কবিতা

কবিতা- তুই আমি একই আছি বল্

তুই আমি একই আছি বল্
-অসীম দাস

 

 

তোর সঙ্গে বহুকাল দেখা নেই, সফিকুল ।
সেই আঠারো বছরে পাশ করার পরে
কেটে গেছে চল্লিশটা বছর ।

স্কুলের সরস্বতী পুজোয় তুই আমি পাশাপাশি
একেবারে চোখ বন্ধ করে দিতাম অঞ্জলি ।
ভোগের খিচুড়ি আর লাবড়া নিয়ে
সেকি কাড়াকাড়ি !
নিশ্চয়ই মনে আছে তোর ,
শুভ ইদুজ্জোহার সকাল থেকেই
মাসিমার হাতের ভূরিভোজ ,
ফিরনি বিরিয়ানি আর সিমাই এর কতো কতো পদ ।

পদাবলি কীর্তনে তুই
কাওয়ালি আসরে আমি ।
তোর চোখে জল, আনন্দে আমার করতালি !
আমার প্রথম কবরে দেওয়া মাটি
তোর প্রথম শ্মশানে যাওয়া ঘাট ।
মহরমে আমার প্রথম ‘বিষাদ সিন্ধু’ পাঠ
শুভ বিজয়ার রাতে তোর প্রথম প্রণাম ।
হাডুডুর মাঠে প্রতিপক্ষে দিলে ,
আমার হাতের বজ্র মুঠি
কিরকম হালকা আলগা হয়ে যেতো
যেমনটি তোর ।
আহা , তুই আমি মিলেমিশে একসাথে দোপাটির পরাগমিলন !

যে চারা পুঁতেছি দুইজনে
ফুটেছে সফল ফুল ,
ঝরে গেছে তারা
আবারও এসেছে কুঁড়ি
বৎসরে বৎসরে
শুধু সুস্নিগ্ধ ছায়া দেবে ব’লে ।

হঠাৎই সকালে নেমে এলো অন্ধকার
নির্মিত গর্ত ফুঁড়ে সব্ জে নীল শেয়ালের চোখ ।
রাজপথে নব রামনবমীর শ’য়ে শ’য়ে
উদ্ধত খাঁড়া হাঁটে দেখে
আয় সফিকুল ,
আজ করি সেদিনের পারিজাত -স্মৃতি রোমন্থন ।

জৈষ্ঠের ফুটিফাটা শুকনো পুকুরে
অঘ্রানে নবান্নে ধান্যের সোনা-তোলা- পুরে
আদিগন্ত শবনম ভোরে
সুখে দুঃখে শোকের আঘ্রাণে
জ্ঞানে ও অজ্ঞানের ধ্যানে
সফিকুল, ধরে আছি এই বিশ্বাসে
তুই আমি একই আছি বল্ !

তবুও , ক্রমে ক্রমে লাখো লাখো তরবারি
পড়শীর বেড়া ভেঙে
গ্রামে গঞ্জে সদর টাউনে
নগরের রাজপথে
মেকি ফাঁদ ইফতারে
ভেকধারী নিরপেক্ষ ভণ্ড মুখোশে
ভোট কেনা তোষণের প্রতিক্রিয়া ক্রোধে
বিশ্বাসী প্রশ্বাসের প্রতিটি আনাচে কানাচে
ইতিহাস পাঠহীন ভেড়াপাল মিছিলের
জ্বলন্ত চোখে
প্রতিশোধ প্রতিরোধে ধিকিধিকি ঘৃণার আগুনে
অবশেষে ম্যানমেড দাঙ্গার
মহামারী দাবানল ধিক্ !

সফিকুল, কু-ডাক পেয়েছি ভোরে
তোকেই যে স্বপ্নে দেখলাম আধা জাগরণে
তাড়াতাড়ি বল্ দেখি কেমন আছিস ওরে !
অন্ততঃ একবার কানে কানে বলে যা
— অনির্বাণ , তুই আমি একই আছি বল্ !

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page