আজব দেশ
-সুমিত মোদক
তোমাকে এক গল্প শোনাই;
রূপকথার এক গল্প..
গল্প তো নয়, গল্প অতি;
শিশু মনের কল্প …
আজ আজব দেশের এক গল্প শোনাবো;
যেখানে রাজা আছে, রাজ্য আছে;
আছে রাজ্যপাঠ …
কিন্তু, প্রজারা কেউ জীবিত নয়;
আবার মৃতও নয়;
যেন মানুষগুলো এক একটা জীবন্ত মমি;
ঠিক মিশরের পিরামিটের ভিতরে
সংরক্ষিত;
একই রাজা হাজার সাজের হাজার রূপ নেয়;
প্রতিশ্রুতি দেয় একটা ছন্দ আনার,
রাগিনী বিস্তারের …
কিন্তু, সেটা হয়ে ওঠে না আর;
মমি-মানুষগুলো কেবল দিন গোনে .…
দিন যায়, বছর যায়,
যায় যুগের পর যুগ …
শুকনো গাছের ডালে বসে ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী
গল্প করে;
রাজ কন্যার গল্প;
যে কিনা বন্দি সেই আজব দেশে;
যেখানে গাছ আছে, পাতা নেই;
মানুষ আছে, কিন্তু হৃদয় নেই;
নেই কোনও রাজপুত্তুরের খোঁজ …
যে পক্ষীরাজের ঘোড়ায় চড়ে এসে উদ্ধার করবে;
প্রাণ ফিরিয়ে দেবে মমি-মানুষগুলোকে;
সাত-সমুদ্র, তের-নদী পেরিয়ে এসেছে
সময়;
অথচ দেখা নেই সেই রাজপুত্তুরের;
সে তো বহু বছর আগে শিকারে বেরিয়ে ছিল
গভীর জঙ্গলে;
তার পর কি ফেরেনি রাজ প্রাসাদ!
সে খবর জানেনা ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী;
মমি-মানুষগুলোর সঙ্গে থাকতে থাকতে রাজা কবে যে
মমি-মানুষগুলোর মতো হয়ে গেছে
খেয়াল করেনি;
রাজ সভায় কেবল ধুলোর আস্তরণ;
রাজকন্যার হাতে এখন কালপুরুষের তরবারি;
যে তরবারি রাতের অন্ধকারেও ঝলমল করে ওঠে;
সে একদিন খুঁজে নিলো অন্ধকার কুঠরিতে বন্দি প্রাণ-ভ্রমরা;
তাকে মুক্ত করে উড়িয়ে দিল বিশাল এক আকাশে;
সঙ্গে সঙ্গে রাজা দাউদাউ করে পুড়ে ছাই হয়ে গেলো;
ছাই হয়ে গেলো রাজ সিংহাসন;
মমি-মানুষগুলোর সারা শরীর থেকে খসে খসে পড়ল ওষুধ মাখানো সাদা সাদা কাপড়গুলো;
জেগে উঠলো হৃৎপিণ্ড, হৃদয় …
এমন সময় রাজপুত্তুরও এসে হাজির
পক্ষীরাজের ঘোড়ায় চড়ে;
একে একে এসে হাজির হলো প্রজাপতি,
চেনা-অচেনা রঙ-বেরঙের পাখি,
দখিনা বাতাস;
চারিদিকে কেবল আনন্দ আর আনন্দ;
আনন্দে ভেসে গেল সেই আজব দেশ;
কেবল আনমনা হয়ে থাকলো রাজকন্যা;
কেনও সে আনমনা কেউ বুঝতে পারলো না;
নাকি বুঝতে চাইলো না!
কে জানে!
তোমাকে এক গল্প শোনাই;
রূপকথার এক গল্প …
গল্প তো নয় , গল্প অতি ;
শিশু মনের কল্প …