নাটক- “তিন কন্যা”

তিন কন্যা”
-রাখী চক্রবর্তী

(চরিত্র:– অবন্তী চৌধুরি, শুভময় চৌধুরি, দোয়েল,
টিয়া, ময়না, গৌতম নাগ, পুলিশ অফিসার এস রায়,চার্চের বাগানের মালি মধু,ফাদার ও কিছু লোকজন। একটি বিশেষ চরিত্রে পরমা ডিসুজা)

প্রথম দৃশ্য
***********
সময় সকাল সাতটা
(আবহে পাখিদের কলতানে ভরে উঠবে।
টিয়া, ময়না, দোয়েলের কিচির মিচির শুনে ঘুম ভেঙে যাবে অবন্তীর)

অবন্তী- (বিছানায় বসে হাই তুলে) এতো ঝগড়া কিসের ওদের। সকাল হতে না হতেই কিচির মিচির শুরু করে দিয়েছে।

শুভময়- (অবন্তীর গাল টিপে ) মনের কথা বলছে ওরা। ঝগড়া কেন করবে!সবাইকে নিজের মতো কেন ভাবো সোনা?

অবন্তী- সকাল সকাল মাথা গরম করো না।
মেয়েরা কি করছে দেখো। ভোর পাঁচটায় ঘুম ভেঙে গেছে আমার। ওদের ঘরে গিয়ে দেখি, তিনটের একটাও ঘরে নেই। রবিবার বলে কি হাতির পাঁচ পা দেখেছে সব!

শুভময়- হাতির পাঁচ পা, না কি সাপের পাঁচ পা?

অবন্তী-ধুর, মুডটাই খারাপ হয়ে গেল। সাপের কথা আমার সামনে বলবে না, বলেছি তো অনেকবার। উঠি এখন। বাজার যাও ওঠো। কে কি খাবে তার লিস্ট জেনে নিও।

অবন্তী ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় পাখিদের খাঁচার সামনে আসবে।

অবন্তী- (পাখিদের খাঁচা ধরে) এতো ভালোবাসি তোদের, তবুও তোরা সকালে ঘুম ভাঙিয়ে দিস। কিসের শত্রুতা তোদের আমার সাথে?

টিয়া- মা জল দে। এই মা জল দে
ময়না- মা তোমাকে ছেড়ে কোনদিন যাব না

অবন্তী- আচ্ছা, জলের জন্য এতো হাঁকডাক। দাঁড়া দিচ্ছি।
ময়না- এত্তো ভালবাসি মা
টিয়া- আই লাভ ইউ…

অবন্তী- শোনো ওদের কথা, জল আনছি, কিচির মিচির ‌করিস না,
(অবন্তী জল নিয়ে ‌প্রবেশ করে পাখিদের জল দিয়ে বারান্দা থেকে প্রস্থান করে।)

দ্বিতীয় দৃশ্য
**********
সকাল ন’টা
(শুভময় স্নান সেরে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে মঞ্চে প্রবেশ করবে)

শুভময়- টিয়া, ময়লা, দোয়েল আয় তোরা। কোথায় রে সব। বাজারে যাব। লিস্টি দিবি না তো, আজ তাহলে চারাপোনার ঝোল ভাত খা সব। আমি চললাম।

(টিয়া, ময়না,দোয়েল ছুটে মঞ্চে প্রবেশ করবে)
টিয়া ,ময়লা, দোয়েল-(একসঙ্গে বলবে)
চিকেন খাব আজ। বাজারে যাও তাড়াতাড়ি।

শুভময়- ও এই ব্যাপার। চিকেন আনতেই হবে তাহলে।

টিয়া- হ্যাঁ, যাও। ডিম টোস্ট খাব বাবা
দোয়েল- আমি ঘুগনি খাবো বাবা।
শুভময়- ময়না, তুমি বলে ফেলো কি খাবে?
ময়না- যেটা খেতে দেবে তাই খাবো মামা।

(শুভময় ময়নার গাল টিপে বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে মঞ্চ থেকে প্রস্থান করবে। টিয়া, ময়না, দোয়েল খেলতে থাকবে। দৃশ্যান্তসূচক আবহসংগীত বাজবে)

তৃতীয় দৃশ্য
**********
বিকেল বেলার দৃশ্য- ময়না, টিয়া, দোয়েল ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখবে। অবন্তী, শুভময় ব্যালকনিতে বসে গল্প করবে।

শুভময়- বোনের ছবিতে একটা মালাও দিতে পারলাম না। সদ্য মারা গেল। ভাবতেই পারি না, আমার একমাত্র বোন আর নেই। ভাবছি বোনের শ্রাদ্ধ গঙ্গার ঘাটে করে নেব।

অবন্তী- ভাবাভাবির কিছু নেই। গঙ্গার ঘাটেই করতে হবে দিদিভাইয়ের কাজ। ময়নাকে কিছুতেই জানানো যাবে না যে ওর মা নেই।

শুভময়- হ্যাঁ, সে তো ঠিক। ময়না তো জানলোই না ওর মা আর নেই। টিয়া, দোয়েলকে পেয়ে আনন্দে আছে। রোজ একবার করে জিজ্ঞাসা করে কিন্তু মা কেমন আছে মামা…

অবন্তী- সে তো করবেই। কিন্তু কতদিন চেপে রাখবো কথাটা সেটাই ভাবি। টিয়া, দোয়েল ওদেরকে তো বলিনি। ওরাও জানে ওদের পিসি হসপিটালে ভর্তি আছে।

শুভময়- আর বলবেও না। ওরাও ছোটো কখন মুখ ফসকে বলে দেবে। ঠাকুরের অশেষ দয়া যে তোমার মতো জীবন সঙ্গী পেয়েছি। তা না হলে কী অবস্থা হতো ময়নার ভাবলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।

অবন্তী- ময়নাকে কোনো না কোনো দিন জানাতে হবে তো। তখন কি হবে আমি সেটাই ভাবি। রোজ রাতে ওর মা’র ছবি নিয়ে ঘুমাতে যায় ময়না-
খুব ভয় লাগে আমার।

শুভময়-তু মি সব সময় বলতে মেয়ে ঘরের লক্ষ্মী। তোমার মেয়েই চাই। তাই ভগবান তোমাকে যমজ মেয়ে সন্তান দিল। আবার ময়না’কেও দিলো।

অবন্তী- ময়না আমার ছোট মেয়ে। তিন কন্যার জননী আমি। ওদের ভালো রাখুক ভগবান। আমি তো ছেলে কোনোদিন চাইনি। কিন্তু ‌এখন ভয় লাগে, ওদের ‌মানুষ করতে পারব তো। একটা ছেলে যদি হতো বোনদের আগলে রাখতো, আমাদের জীবনের কোন ভরসা আছে, আজ আছি, কাল নেই, দিদিভাইয়ের মতো আমারও যদি এমন মৃত্যু হয়, তুমি কাউকে না কাউকে বিয়ে করবে তখন আমার তিন কন্যার কি হবে! জলে ভাসবে যে ওরা…

শুভময়- পাগল না কি তুমি! আমার ঘরে একটা আস্ত পাগল আছে দেখে যাও সবাই…

অবন্তী- হেলাফেলার কথা না এটা। ভাবো বসে বসে। আমি মেয়েদের কাছে যাচ্ছি।

(অবন্তী প্রস্থান করবে, শুভময় ফোন করে কথা বলবে। দৃশ্যান্তসূচক আবহসংগীত বাজবে)

চতুর্থ দৃশ্য
********
(সময় রাত দুটো- বাড়ির সবাই ঘুমাবে। ময়না ওর মা’র ছবি নিয়ে দোতলার সিঁড়িতে বসে থাকবে।)

ময়না-(মা’র ছবি কোলে রেখে) দু’দিন হয়ে গেল, এলে না তো মা। তোমার খুব দুঃখ তাই না মা। হসপিটালে তোমাকে বুঝি কেউ ভালোবাসে না!

পরমা- এই তো এসেছি।

ময়না- এই তো মা এসেছে। মা…মা

পরমা- তোকে নিয়ে যাব আমি। আমারও তোকে ছেড়ে থাকতে ভালো লাগে না।

ময়না- খুব ভালো হবে মা। তুমি কিছু খাবে?

পরমা- এই খেলাম সোনা। তোকে সবাই খুব ভালোবাসে, তাই না ময়না?

ময়না -হ্যাঁ মা, মামা মামাইয়া দিদিরা খুব ভালোবাসে আমাকে। কিন্তু তুমি নেই বলে আমার ভালো লাগে না। রাত্রি বেলা ছাড়া তুমি তো আসো না।

পরমা- কাউকে বলবি না কিন্তু আমি রাত্রি বেলায় আসি।

ময়না- না মা কাউকে বলি নি।

পরমা- এবার ঘরে যা। ঘুমিয়ে পড় সোনা।

ময়না- ঘুম আসে না মা।

পরমা- আয় আমার কোলে আয়।

(হাল্কা আলো জ্বলছে, পরমা ময়নাকে কোলে শুইয়ে গুনগুন করে গান গাইতে থাকে।)

পঞ্চম দৃশ্য
**********
(তিন দিন পরের ঘটনা দৃশ্যায়িত হবে)

দোয়েল- জানো মা, ময়না কেমন মনমরা হয়ে থাকে রাত্রি বেলায়। কিন্তু সকাল বিকেল কত হৈ হৈ করে আমাদের সাথে।

অবন্তী- সে তো হবেই। রাতেই যে ওর মাকে চাই। এটুকু মেয়ে ভাবলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।

দোয়েল- পিসিমনি কবে বাড়ি ফিরবে মা?

অবন্তী- ফিরবে খুব শিগগির। যাও ময়না কি করছে দেখো। বোনুকে একা রেখো না। বোনু যেন কোন কিছুতেই কষ্ট না পায় দেখো।

(দোয়েল প্রস্থান করবে, শুভময় প্রবেশ করবে)

শুভময়-গালে হাত দিয়ে কি ভাবছো?

অবন্তী- দিদিভাইয়ের শেষ দেখাটা দেখতে পেলাম না। খুব খারাপ লাগছে।

শুভময় –সে তো লাগবেই, তুমি যদি শ্মশানে যেতে তাহলে বাচ্চাদের কে দেখতো।

অবন্তী- দিদিভাইয়ের ঘরটা খুলে দিও।পরিষ্কার করবো।

শুভময়- বোনের ঘরে ঢোকার কোন দরকার নেই। ময়না শেষে বায়না ধরবে ঐ ঘরে ঢোকার।

অবন্তী- তা কেন? ময়না বিকেলে খেলতে যায়, তখন করবো। তুমি ও সব নিয়ে ভেবো না।

শুভময়- আমাদের ছোট্ট ভুলে ময়লা যেন কষ্ট না পায়। এখন ওসব পরিষ্কার টরিষ্কারের কোনো দরকার নেই ।

(ময়না প্রবেশ করবে)

ময়না- মামাইয়া আমি তোমার কাছে বসবো?

অবন্তী- আয় (ময়নাকে আদর করে) কিছু বলবি?

ময়না- (চুমু খেয়ে) তুমি খুব ভালো

অবন্তী- ও এই কথা। কি খাবি দুপুরে বললি না তো

(ময়না ছুটে পালাবে)

অবন্তী- দেখো ময়নাকে আজ কতো হাসিখুশি দেখাচ্ছে। খুব ভালো লাগলো ওকে দেখে। তিন দিন পর মেয়েটা হাসলো।

শুভময়- হ্যাঁ ওর যত্নের যেন কোনো ত্রুটি না হয়, সাবধানে রেখো, কিডন্যাপাররা কিন্তু সব জায়গায় হানা‌ দেয়, জানো আমার খুব ভয় হয়, ময়নাকে যদি কেউ তুলে নিয়ে যায়!

অবন্তী- টিয়া,দোয়েল ময়না সব সময় একসঙ্গে থাকে, এ সব নিয়ে ‌ভেবো না।

শুভময়- যদির কথা বলছি

অবন্তী- যদির কথা তুমি বললে ঠিক, আমি বললে পাগল, ঠিক বললাম তো?
শুভময়- হুম বুঝলাম, ম্যডাম, এবার বাজার যাই তাহলে।
অবন্তী- যাও
(শুভময় বাজারের ব্যাগ নিয়ে ‌প্রস্থান করবে)

ষষ্ঠ দৃশ্য
**********
(সময় রাত এগারোটা- শুভময় ও অবন্তী শোওয়ার ঘরে প্রবেশ করবে)

অবন্তী- তুমি একটু বসো। আমি বিছানাটা পরিষ্কার করে দিচ্ছি।

শুভময়- হ্যাঁ, ঠিক আছে।
( স্বগতোক্তি: ময়না আজ এতো খুশি কিসের জন্য! কালও তো মন মরা হয়ে বসেছিল। আজ সব পাল্টে গেল। তিনদিন হলো ওর মা ওর কাছে নেই। না, না আজ নিয়ে চার দিন হল। খটকা লাগছে ভীষণ। ময়নাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করবো। না, না ওটা করা ঠিক হবে না। আমি বরঞ্চ আজ রাতে ঘুমাবো না। আর তা না হলে ময়নাকে আজ আমার কাছে শুতে বলবো)

অবন্তী- (মশারি টাঙিয়ে ) কি গো, কি ভাবনা চিন্তা করছো। শুতে এসো। রাত হয়নি মনে হচ্ছে।

শুভময়- যাচ্ছি যাচ্ছি। আমি ময়নাকে নিয়ে আসছি। ময়না আজ আমাদের সাথে শোবে

অবন্তী- আমি কতবার বলেছি। এলো না। দেখ তুমি বলে, যদি আসে

(শুভময় প্রস্থান করবে)

(ময়না, টিয়া, দোয়েল বিছানায় শুয়ে থাকবে
শুভময় প্রবেশ করে ওদের ঘরে)

শুভময়- ময়না আমার কাছে শুবি সোনা। চল মামাইয়া ডাকছে তোকে।

ময়না- (চোখ ডলতে ডলতে) আমি এখানে শোব। তুমি যাও মামা। আমি তো ঘুমিয়ে পড়েছি।

দোয়েল- গুড নাইট বাবা। তুমি যাও ঘুমিয়ে পড়ো।
(শুভময় প্রস্থান করবে)

সপ্তম দৃশ্য
*********
(রাত এক’টা: ময়না শোওয়ার ঘরে দরজা খুলে দোতলার সিঁড়ির চাতালে এসে বসবে, চারদিকে অন্ধকার)

ময়না- মা আমি এসেছি(আস্তে আস্তে) তুমি কোথায়?

পরমা- এই তো আমি।

ময়না- তুমি সিঁড়ির ওখান দিয়ে আসো কেন মা? তুমি তো হসপিটালে আছো

পরমা- কে বলেছে আমি হসপিটালে আছি?

ময়না- মামাইয়া, মামা বলেছে।

পরমা- আর নয় বেশি দিন। তোকে নিয়ে অনেক দুর চলে যাব। তোকে ছেড়ে থাকতে যে ভালো লাগে না।

ময়না- তোমার কোলে শোবো মা।

পরমা- আয় তোকে ঘুম পাড়িয়ে দি।

(ময়না ঘুমিয়ে পড়বে ওর মায়ের কোলে।
শুভময় সিঁড়ির নিচে দাঁড়িয়ে সবটা দেখবে)

শুভময়- দরজা খুললি কিভাবে?

পরমা- (চমকে উঠে) দাদা তোমার পায়ে পড়ি আমাকে ছেড়ে দাও। আমি ময়নাকে নিয়ে চলে যাব। কোনো দিন তোমার এখানে আসবো না। কেউ জানতে পারবে না আমি বেঁচে আছি।

শুভময়- ঘরে চল। তোকে আবার তালা দিয়ে রাখবো। চল
(শুভময় পরমাকে টানতে টানতে ওপরে নিয়ে যাবে।)

শুভময়- ঘরে তো তালা দেওয়া। কি করে বের হলি? ও পেছনের দরজা দিয়ে। ঢোক ঘরের ভেতরে।

(পরমাকে ঘরে ধাক্কা দিয়ে ঢোকাবে শুভময়।
শুভময় পরমার গলা টিপবে)

পরমা- দাদা লাগছে। ছাড়ো।

শুভময়- ময়নাকেও শেষ করবো। পাঁচ বছরের জন্মদিনে ময়না থাকবে না পৃথিৱীত, কিছু দিন যেতে দে। ডিসুজাকে পিষে দিলাম কেউ টের পেলো না। তুই মৃত, সেটাও প্রমাণ হয়ে গেছে। তোর বডি ডিসুজার পাশেই কফন দেবো। সবাই তো জেনেছে তোকে দাহ করেছি। কিন্তু না, তুই আমাদের বাড়ির মান সম্মান নষ্ট করেছিস। তোর জন্য মা আত্মহত্যা করেছে। বাবা নিরুদ্দেশ, সব তোর জন্য। তুই সুখে থাকবি এটা আমি দেখতে পারবো না। তাই তোর বর ডিসুজাকে গাড়ি আ্যক্সিডেন্টে মরতে হলো। তোকেও তাই মরতে হয়েছিল। কিন্তু ভাগ্য তোর সহায় ছিল, বেঁচে গেলি। তাই তোকে বাক্সতে করে এনে এই ঘরে রেখে দিয়েছিলাম। আজ আবার তোর ডেড বডি বাক্স করে নিয়ে তোকে পুঁতে দেবো।

পরমা- গলা ছাড়ো দাদা। মা আত্মহত্যা করেছে তোমার জন্য। তুমি মেয়ে পাচারের লিডার ছিলে, মা সেটা জানতে পেরেছিল। বাবাকে তুমি খুন করে বাবার বডি লোপাট করে দিয়েছো। আমাকেও ছাড়নি। দুবাইয়ে আমাকে বেচতে গেছিলে। ডিসুজা আমাকে উদ্ধার করেছে। বৌদি যেদিন সব জানতে পারবে তোমাকে ঘেন্না করবে, তোমার মুখে থুতু দেবে বৌদি। ঠিক এমনি করে, আমি যেমন দিচ্ছি- থু থু

শুভময়-তাই! আমাকে থুতু দিচ্ছিস। মর এবার।

পরমা- দ ম বন্ধ হ য়ে আ স ছে ,গ লা ছা…

(পরমা লুটিয়ে পড়ে মেঝেতে। শুভময় পরমার মৃতদেহ বাক্সতে রেখে দেবে। দৃশ্যান্তসূচক আবহসংগীত বাজবে)

অষ্টম দৃশ্য
********
(সকাল ছ’টা- শুভময় বাক্স নিয়ে বের হবে, টিয়া দোলনায় বসে দোল খাবে)

টিয়া- বাবা কোথায় যাচ্ছ?

শুভময়- আসছি সোনা।

টিয়া- আমার জন্য চকলেট এনো কিন্তু

(শুভময় প্রস্থান করে, সকাল সাতটা- অবন্তী ঘুম থেকে উঠে ঠাকুর নমস্কার করবে। শুভময়কে বিছানায় দেখতে পায় না)

অবন্তী- শুভময় কোথায় গেল? বাজার তো আজ যাবে না। অফিসে বের হবে তো দশটায়। বাথরুমে বোধহয়। যাই চা করে আনি। রান্নার মাসি আর একটু পর চলে আসবে।

(অবন্তী সকালের চা নিয়ে বারান্দায় বসবে। ময়না বারান্দায় পুতুল নিয়ে বসে থাকবে।)

অবন্তী- ময়না, মামাকে ডাক তো চা খাবে।

ময়না- মামা নেই, বাক্স নিয়ে বেরিয়ে গেল।

অবন্তী- বাক্স! বাক্স কোথা থেকে এলো!

ময়না- আমি জানি বাক্সতে কি আছে।

পরমা- তুই জানিস কি আছে বাক্সতে, বল?

ময়না- বলবো না, তুমি দেখতে চাইলে দেখাতে পারি।

ময়না- ও মা এতো কথা শিখলি কখন! এখন দেখা, কি দেখাবি।

ময়না- মামাইয়া চলো।

অবন্তী- কোথায় যাব?

ময়না- লর্ড-এর কাছে। চলো না।ঐ তো সামনেই চার্চ।

অবন্তী- প্রভুর কাছে যাবি।

ময়না- হ্যাঁ, চলো মামাইয়া। তুমি খুব ভালো। প্রে দা লর্ড

অবন্তী- ও মা। কী সুইট সোনা মা। চল
(অবন্তী ও ময়না প্রস্থান করবে)

শেষ দৃশ্য
*********
(সকাল আটটা:- শুভময় চার্চে বাগানের মালির সঙ্গে কথা বলবে)

শুভময়- বাক্সটা দিলাম। যেখানে পোঁতার পুঁতে দিবি। দু লাখ আছে। আর দুই কাজের শেষে পাবি। ফাদার যেন টের না পায়।

মধু- একটাই তো?

শুভময়- দুটো

মধু- মানে।কথার খেলাপ করলেন কেন?

শুভময়- বাচ্চাটা সব জেনে গেল। তাই

মধু- আর একটু যোগ করে দেবেন।

শুভময়- তাই দেবো। তিন দিয়ে দেবো।
(ময়না ও অবন্তী চার্চের বাগানে প্রবেশ করবে)

ময়না- মামাইয়া ওই বাক্সে আমি আর মা আছি।

অবন্তী- কি বললি তুই তোর মা মানে! কোথায় গেলি ময়না, ময়না…

অবন্তী- আমি ফাদারকে ডেকে আনি।
(ফাদারকে নিয়ে অবন্তী বাগানে আসবে। শুভময় ফাদারকে দেখে পালাতে যাবে, চার্চের লোকজন মধু ও শুভময়কে ধরে ফেলবে)

শুভময়- অবন্তী তুমি এখানে?

অবন্তী- ময়না আমাকে নিয়ে এল এখানে।

শুভময়- ময়না!
অবন্তী- হ্যাঁ, ময়না। ফাদার বাক্সটা খুলতে বলুন।
(ফাদারের ইশারায় চার্চের লোকজন বাক্স খুলবে)

অবন্তী-(চিৎকার করে) এই তো ময়না, এই তো দিদিভাই। কি করে সম্ভব হলো, দিদিভাইয়ের মৃতদেহ তো দাহ করা হয়েছিল, ময়না তো আমার সঙ্গে এল, তবে কি!

(পুলিশ ভ্যানের হর্ন বাজবে। পুলিশ অফিসার চার্চের বাগানে প্রবেশ করবে)

পুলিশ অফিসার এস রায়- আমাদের টিম অনেক দিন ধরেই মেয়ে পাচারের লিডারকে খুঁজছে, তবে কাল মধ্য রাতে সিআইডি গৌতম নাগ পুরো‌ ব্যাপারটা সামনে আনেন, চার্চের বাগানের মালি মধু অনেকটাই সহয়তা করেছেন,গতকাল ‌রাত‌ তিনটের সময় শুভময় ‌ওরফে লাল্টু মধুকে ফোন করে। ফোন কল ট্যাপ করা হয়েছিল, তিন মাস ধরে‌ চার্চের ওপর নজর ছিল গৌতম নাগের।
মধুকে সন্দেহ হয় ওনার, ঘনঘন আসেন‌ শুভময় মধুর সঙ্গে দেখা করতে। শুভময় ও মধুকে এ্যারেস্ট করে থানায় নিয়ে চলুন।

অবন্তী- আমার ছোট মেয়ে ‌নেই, ভগবান তুমি এতো নিষ্ঠুর!

ফাদার- আপনি বসুন মা,আমি আপনাকে বাড়ি দিয়ে আসবো।

(পুলিশের ভ্যানে শুভময় উঠবে। অবন্তী থুতু ফেলবে শুভময়ের দিকে তাকিয়ে। অবন্তী সব শুনবে কিভাবে পরমা, ডিসুজা ও ময়নাকে খুন করেছে শুভময়)

অবন্তী- ফাদার আমি বাড়ি যাব আমার ‌মেয়েরা একা আছে বাড়িতে।

ফাদার- কয়টি কন্যা মা তোমার।
অবন্তী- তিন কন্যা ফাদার। তিন কন্যার জননী আমি।

ফাদার- তোমার তিন কন্যার জন্য অনেক আশীর্বাদ রইলো, ওরা অনেক বড় হবে, তোমার মুখ উজ্বল করবে।

অবন্তী- (স্বগতোক্তি- আমি টিয়া, ময়না, দোয়েলের মা, ওদের কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না আমার কাছ থেকে। ময়না আমার অন্তরের আত্মা হয়ে আমার কাছে থাকবে।
দৃশ্যান্তসূচক আবহসংগীত বাজবে।
অবন্তী বাড়ি ফিরবে)

টিয়া, দোয়েল ছুটে আসবে
টিয়া দোয়েল-(মা’কে জড়িয়ে) মা তুমি কোথায় ছিলে, আমাদের ছেড়ে যাবে না তো মা?
(ময়না বাড়ির মেইন দরজায় দাড়িয়ে থাকবে)
অবন্তী-(দু’হাত বাড়িয়ে) আমার তিন কন্যার জন্য আমাকে বাঁচতে হবে, শত শত জনম ধরে বাঁচব, আমার প্রাণে তোদের বাস যে।
(খাঁচা থেকে ‌ময়না, টিয়া, দোয়েল,কিচির মিচির শুরু কবে দেবে)

ময়না- মা এসেছে খুব মজা
অবন্তী- এই তো ময়না, ময়না আবার মা বলে ডাক।
ময়না- মা, মা, মা..
(অবন্তী মেয়েদের নিয়ে পাখিদের খাঁচার সামনে ‌যাবে)
অবন্তী-(সবাইকে জড়িয়ে ধরে) আমি আছি তোদের সবার জন্য আমি আছি।
(দৃশ্যান্তসূচক আবহসংগীত বাজবে
মঞ্চের পর্দা ধীরে ধীরে পড়বে।)

Loading

Leave A Comment