মদিন সকল শিক্ষকদের অবদান, মূল্যায়ন, সম্মানের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে গেছেন। তাঁর ইচ্ছানুসারে আমরা আজো শিক্ষক দিবস পালন করি, শ্রদ্ধায় ও সম্মানে তাঁর জন্মদিন স্মরণ করি- শ্রদ্ধেয় ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ।
শিক্ষক- আমাদের শিক্ষা শুরু জন্ম লগ্ন থেকে, মায়ের স্পর্শ মমতার শিক্ষা দেয়। বাবার হাত দেয় ভরসার শিক্ষা, বন্ধু শেখায় সহমর্মিতা, প্রতিবেশী শেখায় সহবত, সাথী শেখায় একসাথে পথ চলা- জীবন বোধের নানান শিক্ষার পাঠ এইভাবেই আমরা শিখে যাই। আর ওই কালো কালো হরফের শিক্ষা- পুঁথিগত শিক্ষা, অধ্যয়ন-অধ্যাবসায়, জীবিকা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় পাঠ যাঁরা দেন সবাই আমাদের শিক্ষক, প্রণম্য। এঁদের অবদান আমাদের সবার জীবনে অনস্বীকার্য। শ্রদ্ধা, অন্তহীন কৃতজ্ঞতা জানাই সকল শিক্ষাগুরুকে।
মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, আজ কেন শিক্ষক দিবসের কথা? মাসটা তো শেষ হয় নি- তাই একটু সুযোগ নিলাম মনের কিছু কথা বলার। মনটা বরাবর বেয়াদপ- সবসময় উল্টো পথে হাঁটতে চায়।
মন বললো- যাঁরা আমাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে মানুষ পদবাচ্য করে তোলে তাঁরা সবসময় নমস্য কিন্তু যারা আমাদের জীবন নানা পর্যায়ে নানাভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে- তারাও তো আমাদের শিক্ষক। অজান্তেই ফাঁদ পেতে রাখে বিপদে ফেলতে- আমরা ফাঁদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করি, তারাও তো শেখায় পরিবেশের প্রতিকূলতা জয় করতে। ভালোর মুখোশে অভিনয় করে যায়- যখন বুঝতে পারি তখন হয়তো দেরী হয়ে যায়.. কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি ও উত্তরণের প্রচেষ্টা সেই শিক্ষা তো আমারা সেই বিশেষ মানুষগুলোর থেকেই পাই, তবে তারা কেন আমাদের শিক্ষক নয়!
চাঁদ সওদাগরের শিবপুজো না হয় না হলো- মনসা পুজোয় দোষ কোথায়? ডান হাতে না, বাম হাতে পুজো করি। যারা জীবনের অন্ধকার দিক চেনালো তাদের শ্রদ্ধার নৈবেদ্য না হলেও অন্তত একবার স্মরণ তো করতেই পারি- পুনরাবৃত্তি এড়িয়ে যাবার জন্য। জীবন সায়াহ্নে স্মৃতির টুকরি থেকে এক টুকরো অনাদায়ী সুদের মূল্য উৎসর্গ করলাম অন্ধকারের শিক্ষকদের।
কথাগুলো হয়তো অর্থহীন মনে হতেই পারে, তবুও হাতে গোনা দিনে- মনের ভার হাল্কা করতে কিছু কথা সবাইকেই বলে যেতে হয়, আমিও বলার চেষ্টা করলাম।
আলাপী মন-এর সকল শুভানুধ্যায়ীদের অন্তহীন কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।