সেই চাঁদ পাগল ছেলেটা
-সুনির্মল বসু
তাঁর দু’চোখ চেয়ে থাকে সবুজ পৃথিবীর দিকে, সারারাত চাঁদ পাগল ছেলেটা আকাশের তারা দ্যাখে, নিজের মতো করে বেঁচে থাকার জন্য তাঁর মনের মধ্যে রয়েছে এক সরল পৃথিবী,
কল্পনার জগতে হাঁটতে হাঁটতে সে তখন ক্রিস্টোফার কলম্বাস, না ম্যাজেলান, কখনো তাঁর মনে হয়, কোনো জন্মে সে হয়তো মার্কোপোলো ছিল,
দূরের পৃথিবী দেখার সামর্থ্য তাঁর নেই, অথচ মনে-মনে অনির্দেশ্য যাত্রা পথে সে কত দূর চলে যায়, সবুজ সকাল, ঢেউ খেলানো নদী, ফুলের উপত্যকা দেখায় তাঁর যেমন কোনো ক্লান্তি নেই, তেমনি সারারাত জেগে আকাশের তারা গোনা,
চাঁদের স্নিগ্ধ আলোর বৃষ্টি দেখা তাঁর কাছে যেন এক নেশা,কী অসীম রহস্য যে রয়েছে পৃথিবীতে, সে ভেবে আকুল হয়,
ছেলেবেলা এসে মাকে হারিয়েছে, তারপর একা থাকতে থাকতে একা থাকতে থাকতে এই আকাশ, এই আলো, এই নদী, দূরের বন্দর যেন সবসময় তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে,
চাঁদ পাগল ছেলেটা সারারাত শান্ত আকাশের দিকে চেয়ে থাকে, পৃথিবীর কোনো মলিনতা কখনো তাঁকে ছোঁয় না, গভীর রাতে যখন সারা শহর, গাছপালা ঘুমিয়ে পড়ে, তখন সে নারকেল গাছের ফাঁক দিয়ে আকাশের চাঁদ দ্যাখে,
দেখতে দেখতে ভোর হয়, আকাশে পাখিরা ডানা মেলে, জেলেরা নদীতে মাছ ধরে, গাছে গাছে ফুল ফোটে, জগৎ-সংসার ঘুম ভেঙ্গে জেগে ওঠে,
চরাচর ফর্সা হয়, পুবের আকাশে সূর্য ওঠে, তখন সে ঘুমোতে যায়, চাঁদকে বলে, রাতে আবার তোমার সঙ্গে দেখা হবে, আমার জানালায় এসো কিন্তু,
সকাল হলেই সে ঘুম থেকে উঠে পদ্ম ঝিলের কাছে হাঁটতে যায়, সেখানে গঙ্গাফড়িং ওড়ে, প্রজাপতি ও ভ্রমর একসঙ্গে খেলা করে, জলে শাপলা শালুক ফুটে থাকে, দূরের ইউক্যালিপটাস গাছে দুরন্ত বাতাস বয়ে যায়,
সে চেয়ে দ্যাখে, সে চেয়ে থাকে,
কোনো কোনো দিন সে হাঁটতে-হাঁটতে নদীর কাছে চলে যায়, দূরের নৌকো, জাহাজের মাস্তুল তাঁকে
কল্পনার জগতে নতুন নতুন দেশে নিয়ে যায়,
তখন আর তাঁর নিজেকে একা বলে মনে হয় না,
আবার রাত জেগে তারা দেখতে দেখতে সে কল্পনায় দেখে ফেলে, মৃত মায়ের পবিত্র মুখ,
সে মনে মনে বলে, কেউ জানে না, কেউ বোঝেনা, এভাবে বাঁচার সুখ,
চাঁদ পাগল ছেলেটা এভাবে নিজের মতো এই পৃথিবীতে কেমন স্বতন্ত্রভাবে বেঁচে থাকে।