
গল্প- জীবনগান
জীবনগান
-সুমিতা দাশগুপ্ত
প্রতিদিনের মতো আজও পাখির কলকাকলিতে ভোর ভোরই ঘুমটা ভেঙে গেল বিমলবাবুর। মুখ হাত ধুয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই একরাশ টাটকা বাতাস জড়িয়ে ধরলো তাঁকে। বাতাসে পাতলা কুয়াশার আস্তরণ , সূর্য ওঠেনি এখনও। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে বাগানে নেমে এলেন তিনি। ডানদিকে তরকারির বাগান । প্রথমে সেইদিকেই পা বাড়ালেন । শিশিরভেজা সবুজ পাতার ঘেরাটোপে ফুলকপির কচি মুখ উঁকি দিচ্ছে , পালং চারা মাথা তুলেছে, ধনেপাতার সবুজ ঝালর বাতাসে কাঁপে ,লাউডগায় সাদা সাদা ফুল ।অন্যপাশে ফুলের বাগানে চন্দ্রমল্লিকা ,ডালিয়া , গাঁদা ফুলের সমারোহ।
মাঝখান থেকে লাল সুরকিঢালা পথ সামনের সাদা ফটকের কাছে গিয়ে থেমেছে । গেটের মাথায় লাল সাদা বোগেনভিলিয়ার ঝাড় অজস্র ফুল ফুটিয়ে রাখে। সারা বাগানটায় টহল দিচ্ছিলেন তিনি, ছুঁয়ে যাচ্ছিলেন শিশির ভেজা গাছের পাতা । অনির্বচনীয় এক প্রশান্তিতে ভরে যাচ্ছিলো মন। আজকাল রীতিমতো আফসোসই হয় ,কেন যে এতটা কাল এইসব ছেড়ে সংসারের আবিলতায় ডুবে রইলেন —!
“বাবু -চা” —মালতীর ডাকে সম্বিত ফিরল বিমলবাবুর , বারান্দায় উঠে এসে ,বেতের চেয়ারখানায় আরাম করে বসে , চায়ের কাপটা হাতে নিলেন ,সকাল বেলার প্রথম চা -টা তিনি এখানে বসেই খান।
এই কুসুমতলিতে বসবাস শুরু করার পর থেকে ধীরে ধীরে প্রকৃতির সঙ্গে কেমন যেন একটা একাত্মতা বোধ তৈরী হয়ে গেছে বিমলবাবুর। বাড়ির পিছনে বিস্তীর্ণ মাঠ পেরিয়ে একখানা তিরতিরে নদী, ওপারের সবুজ বন, আকাশের নীলিমা একটু একটু করে সেঁধিয়ে যাচ্ছে তাঁর মধ্যে।
এই বাড়িটা আসলে তাঁর পরলোকগতা স্ত্রী মাধবীর , উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া পৈত্রিক সম্পত্তি। মাধবীর খুব টান ছিলো এই বাড়ি এই জায়গার প্রতি। ছেলেবেলার জায়গা মানুষের সবসময়ই প্রিয় হয়। মাধবীর পীড়াপিড়িতে ,বিমলবাবু কয়েকবার এখানে এসেছেন বটে , কিন্তু আদ্যন্ত শহুরে বিমল বাবুর এখানে মন টিঁকতো না মোটেই। দুদিন যেতে না যেতেই হাঁপিয়ে উঠতেন তিনি।
বালিগঞ্জের জমজমাট জায়গায় তাঁদের পৈত্রিক বাড়ি। দাদা আর তিনি সারাজীবন ঐ বাড়িতে একত্রে কাটিয়েছেন । বৌদি আর মাধবীর সম্পর্কটাও মিষ্টি মধুর ছিলো। বাড়িতে বন্ধুবান্ধব , আত্মীয় স্বজনদের আসা যাওয়া তো ছিলই , তাছাড়াও নামী কলেজে অধ্যাপনার সূত্রে ছাত্র ছাত্রীদের আনাগোনা লেগেই থাকতো।
বিমলবাবু আর মাধবী নিঃসন্তান ছিলেন , দাদার দুই ছেলেকে সন্তানস্নেহেই লালন করতেন তাঁরা। তাদেরও যতো আবদার ছিলো তাঁদের কাছেই। মোটকথা দিব্যি আনন্দে দিন কেটে যেতো সকলের। ছেলেদুটিও যোগ্য হয়ে নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে গেল, সবাই তখন তাদের বিয়ে থা দিয়ে বাড়িতে নতুন বৌ আনার চিন্তায় মশগুল, ঠিক তখনই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো তাঁদের সংসারে নেমে এলো বিপর্যয়। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে অকস্মাৎ চলে গেলো দাদা আর মাধবী। একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন তাঁরা। সামলাতে একটু সময় লেগেছিলো , তারপর আবার মনে শক্তি সংগ্রহ করে উঠে দাঁড়ালেন। বিয়ে দিলেন ভাইপোদের। ভেবেছিলেন বাড়ির পরিবেশ আবার একটু একটু করে স্বাভাবিক হবে , কিন্তু যা ভাবা হয়েছিলো সেটা হলো না ।
দুই বৌমার মধ্যে সম্পর্কটা ঠিক দানা বাঁধলো না ,দুজনেই নিজস্ব গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ রাখলো নিজেদের। বাড়ির আবহাওয়া বদলে যাচ্ছিলো দিন দিন, অশান্তির আঁচ টের পাওয়া যাচ্ছিলো ।ভাইপোরা এতটাই মেরুদন্ডহীন আগে জানা ছিলো না। ইতিমধ্যে বিমলবাবু চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন ,মোটা পেনসন মেলে। সংসারের আবিলতায় দমবন্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে মাঝে মাঝে বেরিয়ে পড়তেন বেশ কিছুদিনের জন্য । সেবার বৌদিকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন , ফিরে এসে স্তম্ভিত হয়ে দেখলেন নিত্য দিনের ঝামেলা মেটাতে ,ভাইপোরা পার্টিশন দিয়ে বাড়ি ভাগ করে নিয়েছে , তাঁর আর বৌদির জন্য তাঁদের নিজস্ব ঘর দুখানা বাদ দিয়ে। খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা ভাগের সংসারে। আশ্চর্য !তাঁদের অনুমতির জন্য সামান্য ক’টা দিনও অপেক্ষা করা গেল না ।শুভার্থীরা মামলা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন , আইনতঃ বাড়ির অর্ধেক অংশ তাঁর । প্রবৃত্তি হয় নি। কেস করে হয়তো বাড়ির ভাগ পাওয়া যায় কিন্তু সম্পর্ক !সেটার কি হবে?অনুভব করলেন “সময়এসেছে নিকট এখন বাঁধন ছিঁড়িতে হবে”।
তীব্র অভিমান বুকে নিয়ে চলে এলেন মাধবীর এই কুসুমতলিতে। বৌদিকেও তাঁর সঙ্গে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন , তিনি ভিটের মায়া কাটিয়ে উঠতে পারলেন না। অঝোর ধারায় অশ্রুজলে বিদায় দিয়েছিলেন কেবল ,যাক তবু একজন কেউ ছিলো তাঁর জন্য চোখের জল ফেলার !
এখানে এসে মাধবীর জ্ঞাতিদাদাদের সাহায্যে ঘরদোর সাফ সুতরো করে বাসযোগ্য করে নিলেন, আউটহাউসে রেখে নিলেন মধ্যবয়সী এক দম্পতিকে । সংসারের ভার এখন তাদের হাতে। নিশ্চিন্ত অবসরে দিন কাটে এখন। মাধবীর আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে ভুলে যাওয়া সম্পর্কগুলি নবজীবন লাভ করেছে। মায়ার নতুন বন্ধনে আবার তাঁকে আপন করে নিয়েছেন ওঁরা।
দৈনন্দিন জীবনে এখন নতুন ছন্দ। সকালে জলখাবারের পর শহরে গিয়ে দোকান বাজার ,ব্যাঙ্কের কাজকর্ম সারেন , দুপুরে খাওয়ার পর একটু বিশ্রাম , সন্ধ্যেটা কাটে স্থানীয় ক্লাবে কিছু সজ্জন মানুষের সাহচর্যে।ফেরার সময় একলা পথে দুচোখ ভরে দেখেন জোনাকজ্বলা প্রান্তর, পরিযায়ী পাখির ডানার শব্দ চমক লাগায় বুকে ,আকাশজোড়া ছায়াপথ ধরা দেয় আপন মহিমায় । মনে ভাবেন ঐ ধাক্কাটার প্রয়োজন ছিল ,নইলে এই সমস্তই অধরা থেকে যেত তাঁর জীবনে।
কে যেন বলেছেন জীবন নাকি একটা বহতা নদী ,তার প্রতিটি বাঁকে নতুন গল্প। বিমল বাবুর জীবনে সেই কথা আবার নতুন করে প্রমাণিত হলো।
সেদিন সকালে মালতী এসে কেঁদে পড়লো। গতরাতে তার ষোড়শী কন্যা ফুলি শ্বশুরবাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে এখানে এসে উঠেছে, বিয়ের সময় সাইকেল দেবার প্রতিশ্রুতি রাখা যায় নি বলে এই শাস্তি। বাবু যদি অনুগ্রহ করে ক’টা দিন এখানে থাকার অনুমতি দেন –একটা খাওয়া পরার কাজ জোটাতে পারলেই …..
মাত্র একখানা সাইকেল ,একটি মেয়ের গোটা জীবনের দাম! একখানা সাইকেল তিনি কিনে দিতেই পারেন কিন্তু সেটাই কী সমস্যার সমাধান ! দারিদ্র্য আর অশিক্ষার অন্ধকারে ডুবে থাকা ঘুণধরা সমাজের চেহারা কী তাতে বদলানো যায়! অতএব রয়ে গেল মেয়েটি।
কয়েক দিন পর জীবন আবার নতুন বাঁকের মুখে এসে দাঁড়ালো।
ইদানীং ভাইপোরা ঘনঘন ফোনে কুশল সংবাদ নিচ্ছিলো , তারপর হঠাৎ একদিন চলে এলো।ব্যাপারখানা খোলসা হলো তখন। নামজাদা এক প্রোমোটারের সুনজর পড়েছে তাঁদের গোটা পাড়াসহ তাঁদের বাড়িটার উপরে।ভাইপোরাও কম আগ্রহী নয় , বিশাল অঙ্কের টাকার হাতছানি। যেহেতু বিমলবাবু অর্ধেক সম্পত্তির অংশীদার তাই তাঁর সইটা জরুরী । আগামী সপ্তাহে প্রোমোটারের লোক নিয়ে আসবে তারা যদিও কাকুমণির আপত্তি হবে না তারা জানে,তবু আগে থেকেই জানিয়ে গেল।
মাথায় রক্ত চড়ে গেল ,প্রচন্ড ক্ষোভে ফেটে পড়লেন তিনি —টাকার লোভে নিজের শিকড় নিজে হাতে তুলে ফেলতে এতটুকু দ্বিধা নেই, ঐ চওড়া ঘর বারান্দায় কতোশতো স্মৃতির মায়া সব টাকার কাছে বিকিয়ে যাবে !! এককথায় ভাগিয়ে দিলেন তাদের কিন্তু ব্যাপারটা যদি এতোই সহজ হতো ! কয়েক দিন বাদেই তারা আবার এলো , এবার সঙ্গে এলো প্রমোটারের তরফে অত্যন্ত অমায়িক , ভদ্র এক যুবক রাজিন্দর । সারাদিন টানাপোড়েন চললো , তিনি অনড় , অবশেষে বিদায়কালে রাজিন্দর অতি অমায়িক ভাবে , ভদ্রতার মোড়কে একখানা হুমকি দিয়ে গেল ,যেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না।
গুম হয়ে গেলেন বিমলবাবু ।মনটা অস্থির ।ক্লাবে গিয়ে দাবার চালে বারবার ভুল হয়ে যাচ্ছে, অবশেষে দাবার বোর্ডখানা বন্ধ করে দিয়ে পুরন্দর উকিল বললেন —‘নাও হে এবার বলে ফেলো তো সমস্যাখানা কী?
বিমলবাবু অবাক হয়ে চাইতেই বললেন ‘লোকে এমনি এমনি আমায় ধুরন্ধর উকিল নাম দেয় নি’
মন দিয়ে সমস্তটা শুনে নিয়ে বললেন ‘এই পরিস্থিতিতে তোমার বোধহয় রাজি হয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।’
অত্যন্ত আহত হয়ে বিমলবাবু বললেন ‘আপনিও তাই বলছেন!’
‘আচ্ছা বলো তো তোমার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী কে বা কারা ‘।
‘আমার অবর্তমানে ভাইপোরাই তো সব —‘
‘সেটাই তো সমস্যা হে —কেউ যদি তোমার ‘অবর্তমান’ টা তাড়াতাড়ি ঘনিয়ে আনতে চায় তাহলে!!’
‘মানে ‘?
‘আহা তোমার ভাইপোদের কথা বলছি না , তবে কিনা প্রমোটাররা তাদের সাম্রাজ্য বিস্তারের পথে কোনও কাঁটা বরদাস্ত করে না কিনা। উপড়ে ফেলতে কতক্ষণ , শোনো ছেলেবেলায় মাধবীর কাছে অনেকবারই ভাইফোঁটা নিইচি ,সেই সূত্রে তুমি আমার ভগ্নিপতিই হলে সে , চলো সবাই মিলে তোমায় বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি ।’ কাঁধে হাত রাখলেন তিনি।
মানসিক যন্ত্রণায় অবিরত ক্ষতবিক্ষত হচ্ছিলেন তিনি ,মন থেকে সায় পাচ্ছিলেন না কিছুতেই, শেষবয়সে এতোবড়ো পরাজয় !!
দিনদুয়েক কেটে গেল ,
ইতিমধ্যে রাজিন্দর মোলায়েম করে কুশল সংবাদ নিয়েছে , এটা যে পরোক্ষ চাপ সেটা বুঝতে বেশী বুদ্ধি লাগে না।
সেদিন রাতে খাওয়া দাওয়ার পর রোজকার মত পিছনের বারান্দায় পায়চারী করতে যাবেন , মালতী বাধা দিলো।
‘এখন ক’টা দিন রেতের বেলা বাইরে বসবেন না বাবু , আগে তো কেউ এদিকে আসতোই না আজকাল রাতবিরেতে ঐ পিছন মাঠে উটকো লোকের আনাগোনা বেড়েছে । মাঝরাতে বাগানে জোরালো টর্চের আলো এসে পড়ে , কুকুরগুলান রাতভর চেঁচায়।ফুলির বাবা আজ থেকে রাতে পাহারা দেবে।’
বিছানায় শুয়ে দুশ্চিন্তায় ঘুম আসছিলো না , পুরন্দর উকিলের কথা সত্যি হলে , তাঁর উপর আক্রমণ অনিবার্য ।তাঁকে বাঁচাতে অন্য মানুষের প্রাণসংশয় হবে না তো ?
আউটহাউস থেকে কথাবার্তার শব্দ ,ফুলির অস্ফুট কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছিলো । ভাগের পরিহাসে ফুলি আর তাঁর অবস্থান আজ একই অসহায়তায় দাঁড়িয়ে আছে।ভাগ্যের পায়ে আত্মসমর্পণ! পাশ ফিরে শুলেন , আচমকাই মনের মধ্যে আলোর ঝলকানি, আনন্দের উদ্ভাস ,পথ পেয়ে গেছেন তিনি। বিছানা ছেড়ে উঠে ফোন হাতে নিলেন ।রাত এখন সাড়ে এগারোটা ,তা হোক ,ভাইপোদের ফোনে ধরলেন, বলে দিলেন তিনি রাজি।
এরপর দ্রুত পটপরিবর্তন ঘটলো , প্রোমোটারকে সঙ্গে নিয়ে তড়িঘড়ি এসে পড়লো তারা। পূর্ব নির্ধারিত , দিনক্ষণে সইসাবুদ সেরে ফেললেন তিনি তবে এবারে আর শুধুমাত্র দানপত্রে নয়, পুরন্দর উকিলকে সাক্ষী রেখে, ভাইপোদের একেবারে স্তম্ভিত করে পাওনাগন্ডার কানাকড়িটুকু পর্যন্ত আদায় করে ছেড়েছেন তিনি।
বিমলবাবু এখন একখানা জুতসই জমির খোঁজে আছেন ,
এই কুসুমতলিতেই মেয়েদের জন্য একখানা স্কুল আর স্বনির্ভরতা শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করবেন তিনি। নাম হবে মাধবীছায়া।
রাতের খাওয়া সেরে আবার আগের মতো নিশ্চিন্ত মনে পিছন বারান্দায় রাখা আরামকেদারাখানায় গা এলিয়ে বসলেন বিমলবাবু। এই সময়টায় মনে মনে ভবিষ্যতের একখানা রূপরেখা তৈরী করেন তিনি , হঠাৎ চোখ চলে গেল আকাশে । ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের মধ্যে কয়েকটি তারা , এককোণে একফালি হলুদ চাঁদ ঝুলে আছে, ঠিক যেন ভ্যানগঘের ছবি । মনে পড়ে গেল Stary nights এর ক’টা লাইন— “Now I Understand What You Tried To Say To Me”


2 Comments
Anonymous
ভারি ভালো লাগলো লেখাটা। সত্যিই, মেনে নিতে নিতে পিঠ দেওয়ালে ঠেকে যায়, তখন বোধহয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয়। লেখিকা এই শিক্ষার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন
Indrani Dasgupta
ভারি ভালো লেখাটা