প্রেমলীলা কুঞ্জ
-রাখী চক্রবর্তী
ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ করে পরিত্যক্ত ঘরের দরজাটা খুললো। না, না বাতাসে বা ভুতে খোলেনি, দরজাটা খুলল গোয়েন্দা পি লাল।পঙ্কজ লাল প্রসাদ।
পাঁচ বছর হলো এই বাড়ির ত্রিসীমানায় কেউ ভুলেও আসেনি।
কেন আসেনি তার পেছনে রহস্য রোমাঞ্চকর ঘটনা আছে ,বা গল্পও বলতে পারো।
“প্রেমলীলা কুঞ্জ “
বাড়ির ফলকে জ্বলজ্বল করে লেখা আছে। বাড়িটার দেওয়ালে হলুদ সবুজ রঙের মধ্যে
বিস্তর ধুলো জমেছে। যা হলুদ ও সবুজ রঙকে ফ্যাকাসে করে দিয়েছে। যে কেউ এই ফ্যাকাসে রঙ দেখে বলে দিতে পারবে বাড়িটার আসল রঙ কি ছিল।
সরকারি দপ্তর থেকে গোয়েন্দা পি লালের সহকারী হিসাবে আমার নাম রাখা হয়েছে ।ক্যামেরা ম্যান রঘুনাথ আর দুজন পুলিশ অফিসার প্রবাল দত্ত ও অর্নব দাস। ও হো আসল কথা তো বলাই হলো না আমার নাম বিশ্বরুপ দে।
বেশ ভালোই চলছিল গোয়েন্দা ডিপার্টমেন্টে আমার কাজ। এর মধ্যে অর্ডার এলো, অগত্যা যেতেই হবে পুরীতে। পুরী আমার খুব প্রিয় তীর্থস্থান। সবসময় একটা ভালোলাগা কাজ করে আমার মধ্যে পুরী নামটা শুনলেই। মা বলে দিয়েছে কাজ শেষ হলে জগন্নাথ দেব দর্শন যেন করি।
সাক্ষী গোপাল স্টেশনে নামলাম তখন ভোর,
টাটা সুমো করে সরকারি হলি ডে রিসর্টে উঠলাম। মোট পাঁচ জনের টিম। যে যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। দুপুর বারোটার সময় আমরা কাজের জন্য রওনা দিলাম। আকাশটা মেঘে ছেয়ে গেছে। পেঁজা তুলোর মতো মেঘ টুকরো টুকরো হয়ে আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। কি অপরুপ দৃশ্য তা বলে বোঝানো যাবে না। পি লাল আমাকে বললেন, বিশ্ব রাতে কিন্তু ভুতুড়ে বাড়িতে থাকতে হতে পারে। আমি বললাম, ইয়েস স্যর।
ক্যামেরা হাতে নিয়ে রঘুনাথ বললো, আমাকে কিন্তু একা ছেড়ে দিতে হবে। কিছু জবরদস্ত ফটো তুলবো। রাত দু’টো নাগাদ হলেই হবে। পুলিশ অফিসার প্রবাল দত্ত বললেন, আমরা তো পিকনিক করতে এসেছি। খুব মজা করবো পি লাল-এখনই মেজাজ বিগড়ে গেল অফিসার। ছেলে ছোকরারা যত মজা করবে তত দ্রুত কাজ এগোবে। বুঝলেন না।
পুলিশ অফিসার অর্নব দাস- চুপ একদম চুপ কারা যেন আসছে এদিকে।
প্রবাল দত্ত- হ্যাঁ এখখুনি রহস্য উদ্ঘাটন করে সন্ধ্যের মধ্যে রিসর্টে ফিরে যাব।
পি লাল- শিসসস,থামের পেছনে লুকিয়ে পড়ুন সবাই। কুইক…
আমি থামের পেছনে লুকোতে যাব সেই সময় আমার হাত ধরে কে যেন টানছে, আমি পেছন ফিরে তাকাতেই একটা বিদঘুটে চেহারার লোক আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো, শহুরে বাবু এখান থেকে চলে যান।জায়গাটা ভালো না।
-কেন কি হয়েছে এখানে?
-বাবু নারীর আত্মা লাফায় এই ভিলাতে
-তাতে কি! আমরা ভয় পাই না এসবে।
-চলে যান। আজ অমাবস্যা, সন্ধ্যা হতে চললো।
-ঠিক আছে, যাব না। কিন্তু আপনি কে? আমাকে সাবধান করছেন কেন। ঐ দিকে থামের পেছনে আরও চারজন আছে। ওদের একটু সাবধান করে দিয়ে আসুন। কোথায় গেলেন? হ্যালো, এই তো এখানে ছিলেন।
পাগল সব।
আমি থামের পেছন থেকে বেরিয়ে পি লালের কাছে গেলাম। পি লাল তখন গোঙাচ্ছিল।
আমি কিছু বলার আগেই প্রবাল দত্ত বললেন, বিশ্ব আর নয় এখুনি রওনা দেবো।স্যরকে বাঁচাতে হলে এখানে থাকা ঠিক হবে না।
আমি বললাম “প্রেমলীলা কুঞ্জে”র কী হবে।স্যারের এই অবস্থা হল কি করে? এখনও সন্ধ্যা হল না।
প্রবাল দত্ত- আমি থামের আড়াল থেকে দেখলাম ঘোমটা দেওয়া এক মহিলা পি লালের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হওয়ার চেষ্টা করছে।স্যরের একটু আদটু মেয়েদের সঙ্গে ফস্টিনস্টি করার অভ্যাস আছে, সেটা আমি জানতাম। কিন্তু স্যর ঘোমটা দেওয়া মহিলার কোমর জাপটে ধরতেই মহিলা আঁচড় দিতে লাগলো গলায় হাতে। তখনই গোঙানি শব্দ শুরু করলেন পি লাল। তাই বলছি এখানে আর নয়। আমি অন্য একটা রিপোর্ট দিয়ে দেব।
আমি- আমাকেও একজন শাসিয়ে দিয়ে গেল।
অর্নব দাস- কে আবার শাসালো ?
আমি- একটা ভয়ঙ্কর চেহারার লোক।
প্রবাল দত্ত- কি বলল লোকটা?
আমি- লোকটা বললো শহুরে বাবু চলে যান। অমাবস্যা আজ। নারীর আত্মা লাফায়। চলে যান বাবু। থামের পেছনে চারজন আছে সেটা কিন্তু বলেনি।
আমাদের কথাবার্তার মধ্যে পি লালের জ্ঞান ফিরে এলো।
পি লাল চোখ খুলে বললেন, মেয়েটার শরীরে শুধু হাড় তাও আবার খুব ঠান্ডা।
আমি- আপনি মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরলেন কেন?
পি লাল- লোভ হলো আর কি করবো?
প্রবাল দত্ত- সবই চরিত্রের দোষ। আপনার এখানে কোন দোষ দেখি না।
পি লাল- বছরে একবার গ্রামে যাই। নিজের বিয়ে করা বৌকে নিয়ে একটু আদটু প্রেম করবো তার ব্যাবস্থা নেই ওখানে। অলটাইম নজরদারি।
আমি- কার নজরদারি স্যর?
পি লাল-শাশুড়ির আবার কার। জামাইয়ের পয়সায় খাচ্ছে আবার জামাইকেই বাঁশ দিচ্ছে।
অর্নব দাস- স্যর, সন্ধ্যা হতেই চললো। একটু বিশ্রাম নিন। তারপর ভেতরে যাব, এসেছি যখন নিজের চোখে ভুতুড়ে রহস্য “প্রেম লীলা কুঞ্জ”কে দেখে যাই।
প্রবাল দত্ত- না,এখনই ফিরে যাই, পি লাল স্যরের শরীর ভালো না, আমি রিপোর্ট তৈরি করে দেব।
আমি দাঁড়িয়ে সব শুনছি। আমার মনে হচ্ছে প্রবাল দত্ত সাহসী না, নেহাতই বাপের চাকরিটা পেয়েছে তাই, যোগ্যতাসম্পন্ন পুলিশ অফিসার কখনই ওনাকে বলা চলে না, শুধু বলছে রিপোর্ট তৈরি করে দেব। আরে তোর বাপের সম্পত্তি না কি। কিছু দেখলো না জানলো না রিপোর্ট তৈরি করে দেবো…আমি খুব সাহসী, সিদ্ধান্ত শুধু প্রবাল দত্ত নেবে নাকি!
পি লাল- বিশ্ব এতো কী চিন্তা করছো। আমি অসুস্থ তুমি কিছু বলছো না।
আমি চোখে মুখে হাত ভুলিয়ে বললাম, এবার ভেতরে চলুন স্যার। রঘুনাথ ক্যামেরা রেডি তো?
রঘুনাথ- জামার বোতামে সেট করে নিয়েছি।আর একটা ব্যাগে রেখেছি।
সন্ধ্যা ছটা বাজলো, একটু পরে ভেতরে যাই। রাত বারোটা একটা বাজলে অশরীরী আত্মাকে ধরতে পারবো, এখন তো আত্মাদের চেলারা ঘুরঘুর করবে।
অর্নব স্যার, আপনি এতো চুপচাপ কেন, কিছু বলুন। আপনিও কি প্রবাল স্যরের মতো ভীতু না কি?
প্রবাল- রঘুনাথ আমাকে চটালে কাজটা হারাবে মনে রেখো।
অর্নব দাস- সবাই চুপ, চা পান করবো এখন আমরা, সুরা তো নেই।
“কে বলল সুরা নেই” পেছন ফিরে দেখি সেই লোকটা যে আমাকে সাবধান করেছিল
আমি চিৎকার করে বললাম, এই লোকটাই আমাকে সাবধান করে দিয়েছিল। ইনি আবার সুরা পান করার কথা বলছে। আ্যই আপনি কে ? কী মতলব আছে আপনার বলুন? আমরা ভেতরে যাব।
রঘুনাথ- বিশ্ব কেউ নেই এখানে, খামকা ভুল বকিস না। কোনও লোক নেই এখানে।
আমি চারদিক তাকালাম সত্যি তো আমরা পাঁচজন ছাড়া আর কেউ নেই এখানে, চারদিক অন্ধকার আচ্ছন্ন হয়ে আসছে।প্রবাল দত্ত ফ্লাক্স থেকে চা ঢালছে তার শব্দ কানে ভাসছে, কী ভয়ঙ্কর পরিবেশ, আমি প্রেমলীলা কুঞ্জের বারান্দায় বসে আছি
চা বিস্কুট খেয়ে আমরা সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে যাব ঠিক সেই সময় ঘুঙুর পড়ে কে যেন আমাদের সাথে সাথেই ওপরে উঠছে,আমরা সবাই পেছন ফিরে তাকালাম কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না,
এরমধ্যে আমার পা কেউ শক্ত করে ধরে রেখেছে ওপরে উঠতে দিচ্ছে না, খুব কষ্ট করে আমি পা-টা একধাপ করে করে সিঁড়িতে রাখলাম, আমরা ওপরের একটা ঘরে ছিটকানি খোলা দেখে ঐ ঘরে প্রবেশ করলাম, ঘরটা খুলতেই গোটা দশ বাদুড় উড়ে চলে গেল।
আবছা মতো দেখলাম খাটে কেউ একজন বসে আছে।
প্রবাল দত্ত- ঘোমটা দেওয়া রমণী বসে আছে।
পি লাল- মজা করা বন্ধ হোক। ঘুঙুরের শব্দ বেশ কম হতে লাগলো। আমি টর্চ জ্বালিয়ে ঘরটা দেখতে লাগলাম, ঘরের এক দিকে ইজি চেয়ার আছে, হঠাৎই ইজি চেয়ার দুলতে শুরু করলো, তিনটে টর্চ জ্বালাতেই ইজি চেয়ার থেমে গেল, টর্চের জোরালো আলোতে ঘরটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এখন।
খাটের কাছে গেলাম বেল ফুলের গন্ধতে মো মো করছে। অর্নব স্যর ঘরের বাইরে পাহারা দিচ্ছেন। পি লাল আলমারি খুলতেই একটা ব্যাগ ঝপ করে পড়ে গেল। আমি ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে রাখলাম,
প্রবাল দত্ত ঘরের জানলা খোলার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে শীতল হাওয়া বয়ে গেল আমাদের সবার ওপর দিয়ে, রঘুনাথের ক্যমেরাতে কি ছবি উঠছে কে জানে, আমার চোখ গেল দেওয়ালে বাঁধানো ছবির দিকে।ছবিটা দেখেই আমি আঁৎকে উঠলাম, সেই লোকটা তো যে আমাকে সাবধান করে ছিল, গলায় মালাটা শুকিয়ে পাকিয়ে জালন হয়ে গেছে। হঠাৎ দেখলাম ঘরটাতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আমরা ছুট লাগালাম।তারপর ঐ ঘর থেকে বেরিয়ে পাশের ঘরে প্রবেশ করলাম, আমার পা খুব চুলকাচ্ছে, নিচে তাকিয়ে দেখি শ’য়ে শ’য়ে লাল পিঁপড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে, আমি পা চুলকাতে শুরু করলাম, হাঁটু পর্যন্ত পিঁপড়ে উঠে গেছে, আমি লাফাতে লাগলাম, আমার কাঁধ থেকে ব্যাগটা পড়ে গেল, আমি ব্যাগটা তুলেতে যাব তখন দেখি পিঁপড়ে আর নেই, যেন পিঁপড়ে ছিল না।
প্রবাল দত্ত- এই ব্যাগটা নেওয়ার দরকার নেই
আমি- এই ব্যাগেই আছে আসল রহস্য, আমি মরতে মরতে হলেও দেখবো ব্যাগে কি আছে।
পি লাল- ব্যাগটা আমি খুলবো, কেউ হাত দেবে না।
এর মধ্যে “প্রেমলীলা কুঞ্জ” ভীষণরকম দুলছে ভুমিকম্পের মতো। আমরা একে অপরকে শক্ত করে ধরে রেখেছি।
অর্নব দাস- এটা ভুতুড়ে বাড়ি, হানা বাড়ি, আমি আগেই বলেছি, এখানে স্মাগলিং হয় না বা মধুচক্রের ব্যবসা হয় না,অনুভব করুন ঘুঙুরের শব্দ, লাল পিঁপড়ে।ব্যাগ, মহিলা, ভুমিকম্প..
প্রবাল দত্ত- রাত নটা বাজে, তেমন কিছুই তো পেলাম না
রঘুনাথ- রাত বারোটার পর পাবেন, ধৈর্য্য ধরুন।
আমরা সবাই ঐ ঘরে প্রবেশ করলাম।
সুসজ্জিত ঘর। টেবিল চেয়ার দামী আসবাবপত্রে ভর্তি ঘরটা, হঠাৎ
আমার চোখ গেল জানলার দিকে
আমি চিৎকার করে বললাম, ঐ দেখুন
সবাই জানলার দিকে তাকিয়ে আছে।
রঘুনাথ জানলার রড ধরে দুলছে, যা অসম্ভব, রঘুনাথের অট্টহাসিতে ভরে গেছে ঐ ঘরটা। আমি দৌড়ে গিয়ে রঘুনাথকে ধরলাম,রঘুনাথ মাটিতে পড়ে গেল, ওর পরনে জামা কাপড় কিছু নেই, সব মেঝেতে পড়ে আছে।
পি লাল ব্যাগটা যতবার খূলতে যাচ্ছে পি লালের শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
আমি ব্যাগটা কেড়ে নিলাম পি লালের কাছ থেকে, এক নিঃশ্বাসে ব্যাগটা খোলার চেষ্টা করলাম, এবং সফলও হলাম।
অলঙ্কার সহ একটা চিঠি ব্যাগের মধ্যে রয়েছে। আমার হাত অবশ হয়ে আসছে শরীর ঝিমিয়ে পড়ছে। আমার প্যান্ট ছিঁড়ে যাচ্ছে আমি বুঝতে পারছি, আমার চোখ দুটো কেউ যেন খাবলাচ্ছে। আমি কোনো কিছু না ভেবে পকেট থেকে জগন্নাথ বাবার প্রসাদ হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলাম। আমার জামা প্যান্ট ছিঁড়ে গেল। আমি জগন্নাথ দেবের প্রসাদ মুখে দিয়ে বললাম, ভক্তি করে খেলাম বাবা তোমার প্রসাদ।
জগন্নাথ দেবের প্রসাদ মুখে দিয়ে আমি চিঠিটা পড়তে শুরু করলাম।
আমি সুচরিতা, গৃহবধূ, বেশ্যা নই, বাঈজী নই। আমার স্বামীকে পিটিয়ে মেরে ফেললো ওরা, আমার শরীর নিয়ে খেললো, তারপর আমার সারা শরীরে কেরোসিন তেল ঢেলে দিয়ে বললো, বেশ্যাদের বাঁচতে নেই, আমি দাউ দাউ করে জ্বলছি , আর লিখছি, এই চিঠি, এই ব্যাগ আমার আর আমার স্বামীর আত্মার শেষ ঠিকানা, যতদিন এই ব্যাগ থাকবে ঐ বদমাশ পুলিশের দল সুশীল দে, রবি রায়, প্রমোটর মলয় পাল মধুচক্রের আসর বসাতে পারবে না, “প্রেম লীলা কুঞ্জ’তে আমাদের আত্মা থাকবে, কেউ বসবাস করতে পারবে না, এখানে যে আসবে সে মরবে, কোনো ব্যবসা হবে না এখানে
প্রবাল দত্ত- দোষীদের শাস্তি হবে, সূচরিতা ন্যায় পাবে।
আমি ব্যাগটাতে আগুন ধরিয়ে দিলাম, দাউ দাউ করে জ্বলছে ব্যাগটা,”প্রেমলীলা কুঞ্জ” ভীষণ কাঁপছে, রঘুনাথের জ্ঞান ফিরছে।
অর্নব দাস-এই ঘটনার কথা শুনেছিলাম,
সত্যতা যাচাই করি নি, তবে কেউ ছাড়া পাবে না, সবাই শাস্তি পাবে, যদিও সুচরিতা ও তার স্বামীর ডেডবডি পাওয়া যায় নি, ওরাই হয়তো বডি সরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু চিঠিটা তো পুড়ে গেল প্রমাণ তো রইলো না।
পি লাল- ইস্,আমাদের মুখের কথা বিশ্বাস করবে না কেউ।
আমি রঘুনাথের কাছে বসে আছি। রাত তিনটে বাজে,ভোর হওয়ার অপেক্ষায় আছি।রঘুনাথকে জামা প্যান্ট কোমর থেকে জড়িয়ে দিলাম,আমি ছেঁড়া প্যান্ট পড়েই ছিলাম, রঘুনাথের ক্যামেরাটা বারান্দায় পড়ে ছিল, আমি ক্যামেরাটা রঘুনাথকে দিলাম,
কিছুক্ষণ পর রঘুনাথ চিৎকার করে বললো, সব ছবি, ভিডিও আছে এই ক্যামেরায়, তখন ভোরের আলোর রশ্মিছটা বারান্দায় এসে পড়েছে। পি লাল, প্রবাল দত্ত, অর্নব বাবু আমি পা ছড়িয়ে বসে আছি।
রঘুনাথ ভিডিও ছবি দেখাচ্ছে,
আমি সুচরিতা, গৃহবধূ, বেশ্যা নই পুরোটা উঠেছে ভিডিওতে, এমন কি সুচরিতা আগুনে পুড়ছে সেটাও।
আমরা দিনের আলোতে সব ঘরগুলো সার্চ করে দেখছি,যদি ওদের ডেডবডি মানে কঙ্কালও পাওয়া যায়।
দোতলার ঘরে খাটের ওপরে একটা পুড়ে যাওয়া শরীরের দলা দেখতে পেলাম, ঐ ঘরটা পুলিশ সীল করে দিয়েছিল, আবার খোঁজা শুরু করলাম, আলমারির নিচে একটা কঙ্কাল পেলাম, এটা সুচরিতার স্বামীর মনে হয়।
এতদিন কেউ ঢুকতে পারেনি প্রেমলীলা কুঞ্জতে,তাই ডেডবডিও উদ্ধার হয় নি, সুচরিতা ও তার স্বামীর ফটো অ্যালবাম নিয়ে নিলাম, ভিডিও তো আছেই।
প্রেম লীলা কুঞ্জ ছেড়ে আসতে মন চাইছিল না, সুচরিতা ও তার স্বামীর মুখটা ভেসে উঠছে বারবার, স্বচক্ষে দেখেছি যে সুচরিতার স্বামীকে।
আমরা রওনা দিলাম প্রেমলীলা কুঞ্জ থেকে তখন সকাল নটা। আকাশ বেশ পরিষ্কার,
গাড়িতে উঠে একবার শেষ বারের মতো তাকালাম “প্রেম লীলা কুঞ্জ” র দিকে, মনে হলো সুচরিতা ও তাঁর স্বামী ছাদে দাঁড়িয়ে হাত নাড়িয়ে আমাদের গুড বাই বলছে বা বিদায় জানাচ্ছে।
আমাদের টাটা সুমো চলতে শুরু করলো, প্রেমলীলা কুঞ্জকে পেছনে ফেলে আমরা এগোতে থাকলাম।