গল্প- অভিজ্ঞতা

অভিজ্ঞতা
-সুজিত চট্টোপাধ্যায়

কলেজ থেকে ফিরছি। বাস কন্ডাকটর টিকিট চাইতে পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেখি পকেট ফাঁকা। অথচ তা হবার কথা নয়। মানিব্যাগে মানি থাকুক না থাকুক, বাস ভাড়ার পয়সা রাখতেই হয়। ওটা পাড়ানির কড়ি।
সেই সময় বাস ভাড়া সম্ভবত পঁচিশ পয়সা বা তার আসপাশে কিছু একটা ছিল। এখন আর মনে নেই ।
এ পকেট ও পকেট হাতড়ে বিফল হয়ে কন্ডাকটরকে বললাম
“ভাই, কিছু মনে কোরো না। টিকিটের পয়সা দিতে পারবো না। আমার পকেটমারি হয়েছে। মানি শুদ্ধ মানিব্যাগ হাওয়া। স্যরি ভাই”
মাঝ বয়সী কন্ডাকটর মুচকি হেসে বললো
“কোনো ব্যাপার নয়। তুমি কলেজ ষ্ট্রীট নামবে তো? ভাড়া কালকে দিয়ে দিও।”
ভীষণ রকম অবাক হলাম। ও আমাকে চেনে নাকি? অবিশ্যি প্রায় আড়াই বছর একই রুটে সকল বিকেল যাতায়াত করছি। হয়তো মুখ চেনা। যাইহোক এমন অযাচিত প্রস্তাব সাগ্রহে ধন্যবাদ সহযোগে গ্রহণ করলাম, নইলে শোভাবাজার থেকে কলেজ ষ্ট্রীট হেঁটে আসা ছাড়া উপায় ছিল না।
তবে মজা লাগছিল এই কথা ভেবে, বাসে ধার বাকী কারবারের প্রথম খদ্দের সম্ভবত আমিই। কেননা বাসে টিকিট ফাঁকির গল্প অনেক শুনেছি কিন্তু ধার বাকী এক্কেবারে আনকোরা অভিজ্ঞতা।
অবিশ্যি অবাক হবার আরও খানিক বাকি ছিল।
গন্তব্যস্থলে নামতেই সেই কন্ডাকটর গলার স্বর খাটো করে বললো,
“তোমার পকেট মারা হচ্ছিল সেটা আমি দেখেছি। স্টুডেন্টদেরও ছাড়েনা হারামখোর গুলো।”
হতবাক হয়ে বললাম-
“সে কী! তাহলে তখনই বললেন না কেন?”
পানের ছোপ ধরা দাঁতওয়ালা মুখে অদ্ভুত এক হাসি ছড়িয়ে সে বললো
“আরে ভাই, এই পথে আমাকে সকল থেকে রাত পেটের ভাত যোগাড়ের জন্যে দৌড়ে বেড়াতে হয়। চোর গুন্ডাদের সঙ্গে পেরে উঠবো না। ঘরে পরিবার আছে, তাদের কথাও তো ভাবতে হবে।”
বাস চলে গেল তার লক্ষ্যে। বাড়ি এসে ভাবছিলাম, আর মাত্র কয়েক মাস তারপরই কলেজের পাঠ শেষ হয়ে যাবে।
কিন্তু জীবনের বাস্তব শিক্ষার বোধকরি কোনও শেষ নেই। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।

Loading

Leave A Comment