Site icon আলাপী মন

কবিতা-“মনুষ্যত্ব”

মনুষ্যত্ব”
-সুমিতা পয়ড়্যা

ওই ছেলেটি নিশ্চয়ই নালিশ করেছে ঈশ্বরের কাছে!
ঈশ্বর সবটা শুনেছেন আর বসে বসে ভাবছেন…
না না ভাবছেন না; দেখছেন; সত্যতা যাচাই করছেন- কারণ শিশুরা কখনো মিথ্যা কথা বলে না।
ঈশ্বর তাই নিশ্চুপ; আকাশের ওপারে।

মানুষের ভোগের বাসনা কত আড়ম্বরপূর্ণ,
মানুষের লোভ লালসা দিগন্ত ব্যাপৃত,
আরো চাই আরো চাই-এর ঘরে আবদ্ধ।
কে মরছে! কে কাকে মারছে! কে হারছে! কে জিতছে…
কি হচ্ছে- ওসব দৃষ্টিপাতের বাইরে!

মনুষ্যত্ব স্বার্থপরতার করাল গ্রাসে আটকে গেছে।
বিশ্ব বিবেক আত্মকেন্দ্রিকতার রুদ্ধদ্বারে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে
দিশেহারা মনুষ্যত্ব বিশ্বমানবতার কানে কানে ফিসফিস করছে।

ঈশ্বর দেখছেন; তবু চুপচাপ অলৌকিক শক্তির ঘরে
তিনি দেখছেন, মানুষের বাড়বাড়ন্ত আর কতদূর প্রসারিত হতে পারে!
কতদূর প্রভাবিত হয় ঘরে কিংবা বাইরে!
চাওয়া আর পাওয়ার নেশায় উন্মত্ত মানুষ।
সবাই যেন অন্ধত্বের খাতায় নাম লিখিয়েছে।

এ কেমন মানুষ! এ কেমন তার মানবতা জ্ঞান!
এ কেমন তরো মনুষ্যত্বের অধিকারী!
ঈশ্বর দেখছেন অদৃশ্যে অলক্ষ্যে বসে…
ভাবছেন আর ভয় পাচ্ছেন…
এ কোন ভুল সমীকরণের ফল!

শ্রেষ্ঠ জীবের ক্ষমতা হাতে নিয়ে মানুষের মনুষ্যত্ব আজ ধুলায় লুণ্ঠিত।
ঈশ্বর উপলব্ধি করেছেন, শিশুটি ঠিকই বলেছিল…
যে যন্ত্রণা সে সয়ে এসেছে তা কি তার প্রাপ্য ছিল!
হিংসা, অবজ্ঞা, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা- এই মনুষ্যত্বের ধারক বাহক!

বিস্ময় বিস্মিত ঈশ্বর এখনো চুপ তার নিত্য ধামে
কেউ দমে নেই; সবাই হয়েছে রাজা।
অনুধাবন করছেন আর অবাক বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে ভাবছেন-
এ কেমন সৃষ্টি তার!

মানুষ তো মানুষের জন্য
একে অপরের পাশে থাকার জন্য
ভরসার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য
উন্মুক্ত পৃথিবীতে যে কজন বেঁচে আছে
সকলেই আরো বেঁধে থাকার জন্য।

তবুও মানুষ তো মানুষই।
নিজের আত্মমর্যাদা হারিয়েছে,
নিজের মনুষ্যত্ব হারিয়েছে,
মনুষ্যত্বের, বিবেকের সংকটে মিথ্যা করে তুলেছে চিরন্তন সত্য কে-
“প্রত্যেকে আমরা পরের তরে”

হাজার কোটি বছর ধরে মানুষ মানুষ হয়ে জন্মেছে আর মৃত্যু হয়েছে।
অমরত্তের মহান অর্ঘ্য পেয়েছে কি কোনদিন!
সেইতো পঞ্চভূতে বিলীন হবে।
সেইতো প্রকৃতির সঙ্গে মিশবে।
মানুষ মরণশীল; বৃথা আত্মম্ভর আশায় আর্তনাদ
অনন্তকালের পবিত্র আলোয় মিশে যাওয়ায় মানুষের মনুষ্যত্বের পবিত্র আহ্বান।

Exit mobile version