Site icon আলাপী মন

গল্প- অসম্পূর্ণ

অসম্পূর্ণ

-অমল দাস

পায়ে হাঁটা মোড় ঘুরতেই তিয়াসা আর সাত্ত্বিকের মুখোমুখি দেখা হয়েই গেলো। অপ্রত্যাশিত সপ্তমীর সকাল। পাট ভাঙা শাড়ি। চারিদিকের উৎসবের আবহ। খোলা চুল ছুঁয়ে সুগন্ধি বাতাস। বারুদ বারুদ ধোঁয়া। ছোটদের ক্যাপ ফোটানর উল্লাস।

ওদের চোখে চোখ। তখন তারস্বরে ভেসে আসা বাপ্পিদার গানটাই যেন সাত্বিকের অন্তরে গেয়ে উঠলো   … তুমি তো জানো না , খবরও রাখো না.. শিল্পী করেছো আমাকে…”

বছর আটেক আগের ঘটনা। তিয়াসা সপ্তমী সকালে ফোন করেছিল সাত্বিককে- কি গো আসবে আজ? এসোনা!

সাত্বিক কোন উত্তর দেয় তার আগেই তিয়াসার মা ফোনে ওপ্রান্ত থেকে বলে ওঠেন -বাবা এসো, চলে এসো আমি রান্না করছি, দুপুরে খাওয়া দাওয়া হবে, সন্ধ্যায় সকলে মিলে ঠাকুর দেখব। তাড়াতাড়ি চলে এসো।

সাত্ত্বিক আর কিছু বলতে পারল না। মনে মনে রাগ হল তিয়াসার উপর। সব পণ্ড হয়ে গেল। কোথায় দুজনে হাতে হাত রেখে নিজেদেরমতো করে ঘুরবে, তা না! ফ্যামিলির লেজ জুড়তে হবে। যে সেই লেজ নয় মস্ত বড় লেজ।

নাহ্‌ সব আশায় জল। মা এর আব্দার যেতেই হবে।

হ্যাঁ মা বলেই ডাকতে শুরু করেছিল সাত্বিক। তিয়াসা নিজের -এছাড়া অন্য কোন ভাবনা ছিলনা মনে। তেমনই একপ্রকার পাকাপোক্ত হয়ে এসেছিল তিয়াসা সাত্ত্বিকের সম্পর্ক। শুধু সিঁদুর ছোঁয়া বাকি।

আজও বকেয়া রয়ে গেলো…

ঠাকুর দেখে রাত তখন বারোটা। বাড়ি ফিরতে হবে। সাত্বিক তাই স্টেশনের পথ নিতে গেলে, তিয়াসা তার মাকে কিছু একটা ইশারা করে। মা এগিয়ে এসে বললেন- তোমার কি এতো রাতে যাওয়া খুব প্রয়োজন?

-হ্যাঁ মা যেতে হবে। চিন্তা করবেন না -রাস্তায় লোক থাকবে আলো থাকবে..

-না না ও কথা বললে হবে না। এতো রাতে আমি ছাড়বো না…

তিয়াসা বললো- মা যখন বলছে থেকে যেতে -তখন মানা করছো কেন? তুমি আজ থেকে যাও…

তিয়াসা সাত্বিকের বাঁ হাতের কড়ে আঙুলটা ধরলো। সাত্বিকের শরীরে কেমন একটা ঢেউ বয়ে গেল। কিন্তু অবিচল রইল। কখনো কখনো অবিচল থাকতে হয়।

তিয়াসার দাদা নীরবতা ভেঙে অনেকটা দায়সারা ভাবে বললো- হ্যাঁ যেতে হবে না! চলো বরং আর দুটো পুজো দেখি! তারপর বাড়ির দিকে না হয় ফিরবো।

-না-না, আর না। আমি এবার ফিরে যাই। এর পর আর ট্রেন নেই। রাতটা না হলে স্টেশনেই কেটে যাবে।

মা একটু ধমকের সুরে বললেন –কেন আমরা কি নেই ? রাত এখানে কাটাতে হবে! সবাই মিলে বলছি তাতেও হচ্ছে না? কি সমস্যা তোমার?

-না তেমন কিছু নয়।তবে সমস্যা নেই আবার আছেও। আপনাদের সমস্যা হলেও সেটা আমার। যতই আমরা সম্পর্কে থাকি। বিয়ের আগে আপনার বাড়ি রাত কাটানোটা খারাপ ভাবেই নেবে সবাই। আমায় তো হাতে নাগালে পাবেনা কেউ, আপনাদের নিয়েই কথা হতে পারে। আর ওকে কেউ কিছু বললে আপনাদের যেমন ভালো লাগবে না আমারও তাই। তার চেয়ে আমি …

শেষ না করা কথায় সাত্বিকের দৃষ্টিটা ট্রেন আসার দিকে চলে গেলো।

সাত্বিকের নিশ্চয়ই ঠিক বলেছে। সবাইকে ছুঁয়ে গিয়েছিল কথার সারমর্ম। কেউ আর মানা করলো না। ট্রেন আসা পর্যন্ত সবাই প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করলো।

সেবারই শেষ পুজো কেটে ছিল একসাথে। আজ সপ্তমী। আবার আজ দেখা। শুধু মধ্যখানের বিভেদ মাঝে বিপ্রতীপ হাওয়া। পর-গ্রহের সূর্যের লাল -রাস্তা এঁকেছে তিয়াসার সিঁথিতে। আর চোখের পাতায় অবিশ্বাসের অসম্পূর্ণ কথা…

Exit mobile version